ঋণখেলাপির দ্বারপ্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র, শঙ্কায় বিশ্ব অর্থনীতি

প্রকাশকালঃ ২৪ মে ২০২৩ ০১:০৮ অপরাহ্ণ ৬৯ বার পঠিত
ঋণখেলাপির দ্বারপ্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র, শঙ্কায় বিশ্ব অর্থনীতি

বিশ্বরাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানো জো বাইডেনের জন্য এখন বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে নিজ দেশের অর্থনীতি। বিপুল অঙ্কের ঋণে থাকা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঋণসীমা যদি বাড়ানো না হয়, তবে দেশটি ঋণখেলাপি হবে। এমনকি এর পরিণতিতে যুক্তরাষ্ট্র মন্দায় তো পড়বেই, পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে। অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন এরই মধ্যে ১ জুন ডেডলাইন ঠিক করে দিয়েছেন।

বিষয়টি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাতে এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনেট ইয়েলেন বলেন, ‘কংগ্রেসকে দেওয়া আমার সর্বশেষ চিঠিতে বলেছি, যদি ঋণসীমা না বাড়ানো হয় তবে জুনের শুরুতেই আমরা সব ধরনের বিল প্রদানে অপারগ হব, এমনকি ১ জুন থেকেই এই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। আমি কংগ্রেসকে এ ব্যাপারে আপডেট দিতে থাকব, কিন্তু আমি যে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছি, তাতে কোনো পরিবর্তন নেই। সুতরাং আমি মনে করি এটি একটি কঠিন ডেডলাইন।’

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, যদি কংগ্রেস আরো বেশি ঋণ নেওয়ার জন্য অনুমোদন না দেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার অর্থশূন্য হয়ে পড়বে এবং ঋণখেলাপি হবে।


কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারা সরকারকে ঋণসীমা বৃদ্ধির অনুমোদনের ক্ষেত্রে সরকারের ব্যয় বাড়ানোর শর্ত দিয়ে রেখেছে। কিন্তু সরকার তা মানতে নারাজ। ফলে এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ যাবৎ অচলাবস্থা রয়েছে।

আর সেই অচলাবস্থা ভাঙতেই জো বাইডেন এশিয়ার সফর সংক্ষিপ্ত করে রাজধানীতে ফিরেছেন রিপাবলিকান হাউস স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থির সঙ্গে আলোচনায় বসতে। গতকাল সোমবারের এ বৈঠকের কী ফলাফল আসে তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে ওয়াশিংটনে।


বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখন এমন চরম অচলাবস্থার মধ্যে আটকে আছে, যা কেবল তাদের জন্য নয়, বিশ্ব অর্থনীতির জন্যই এক মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে। যে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া আছে, সেটি আরো বাড়ানো হবে কি না, তা নিয়ে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান, দুই পক্ষই যার যার অবস্থানে অনড়। এই অচলাবস্থার সমাধান না হলে বিশ্ব অর্থনীতিকে হয়তো এযাবৎকালের সবচেয়ে চরম মূল্য দিতে হতে পারে।

ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানরা যদি যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে আরো অর্থ ধার করতে দিতে রাজি না হয়, বা তাদের ভাষায় ঋণের সর্বোচ্চ সীমা না বাড়ায়, তাহলে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশ তাদের ৩১.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঋণখেলাপি হবে। যুক্তরাষ্ট্রে আইন করে নির্দিষ্ট করা আছে, সরকার সর্বোচ্চ কী পরিমাণ অর্থ ধার করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ব্যয়ের বড় খাতগুলো হচ্ছে ফেডারেল সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, সামরিক ব্যয়, সোশ্যাল সিকিউরিটি, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি। এর সঙ্গে আছে সরকারের জাতীয় ঋণের কিস্তি এবং এর সুদ পরিশোধ এবং ট্যাক্স রিফান্ড ইত্যাদি। বেশ কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সর্বোচ্চ ব্যয়ের সীমা বাড়ানো হচ্ছে, কারণ সরকার আসলে যা আয় করছে, তার চেয়ে বেশি ব্যয় করছে।

যুক্তরাষ্ট্র যদি ঋণখেলাপি হয়, তখন কী হবে? এ বিষয়ে ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ‘প্যানমিউর গর্ডনের’ প্রধান অর্থনীতিবিদ সাইমন ফ্রেঞ্চ বলেন, যদি এ রকম কিছু আসলেই ঘটে, তখন এই বিপর্যয়ের তুলনায় ২০০৮ সালের বিশ্ব ব্যাংকিং এবং আর্থিক সংকটকে এক সামান্য বিষয় বলে মনে হবে। ১৫ বছর আগের ওই সংকটের সময় বিশ্বের বড় বড় বহু ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে মারাত্মক মন্দা দেখা দিয়েছিল। হোয়াইট হাউসের ‘কাউন্সিল অব ইকোনমিক অ্যাডভাইজার্স’ হিসেব করে দেখেছে, ঋণসীমানা বাড়ালে মার্কিন অর্থনীতি ৬.১ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি, সিএনএন