কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার এক শিক্ষক দুই এমপিও প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর অভিযোগ

প্রকাশকালঃ ০৮ জুন ২০২৪ ০৫:৫৪ অপরাহ্ণ ১০৩১ বার পঠিত
কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার এক শিক্ষক দুই এমপিও প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর অভিযোগ

ঢাকা প্রেসঃ
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

 

কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মাদ্রাসার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষক বায়জিদ হোসেন ‘প্রশিক্ষণের’ নামে ছুটি নিয়ে সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্মরত রয়েছেন। ওই প্রভাষক গত পাঁচ মাস ধরে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত বেতনও উত্তোলন করছেন।
 

 

মাদ্রাসা অধ্যক্ষ নূর বখ্ত দাবি করছেন, ওই শিক্ষক উচ্চতর প্রশিক্ষণে থাকায় ছুটিতে আছেন। তবে অধ্যক্ষের এমন দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

 

মাদ্রাসার শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রশিক্ষণে থাকার নামে ওই প্রভাষক সৈয়দপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে একই পদে কর্মরত। তিনি গত পাঁচ মাস ধরে মাদ্রাসায় উপস্থিত না হয়েও অধ্যক্ষের ‘যোগসাজশে’ দুই প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন। তার স্থলে একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে মাদ্রাসায় আইসিটি বিষয়ের পাঠদান করা হচ্ছে।

 

দুই প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। সৈয়দপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওয়েব সাইটে ওই শিক্ষকের ছবিসহ কর্মরত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও কলেজটির আইসিটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
 

 

আলিয়া মাদ্রাসা সূত্রে জানা গেছে, প্রভাষক বায়জিদ হোসেন এনটিআরসিএ কর্তৃক চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় আইসিটি বিষয়ের প্রভাষক পদে যোগদান করেন এবং এমপিওভুক্ত হন। গত জানুয়ারি মাস থেকে তিনি মাদ্রাসায় অনুপস্থিত। তবে মাদ্রাসা থেকে নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন। তার ব্যাংক হিসাব নম্বরের লেনদেন দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

 

মাদ্রাসার আইসিটি বিষয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আরিফুল ইসলাম আকাশ বলেন, ‘আইসিটি বিষয়ে অন্য কোনও শিক্ষক আছেন কিনা আমি জানি না। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখ থেকে আমি নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছি। এ সময় আইসিটি বিষয়ের অন্য কোনও শিক্ষক দেখতে পাইনি। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ স্যার ভালো বলতে পারবেন।’

 

মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রভাষক বায়জিদ হোসেন অধ্যক্ষ নূর বখতের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। দুই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বেতনও উত্তোলন করছেন। হাজিরা খাতা ও বেতন বিলের কাগজপত্রে কীভাবে তার স্বাক্ষর দেওয়া হয় তা জানেন না অন্য শিক্ষকরা।

 

মাদ্রাসার শিক্ষক প্রতিনিধি (টিআর) মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘আইসিটি শিক্ষক বায়জিদ হোসেন অনেকদিন ধরে মাদ্রাসায় আসেন না। শুনেছি তিনি ট্রেনিংয়ে আছেন। কিসের ট্রেনিং তা জানি না। অধ্যক্ষ স্যার বলতে পারবেন।

 

সৈয়দপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের আইসিটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সারওয়ারর্দী আলম তার বিভাগে বায়জিদ হোসেনের কর্মরত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বায়জিদ আগে আমাদের স্কুল শাখার শিক্ষক ছিলেন। মাদ্রাসায় চাকরি হওয়ার পর তিনি ইস্তফা দেন। কর্তৃপক্ষ তাকে রাখার জন্য প্রস্তাব দিলে তিনি কলেজের প্রভাষক পদে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে পাঁচ মাস আগে কর্তৃপক্ষ তাকে কলেজ প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। এমনকি তার স্ত্রীকেও চাকরি দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি কলেজে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন এবং বেতনও পাচ্ছেন। তিনি যে এখনও ওই মাদ্রাসায় কর্মরত আছেন তা আমাদের জানা নেই।’

 

একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও বেতন উত্তোলন করা অনৈতিক উল্লেখ করে এই বিভাগীয় প্রধান বলেন, ‘তিনি ওই মাদ্রাসা থেকেও বেতন উত্তোলন করে থাকলে তা অবশ্যই অনৈতিক কাজ। বিষয়টি আমি কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’

 

জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রভাষক বায়জিদ হোসেন বলেন, ‘মাদ্রাসার অধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা বলে আমি ৩০ জুন পর্যন্ত প্রশিক্ষণকালীন ছুটি নিয়েছি। আমি যেখানে আছি সেটি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান নয়।’

 

এমপিওভুক্ত শিক্ষক হয়ে অন্য কলেজে নিয়োগ নিয়ে উভয় প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন উত্তোলন কতটা বিধিসম্মত, এমন প্রশ্নের জবাবে বায়জিদ দাবি করেন, তিনি ১ জুন আলিয়া মাদ্রাসায় ইস্তফা দিয়েছেন। এতদিন তিনি যে বেতন উত্তোলন করেছেন তা তিনি ফেরত দিতেও প্রস্তুত আছেন। তবে তার ইস্তফা দেওয়ার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।

 

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নূর বখ্ত বলেন, ‘বায়েজিদ ৩০ জুন পর্যন্ত প্রশিক্ষণকালীন ছুটিতে আছেন। এরপর যোগদান না করলে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তবে ওই শিক্ষকের প্রশিক্ষণের সপক্ষে প্রমাণ এবং এ বিষয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি অধ্যক্ষ।

 

যোগদানের পরপরই প্রশিক্ষণের নামে ছুটি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা এবং উভয় প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন উত্তোলন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, ‘এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত না থাকলে সমস্যা নেই।’

 

জেলা প্রশাসক ও আলিয়া কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘এটি গুরুতর অনিয়ম। বিষয়টি তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’