প্রকাশকালঃ
০২ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ ১২৪ বার পঠিত
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি হল জাকাত, যা ধনী মুসলমানদের উপর নির্ধারিত একটি বাধ্যতামূলক আর্থিক দান। জাকাত শুধুমাত্র দান করার চেয়েও অনেক বেশি, এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, ধন-সম্পদের পবিত্রতা, এবং অভাবীদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের মাধ্যম। জাকাত আদায়ের মাধ্যমে একজন মুমিন যেসব বিশেষ পুরস্কার লাভ করতে পারে—
আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জাকাত আদায় করে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার। আল্লাহ তাআলা বলেন, "এবং যারা নামাজ আদায় করে, জাকাত দেয়, আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদের মহাপুরস্কার দেব।" (সূরা: নিসা, আয়াত: ১৬২)
মুমিনের পরিচয়
জাকাত আদায় প্রকৃত মুমিনের পরিচয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, "আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্যধারণকারী তারাই হলো সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই (প্রকৃত মুমিন) আল্লাহকে ভয়কারী।" (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৭৭)
অন্তরের আত্মশুদ্ধি
জাকাত আদায়ের মাধ্যমে অন্তরের আত্মশুদ্ধি লাভ করা সম্ভব। আল্লাহ তাআলা বলেন, "হে নবী, আপনি তাদের ধন-সম্পদ থেকে জাকাত গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে দেবেন এবং তাদের জন্য দোয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনার দোয়া তাদের জন্য প্রশান্তি। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।" (সূরা: তাওবা, আয়াত: ১০৩)
ধন-সম্পদে পবিত্রতা ও বরকত
জাকাত ধন-সম্পদকে পবিত্র ও বরকতময় করে তোলে। মুসনাদে আহমদের বর্ণনা অনুযায়ী, আনাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমি সম্পদশালী ও আমার আত্মীয়-স্বজনও অনেক।
আর আমি শহরে বাস করি। আমাকে বলুন, কিভাবে নিজের সম্পদ ব্যয় করব? তিনি বলেন, জাকাত আদায় করবে। কারণ জাকাত হলো সম্পদের পবিত্রতা, তা তোমাকে পবিত্র করবে। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে। অসহায়, মিসকিন, প্রতিবেশী ও অভাবীদের হকের প্রতি লক্ষ রাখবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১২৩৯৪)
জাকাত আদায়কারী মুমিনের বন্ধু
মানুষের প্রকৃত বন্ধু কারা—এ প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং মুমিনরা, যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং বিনম্র।’ (সুরা : মায়িদা,আয়াত : ৫৫)
মসজিদ আবাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত
আল্লাহ তাআলা জাকাত আদায়কারীদের মসজিদ আবাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে ঘোষণা দিয়েছেন। “নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে, যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামাজ ও আদায় করে জাকাত। আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সুরা তাওবা, আয়াত ১৮)
জাকাত আদায়ে সফলতার ঘোষণা
সুরা লুকমান, আয়াত ৪-এ আল্লাহ তাআলা বলেন, “এসব লোকই তাদের রবের পক্ষ থেকে আসা হিদায়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং এরাই সফলকাম, যারা নামাজ আদায় করে, জাকাত দেয় এবং আখিরাত সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।”
দ্বিনের মৌলিক পরিচয় বহনকারী
জাকাত আদায়কারীরা দ্বিনের মৌলিক পরিচয় বহন করে। পৃথিবীতে এ পরিচয় বহন করা সৌভাগ্যের লক্ষণ। “তাদের এ ছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।”( সুরা বাইয়েনা, আয়াত ৫)
আখিরাতে চিন্তামুক্তির ঘোষণা
আখিরাতে চিন্তামুক্ত থাকার জন্য যথাসময়ে জাকাত দিতে হবে। “যারা নামাজ আদায় করে এবং জাকাত দেয়, তারাই আখিরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী; তারাই তাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে আছে এবং তারাই সফলকাম।” (সুরা লুকমান, আয়াত ৪-৫)
জান্নাত লাভের ঘোষণা
আবু মালেক আল আশআরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জান্নাতের মধ্যে এমন সব (মসৃণ) ঘর রয়েছে, যার বাইরের জিনিসগুলো ভেতর থেকে এবং ভেতরের জিনিসগুলো বাইর থেকে দেখা যায়। সেসব ঘর আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন যে ব্যক্তি (মানুষের সঙ্গে) নম্রতার সঙ্গে কথা বলে, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করে (জাকাত আদায় করে), পর পর রোজা রাখে এবং রাতে নামাজ আদায় করে অথচ মানুষ তখন ঘুমিয়ে থাকে।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিসঃ ১৩৫১)