ঢাকা প্রেস-অনলাইন ডেস্ক:-
কুমিল্লার লালমাই উপজেলায় বিয়েবাড়িতে ঘটলো এক নাটকীয় ঘটনা। সাজসজ্জা সম্পন্ন, হলুদের অনুষ্ঠান শেষ, কনের গেটে ফুল-মিষ্টি দিয়ে বরকে বরণ—এর মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে বিস্ফোরক অভিযোগ: বর নাকি আগে থেকেই বিবাহিত।
এ অভিযোগের পরপরই কনের পরিবার বর ও তার স্বজনদের একটি ঘরে আটকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। পরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে নগদ টাকা, চেক, সোনা ও মোবাইল রেখে মোট ১৫ লাখ টাকার সমমূল্যের জরিমানা আদায় করা হয়।
ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে লালমাই উপজেলার বাকই উত্তর ইউনিয়নের ছোট বিজরা গ্রামে। পরদিন শনিবার রাত থেকে ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, উপজেলার পেরুল উত্তর ইউনিয়নের ছোট হাড়গিলা গ্রামের কাতারপ্রবাসী শেখ রাসেল (২৬) ও ছোট বিজরা গ্রামের মাদ্রাসাছাত্রী ফারহানা আক্তার মুন্নীর (১৫) বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। সব আয়োজন শেষ হলেও অভিযোগ ওঠার পর বিয়ে আর সম্পন্ন হয়নি।
কনের দাদা আলী আক্কাস জানান, “আমার নাতনি এ বছর দাখিলে জিপিএ-৫ পেয়েছে। প্রবাসী ও সচ্ছল ছেলে ভেবে বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু গেটে আসার পর জানতে পারি বর আগে থেকেই বিয়ে করেছে। তখন স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে তাকে ঘরে আটকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।”
তিনি আরও জানান, জরিমানার নগদ টাকা, চেক, স্ট্যাম্প ও সোনা স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাফেজ আনোয়ারের কাছে জমা রয়েছে, তবে কনের পরিবার এর কিছুই হাতে পায়নি।
অভিযোগ অস্বীকার করে বর শেখ রাসেল বলেন, “আমি কাতারে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে ব্যবসা করছি। আগেও একবার প্রতারণার শিকার হয়েছিলাম, যার সমঝোতা আইনজীবীর মাধ্যমে হয়েছে। এবারও আমাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে বিয়েবাড়িতে আটকে রেখে চাঁদাবাজির মতো টাকা আদায় করা হয়েছে।”
রাসেলের ছোট ভাই মাহদী হাসান হৃদয়ের দাবি, নগদ ২ লাখ দেওয়ার পর আরও দুটি চেক (৮ লাখ ও ৫ লাখ টাকা), প্রায় ৪ ভরি সোনা, ট্রলি ভর্তি পোশাক-সাজসজ্জা, একটি আইফোন, একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনসহ নানা জিনিস রেখে দিতে বাধ্য করা হয়। এমনকি ৫০ টাকার মূল্যের পাঁচটি খালি স্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষরও নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালিশ বৈঠকের সভাপতিত্বকারী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাফেজ আনোয়ারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
লালমাই থানার ওসি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। স্থানীয়রা জানান, বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। পরে বর ও তার স্বজনদের নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।”