আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
ভাত খেতে বসেছিলাম। এমন সময় মাইদুলের নেতৃত্বে একদল লোক ঘরে ঢুকে চালের টিন, দরজা ও জানালা ভেঙে নিয়ে যায়। বারবার অনুরোধ করা হলেও শোনেনি। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা জায়গায় থাকতে হচ্ছে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন চিলমারী উপজেলার অষ্টমীরচর ইউনিয়নের খোর্দ্দ বাঁশপাতা এলাকার বাসিন্দা ৫৫ বছর বয়সি ফজল উদ্দীন।
গত ২৭ আগস্ট ভাঙনের অজুহাত দেখিয়ে ফজল উদ্দীনের মতো আবাসনের ৩০ পরিবারের টিনের চাল, দরজা-জানালাসহ ঘরের গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী খুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আশ্রয় হারিয়ে পরিবারগুলো এখন অনিশ্চিত জীবনের মুখে পড়েছে।
২০২০-২১ অর্থবছরে চিলমারী উপজেলার অষ্টমীরচর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খোর্দ্দ বাঁশপাতা এলাকায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় দীঘলকান্দি আবাসন প্রকল্পের ২০টি ব্যারাক। এখানে ১০০ পরিবার বসবাস করে।
চলতি বছর ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙন শুরু হয়। জুন মাসে ৭টি ব্যারাকের ৩৫ ঘরের চালের টিন, লোহার এঙ্গেল, দেয়ালের ইট, দরজা ও জানালা ভেঙে নিয়ে যান বাসিন্দারা। সে সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য এসএম সেলিম মিয়া থানায় অভিযোগ দিলে প্রশাসন আবাসন প্রকল্প এলাকায় এসে মালপত্র উদ্ধার করে মাইদুল নামে এক ব্যক্তির হেফাজতে দেয়। এরপর ভাঙন বন্ধ হয়। এরপরও মাইদুলের নেতৃত্বে নাজমুল, রাশেদুল, শাহিন, মাইদুল ইসলাম, শাহজাহান, সাবেক মেম্বার মোস্তাফা, জেসমিন বেগমসহ ১০ থেকে ১২ জন গত ২৭ আগস্ট ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের অজুহাত তুলে ৬টি ব্যারাকের ৩০টি ঘরের চালের টিন, লোহার এঙ্গেল, দেয়ালের ইট, দরজা ও জানালা খুলে নিয়ে যান। বসবাসকারী পরিবারগুলো ঘর না ভাঙতে অনুরোধ করলেও তারা শোনেননি।
মঙ্গলবার আবাসন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে ধ্বংসস্তূপ। খোলা জায়গায় পরিবার পরিজন নিয়ে অবস্থান করছেন বাসিন্দারা।
কথা হয় রফিকুল ইসলাম, মতিয়ার রহমানসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, নদভাঙনে সব কিছু হারিয়ে চার বছর আগে আবাসনে আশ্রয় পান। গত জুন মাসে আবার নদে ভাঙন দেখা দিলেও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তারা কিছুটা আশা নিয়ে দিন পার করছিলেন। প্রশাসনের দোহাই দিয়ে মাইদুল লোকজন নিয়ে দরজা-জানালাসহ মালপত্র নিয়ে গেছেন। তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। এখন খোলা জায়গায় অবস্থান করছেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে স্থানীয় ইউপি সদস্য এসএম সেলিম মিয়া বলেন, জুন মাসে খুলে রাখা ব্যারাকের মালপত্র মো. মাইদুলের হেফাজতে দেওয়া হয়। এখন নদ স্থির আছে। অথচ ভাঙনের অজুহাত তুলে বাসিন্দাদের সময় না দিয়ে তারা আবারও ব্যারাকের ঘরের দরজা-জানালাসহ মালপত্র নিয়ে গেছেন। অফিস খরচের কথা বলেও তারা আশ্রিতদের কাছ থেকে টাকাও তুলেছেন।
অভিযুক্ত মাইদুল ইসলাম বলেন, তার নেতৃত্বে কেউ আবাসনের ঘর ভাঙতে যায়নি। তাকে জড়িয়ে একটি পক্ষ অপপ্রচার চালাচ্ছে।