 
                            
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
ঢাকা প্রেসঃ
কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে বিচার না পেয়ে দম্পতির বিষপান এবং পরে গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। রবিবার (২ জুন) কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত আদেশে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার কমিশনের আদেশের কপি পেয়েছি। আজকালের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
আদেশে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তপূর্বক কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাতে জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকাজ পর্যবেক্ষণ করে জরুরি ভিত্তিতে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে কমিশনকে অবহিত করতে পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে। আগামী ১৬ জুলাই এসব প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে চর রাজিবপুর উপজেলায় পাওনা টাকা আদায়ের নামে দিনের পর দিন সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক গৃহবধূ। এ ঘটনায় স্বামীসহ মামলা করতে গেলেও থানায় ঢুকতে না পেরে ফিরে যান তারা। স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে বিচার চেয়েও না পেয়ে ক্ষোভ আর অভিমানে বিষপান করেন দম্পতি। পরে গৃহবধূর মৃত্যু হয়। পুরো বিষয়টিকে মর্মান্তিক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন উল্লেখ করে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সমীচীন বলে মনে করে কমিশন।
গৃহবধূর মৃত্যুর আগে দেওয়া জবানবন্দির অডিও রেকর্ড এবং স্বামী ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়ি মেরামত করার জন্য ধার নেওয়া ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গৃহবধূকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে স্থানীয় কসাই জয়নাল। ধর্ষণের ভিডিও করে গৃহবধূকে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে। একপর্যায়ে জয়নাল তার অপর সহযোগী শুক্কুর, আলম ও সোলেমানকে নিয়ে গৃহবধূকে দিনের পর দিন সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। দুই মাস ধরে এই পাশবিক নির্যাতন চালাতে থাকে তারা। বাধ্য হয়ে ওই গৃহবধূ স্বামীকে সবকিছু জানান। স্থানীয় মাতব্বরদের কাছে বিচার না পেয়ে পরে স্বামী-স্ত্রী থানায় যান।
কিন্তু জয়নালের সহযোগী রবিউল নামে এক পুলিশ কনস্টেবল তাদের ‘বিচারের’ আশ্বাস দিয়ে ফিরিয়ে দেন। একই দিন সন্ধ্যায় জয়নাল, শুক্কুর এবং কনস্টেবল রবিউল ও থানার গাড়িচালক মাজহারুলসহ স্থানীয় মাতব্বররা মিলে সালিশ বৈঠক বসান। সালিশে বিচার না পেয়ে ক্ষোভ ও অভিমানে পরদিন (২৪ মে) গ্রামবাসীর সামনে প্রকাশ্যে বিষপান করেন দম্পতি। একাধিক হাসপাতাল ঘুরে চার দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বাড়ি ফিরে গৃহবধূ মারা যান। স্বামী এখনও অসুস্থ অবস্থায় আছেন।
এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। বিষপানের সাত দিন পর নিহতের মামা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে চার জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জয়নাল ও তার এক সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মানবাধিকার কর্মী, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত আইনজীবী এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘এটা ভালো দিক যে মানবাধিকার কমিশন বিষয়টিকে আমলে নিয়েছে। আমি মনে করি আলামত নষ্ট হওয়ার আগেই যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত। প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে এ ঘটনায় যে বা যারাই জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।’
 
                                                
                                                 
                                                
                                                 
                                        
                                        
                                     
                                        
                                        
                                     
                                        
                                        
                                     
                                        
                                         
                                        
                                        
                                    