ঈদের নামাজের আগে পশু কুরবানি করা যাবে কি?

প্রকাশকালঃ ০৬ জুন ২০২৪ ০৬:১২ অপরাহ্ণ ১৫৫ বার পঠিত
ঈদের নামাজের আগে পশু কুরবানি করা যাবে কি?

প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন মুসলিম ‘নিসাব’ পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার জন্য কুরবানি করা ওয়াজিব বা আবশ্যক। অর্থাৎ, কেউ সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা অথবা এর সমপরিমাণ নগদ টাকা কিংবা সম্পদের মালিক হলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তার কুরবানি করা আবশ্যক।

 

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর (কুরবানির পশু) গোশত ও রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি সেসবকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবীর পাঠ করতে পারো, এ জন্য যে তিনি তোমাদের হেদায়াত দান করেছেন, সুতরাং তুমি সৎকর্মশীলদেরকে সুসংবাদ দাও। (সুরা হজ, আয়াত ৩৭)

 

অন্যদিকে, হাদিসে এসেছে- মাহনাফ ইবন সুলায়মান (রা.) থেকে বর্ণিত, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে আরাফায় অবস্থান করছিলাম। তখন তিনি বলেন, হে লোক সকল! আমাদের প্রত্যেক গৃহবাসীর ওপর প্রতি বছর কুরবানি করা ওয়াজিব। (আবু দাউদ, ২৭৭৯)

 

এ ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান হলো ঈদের নামাজের পর পশু কুরবানি করা। তবে ঈদের নামাজের আগে কুরবানি করলে তা সঠিকভাবে আদায় হবে না। মুতাররাফ বারা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাতের পর জবেহ (কুরবানি) করলো তার কুরবানি পূর্ণ হলো এবং সে মুসলিমদের নীতি পালন করলো (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫১৪৭)।


অন্য হাদিসে এসেছে, বারা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে খুতবা দেয়ার সময় বলতে শুনেছি, আমাদের আজকের এই দিনে (ঈদের দিনে) সর্বপ্রথম আমরা যে কাজটি করবো তা হলো সালাত (নামাজ) আদায়। এরপর আমরা ফিরে গিয়ে কুরবানি করবো। যে ব্যক্তি এভাবে করবে সে আমাদের সুন্নাতকে অনুসরণ করবে। আর যে ব্যক্তি পূর্বেই জবেহ (কুরবানি) করে তা তার পরিবার পরিজনের জন্য অগ্রিম মাংস (হিসেবে গণ্য), তা কিছুতেই কুরবানি বলে গণ্য নয়।

 

তখন আবূ বুরদা (রা.) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (সা.) আমি সালাত আদায়ের পূর্বেই জবেহ করে ফেলেছি এবং আমার কাছে একটি বকরির বাচ্চা আছে। যেটি পূর্ণ এক বছরের বকরির চাইতে উত্তম। রাসুল (সা.) বললেন, তুমি সেটিকে কুরবানি করো। তোমার পরে এ নিয়ম আর কারও জন্য প্রযোজ্য হবে না। (সহিহ বুখারি, ৫১৬২)

 

মূলত একটি কুরবানি হলো একটি ছাগল, একটি ভেড়া বা একটি দুম্বা অথবা গরু, মহিষ ও উটের সাত ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ একটি গরু, মহিষ বা উট সাত শরিকে বা সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানি করা যাবে। জাবির (রা.) আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমরা হুদায়বিয়াতে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে সাতজনে একটি উট বা সাতজনে একটি গরু কুরবানি করেছি। (তিরমিজি, হাদিস: ১৫০৮) অপর হাদিসে এসেছে, জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, গাভী ও উট সাত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি হয়ে যাবে। (আবূ দাউদ, ২৭৯৯)

 

এ ক্ষেত্রে কুরবানি দেয়ার ক্ষেত্রে কুরবানির পশু যেমন সুস্থ হতে হবে তেমনি কম বয়সী হওয়াও চলবে না। আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ (সা.) এরূপ দুম্বা কুরবানি করতে নির্দেশ দিয়েছেন, যার দুটি শিং হবে নিখুঁত, আর পেট, বক্ষদেশ এবং পা হবে কালো রঙের। অতঃপর এরূপ দুম্বা তার নিকট আনা হলে, তিনি বলেন- হে আয়শা! ছুরি নিয়ে এসো। পরে তিনি বলেন, একে পাথরের ওপর ঘষে ধারালো করো। অবশেষে তিনি ছুরি নেন এবং দুম্বাকে ধরে জমিনে শুইয়ে দেন এবং জবেহ করার সময় নিচের দোয়াটি পাঠ করে দুম্বাকে কুরবানি করেন।

 

بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন মুহাম্মাদিন, ওয়া-আলি মুহাম্মাদিন ওয়া-মিন-আম্মাতি মুহাম্মাদিন।

 

অর্থ : আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ্! আপনি একে মুহাম্মাদ, আলে মুহাম্মদ এবং উম্মতে মুহাম্মদের পক্ষে কবুল করুন। (আবূ দাউদ, হাদিস: ২৭৮৩)

 

অপর হাদিসে এসেছে, বারা ইবনু আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- খোঁড়া পশু যার খোঁড়া হওয়া স্পষ্ট, কানা পশু যার অন্ধত্ব সুস্পষ্ট, রুগ্ন পশু যার রোগ সুস্পষ্ট, ক্ষীণ পশু যার হাড্ডির মগজ পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে- এমন পশুর কুরবানি হবে না। (তিরমিজি, হাদিস: ১৫০৩, মেশকাত, হাদিস: ১৪৬৫)