ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত পণ্য ব্যবহারে চুলের ক্ষতি হয়। খেয়াল করুন, চুলের জন্য ব্যবহৃত পণ্যে যেন সিলিকন, প্যারাবেন, সালফেট ইত্যাদি সক্রিয় রাসায়নিক পদার্থ না থাকে।
গরমে ঘামে মাথার ত্বক ভেজা থাকে। এর থেকে চুলে দেখা যায় নানা সমস্যা। এ সময় চুল পড়ে অন্য সময়ের চেয়েও বেশি। এ ছাড়া দুর্বল হয়ে ভেঙে যাওয়ায় চুল হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ, রুক্ষ। কিন্তু যাঁদের চুলের ধরনটাই শুষ্ক, তাঁদের ভুগতে হয় আরও এক ধাপ বেশি। শুষ্ক চুল মনকেও রাখে বিমর্ষ। চুলের কারণে অনেকের আত্মবিশ্বাসও কমে যায়। আর চুলের মানের ওপর স্টাইলও নির্ভর করে। আর উষ্কখুষ্ক, শুষ্ক চুলে মনমতো স্টাইল করা যায় না। আঁটসাঁট করে বেঁধে রাখাটাই একমাত্র উপায়। চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে নিয়মিত যত্নের কোনো বিকল্প নেই। রুক্ষ চুলের কোমলতা ফেরাতে ঘরোয়া উপাদান সহায়তা করবে।
চুল শুষ্ক হয়ে রুক্ষতা ও কুঁচকে যাওয়ার সমস্যা বেড়ে যায়। হারমনি স্পা এবং ক্লিওপেট্রা বিউটি স্যালনের স্বত্বাধিকারী ও রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা জানান, ‘শুষ্ক চুলের অধিকারী না হয়েও এ ধরনের সমস্যায় ভুগতে পারেন। এ জন্য দায়ী অনেক কিছু—ঘন ঘন চুল ধোয়ার প্রবণতা, খরপানির ব্যবহার, চুলে অতিরিক্ত স্টাইলিং যন্ত্রের ব্যবহার, পুষ্টিহীনতা, বয়স, ব্লিচ বা চুল রং করার পণ্যের ব্যবহার, পানিতে ক্লোরিনের উপস্থিতি এবং সূর্যরশ্মি।’
এই আবহাওয়ায় সবার জন্যই তেল মালিশ করা জরুরি। ব্যস্ততার জন্য অনেকেই সময় নিয়ে চুলে তেল লাগিয়ে রাখতে পারেন না। ঘটনা এ রকম হলে শ্যাম্পু করার ৩০ মিনিট আগে তেল ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত শুষ্ক চুলে সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন তেল মালিশ করা গুরুত্বপূর্ণ। শ্যাম্পু করার সময় মেথিগুঁড়া অথবা ভাতের মাড় শ্যাম্পুর সঙ্গে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলেও ভালো ফল পাওয়া যাবে। চুলে কোমলতা ফিরিয়ে আনার জন্য বাড়িতে থাকা উপাদান দিয়েই চুলের প্যাক বানিয়ে নেওয়া সম্ভব।
অ্যালোভেরা প্যাক: অ্যালোভেরা চুলের জন্য উপকারী। ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরার জেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল তেল মিলিয়ে নিন। সঙ্গে নিন আধা কাপ টক দই, ১টি ডিম, সামান্য মেথি আর ১ চা-চামচ নারকেল তেল। মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ২০ মিনিট চুলে রেখে ধুয়ে ফেলতে পারেন।
তিসি প্যাক: তিসি জ্বাল দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। সঙ্গে দিন অল্প কারিপাতা, ১টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল, ২ চা-চামচ টক দই। মিশিয়ে নিন ভালো করে। ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
এ সময়ে চুলের যত্নে
*আগা ফেটে গেলে চুল সহজে লম্বা হয় না। ছয়-আট সপ্তাহ পরপর নিচের কিছুটা চুল কেটে নিন।
*ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত পণ্য ব্যবহারে চুলের ক্ষতি হয়। খেয়াল করুন, চুলের জন্য ব্যবহৃত পণ্যে যেন সিলিকন, প্যারাবেন, সালফেট ইত্যাদি সক্রিয় রাসায়নিক পদার্থ না থাকে।
*চুলের জন্যও ঘুম জরুরি। স্বাস্থ্যকর ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে দৈনিক সাত-আট ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিন।
*শুষ্ক ঘরানার চুলে সব সময় হালকা, ভেষজ এবং সালফেটমুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। এসব শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুলের অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব কমবে কিন্তু চুল শুষ্ক হয়ে যাবে না। চুল এবং মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকবে।
*চুলের সাজে বিভিন্ন রকমের পণ্য এবং অনুষঙ্গের অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত সূর্যরশ্মির প্রকোপ এড়াতে এবং ধুলাবালু থেকে চুল বাঁচাতে ঢেকে রাখুন।
*খুব ঘন ঘন চুল ধোয়া ভালো না। ঘর থেকে বের না হলে সপ্তাহে তিন-চারবার শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। যদি প্রতিদিনই বের হতে হয়, সে ক্ষেত্রে চুল ধোয়ার পরিমাণও বেড়ে যাবে।
*নারকেল তেল প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। চুলে ব্যবহার করার আগে হালকা গরম করে নিন। অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য চুলে রাখুন, তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।