প্রকাশকালঃ
০৯ জুলাই ২০২৪ ০১:২৮ অপরাহ্ণ ৪০৮ বার পঠিত
ডায়াবেটিস হলে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিনিযুক্ত বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে বারণ করা হয়। আর তাই অনেকেই মনে করেন মিষ্টি খাবার কিংবা অতিরিক্ত চিনি খাওয়াই ডায়াবেটিসের কারণ। প্রচলিত এই ধারণাটি নিয়ে বিবিসিতে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান। ডায়াবেটিস সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
ডায়াবেটিস কি: ডায়াবেটিস এমন একটি শারীরিক অবস্থা যার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক বেশি বেড়ে যায়। এতে একবার কেউ আক্রান্ত হলে সারা জীবনের জন্য তা বয়ে বেড়াতে হয়। খাবার খাওয়ার পর শরীর সেই খাবারের শর্করাকে ভেঙে চিনিতে (গ্লুকোজ) রূপান্তরিত করে। আর এটি শরীরে শক্তির যোগান দেয়। তবে ডায়াবেটিস হলে শরীরের কোষগুলো আগে যে চিনিকে জ্বালানি বা শক্তিতে পরিণত করতো, সেই চিনি কোষের পরিবর্তে রক্তের মধ্যে জমা হতে শুরু করে। ফলে ডায়াবেটিস হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের দেয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী, ডায়াবেটিস এমন এক দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা যার ফলে শরীর কার্যকরভাবে ইনসুলিন হরমোন তৈরি করতে পারে না। বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, ডায়াবেটিস হলে মানুষের শরীরে গ্লুকোজ স্থায়ীভাবে বেড়ে যায়। আর কোনো ধরনের প্রতিকার না নেয়া হলে এটা বাড়তেই থাকে। ফলে অনেক জটিলতা তৈরি হয়।
ডায়াবেটিস হলে কেবল চিনিই নয়, আরও অনেক বিপাকীয় সমস্যা তৈরি হয়। তবে রক্তে চিনির পরিমাণ মেপে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয় বলে এটি নিয়েই বেশি আলাপ-আলোচনা হয় বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। চিনির সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক: চিনি বেশি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার সরাসরি কোনো যোগসূত্র নেই। তবে চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার ডায়াবেটিস হবার ক্ষেত্রে পরোক্ষ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। চিনি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার সরাসরি সম্পর্ক নেই- এটা যেমন সত্য, তেমনি আপনি যদি বেশি মিষ্টি খেতে অভ্যস্ত হন, তাহলে মুটিয়ে (মোটা হওয়া) যেতে পারেন।
আর মুটিয়ে গেলে পরোক্ষভাবে তা ডায়াবেটিস হতে সাহায্য করবে বলেও জানান জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান।যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট মেডিক্যাল নিউজ টুডেতে বলা হয়েছে, প্রচুর চিনি খাওয়ার কারণে সরাসরি ডায়াবেটিস হয় না। কিন্তু এটি স্থূলতা, হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ফলে ওই ব্যক্তি সহজেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন।
যেসব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে:
ডায়াবেটিস হলে সাধারণত মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে এর নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ না থাকলেও শরীরে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি ডায়াবেটিসের জানান দিতে পারে। যেমন-
ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা
দুর্বল লাগা ও ঘোর ঘোর ভাব আসা
ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে যাওয়া
মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া
কোনো কারণ ছাড়াই ওজন অনেক কমে যাওয়া
শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলে দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা
চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব
বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা
চোখে কম দেখতে শুরু করা
ডায়াবেটিসের কারণে যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে:
রক্তে চিনির পরিমাণ বেশি হলে রক্তনালীর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। শরীরে যদি রক্ত ঠিকমতো প্রবাহিত হতে না পারে, যেসব জায়গায় রক্তের প্রয়োজন সেখানে যদি এই রক্ত পৌঁছাতে না পারে, তখন স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর ফলে মানুষ দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে। ইনফেকশন হতে পারে পায়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অন্ধত্ব, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদির পেছনে একটি বড় কারণ ডায়াবেটিস।