কুড়িগ্রামে বৃদ্ধাকে এসিড নিক্ষেপ, মামলা নেয়নি পুলিশ 

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:০৬ অপরাহ্ণ   |   ৯১ বার পঠিত
কুড়িগ্রামে বৃদ্ধাকে এসিড নিক্ষেপ, মামলা নেয়নি পুলিশ 

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলায় জমিজমার বিরোধকে কেন্দ্র করে মরিয়ম বেগম (৭০) নামে এক বৃদ্ধাকে অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে ওই বৃদ্ধা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নে। ওই বৃদ্ধার পরিবার এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য, অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনাটি সন্দেহজনক হওয়ায় তা অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।
 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের মাদারটারী এলাকার মঞ্জু মিয়া (৪৮) ও তাঁর প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম রানুর (৪৮) পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমাজমি নিয়ে বিরোধ চলছে। গত শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মঞ্জু মিয়ার ছোট ভাই মজনু মিয়া (৩৮) বাড়ির পাশে পুকুর থেকে মাছ ধরে বাড়িতে ফিরছিলেন। রানুর বাড়ির সামনে পৌঁছালে তাঁরা মঞ্জু মিয়াকে গালিগালাজ করতে থাকে। এ সময় মঞ্জু মিয়া ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে মঞ্জু মিয়ার মা মরিয়ম বেগম ও স্ত্রী শিউলী বেগম (৩৫) এগিয়ে আসেন। এ সময় রানুর পরিবারের লোকজন মঞ্জুর পরিবারের সবাইকে মারধর করেন। একপর্যায়ে রানু মিয়ার সঙ্গে প্লাস্টিকের বোতলে থাকা অ্যাসিড মরিয়ম বেগমের মুখে ও কপালে ঢেলে দেয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
 

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, অ্যাসিড নিক্ষেপের পর মরিয়ম বেগমসহ আহতদের আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পরে মরিয়ম বেগমের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানেও তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি রংপুরে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
 

এদিকে ঘটনার দিন রাতেই মঞ্জু মিয়া বাদী হয়ে রফিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা চারজনের বিরুদ্ধে উলিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
 

এ বিষয়ে মঞ্জু মিয়ার দাবি, প্রতিপক্ষ তাঁর মায়ের মাথায় ও মুখে অ্যাসিড ছুড়ে মারেন। ঘটনার দিন শনিবার রাতেই থানায় অভিযোগ দিলেও তা সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমার মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন।’
 

অ্যাসিড নিক্ষেপের বিষয়ে রফিকুল ইসলাম রানুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, মঞ্জু মিয়ার পরিবারের সঙ্গে সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে অ্যাসিড নিক্ষেপের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি তদন্ত করলেই সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্প কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই দিন দুপুরে মরিয়ম বেগম নামে এক বৃদ্ধা হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর মুখে ও মাথায় কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ ছোড়া হয়েছে। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে অতিরিক্ত জ্বালাপোড়ার কারণে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারবেন।
 

উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জিল্লুর রহমান অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার বলেন, অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনাটি সন্দেহজনক। তাই বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।