নাব্যতা সংকটে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, গঙ্গাধর

প্রকাশকালঃ ২৫ মে ২০২৪ ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ ৭১০ বার পঠিত
নাব্যতা সংকটে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, গঙ্গাধর

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

ঢাকা প্রেসঃ
শনিবার, ২৫ মে ২০২৪ ইং ০৭:০০ এএম. কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে মরে গেছে শংকোষ নদী ও ফুলকুমর নদ। এ ছাড়া প্রকট নাব্য সংকটে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমর নদ ও গঙ্গাধর নদী। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত গীড়াই, পয়রাডাঙ্গা, গোর্দ্ধার, মোসলিয়া, মেসনি, চামটা, ঠুঁটাপাইকর, নাগেশ্বরীসহ বেশির ভাগ নদীর তলানি ভেসে ইতিমধ্যে পানিশূন্য হয়ে যাওয়ায় এর বুকে এখন চাষাবাদ হচ্ছে।

 


এ নদ-নদীগুলোকে ঘিরে গড়ে ওঠা ব্যবসা, কৃষি, শিল্প, সংস্কৃতিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নেমে এসেছে স্থবিরতা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নদীমাতৃক উপজেলার নদ-নদীগুলোর তলানিতে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং উৎসমুখে ভারত বাঁধ দেয়ার কারণে কমে গেছে পানিপ্রবাহ। বর্ষায় উজানের পাহাড়ি ঢলে ধারণক্ষমতার অধিক পানি প্রবাহিত হওয়ায় নদীর দুই কূল ছাপিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে পানি।

ভাঙনে নদী তীরবর্তী সর্বস্বান্ত এ মানুষেরা প্রতি বছর পরিবার নিয়ে হচ্ছে শহরমুখী। চাপ বাড়ছে শহরেও। ফুলকুমর:- ভারতের কুচবিহার জেলায় প্রবাহিত খুটামারী নদী ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নে প্রবেশ করে ফুলকুমর নাম ধারণ করে। দক্ষিণ-পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে নাগেশ্বরীর রায়গঞ্জ বাজারের উত্তরদিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পূর্বে দুধকুমর নদে মিলিত হয়েছে। এর অপর একটি অংশের নাম গঙ্গাধর।

 


ফুলকুমর একসময় স্রোতস্বিনী থাকলেও দীর্ঘ সময় পলি জমে তলানি ভেসে উঠে এখন মরা খাল। শংকোষ:- সীমান্তের ওপার থেকে কচাকাটার কাটাজেলাস দিয়ে আসা শংকোষ নদী বল্লভের খাসে গিয়ে গঙ্গাধরের সঙ্গে মিলে গেছে। একসময়ের খরস্রোতা এই নদীর গতিপথের দৈর্ঘ্য সামান্য হলেও ভাঙন ছিল তীব্র। যে জায়গা দিয়ে প্রবাহিত হতো সেখানে চালাতো তাণ্ডবলীলা। অব্যাহত ভাঙনের সঙ্গে পেছনে চর ফেলে সামনে অগ্রসর হওয়ায় কাটাজেলাস অংশে প্রমত্তা শংকোষ এখন শুকিয়ে মরা খাল। এলাকাবাসী এর নাম দিয়েছে বড়ছড়া। দীর্ঘদিনে তা পুরোপুরি আবাদযোগ্য হওয়ায় বর্ষা মৌসুম বাদে বছরের বাকি সময় এর বুকে বিভিন্ন চাষাবাদ হয়। বর্তমানে এর বুকে সবুজের সমারোহ। মূল ছড়ায় ইরি-বোরো বীজতলা ও অববাহিকায় কৃষক লাগিয়েছে শীতকালীন শাক-সবজি।

গঙ্গাধর:- একসময়ের খরস্রোতা গঙ্গাধর নদী যে সকল ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতো সেখানে চালাতো তাদের তাণ্ডবলীলা। এখনো বল্লভেরখাস ইউনিয়নের পূর্ব অংশে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। নাব্য সংকটে অন্য জায়গায় তা অপেক্ষাকৃত দুর্বল। দুধকুমর:- ভারতের কুচবিহার জেলায় প্রবাহিত কালজানি নদী সীমান্ত অতিক্রম করে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার শিলকুড়ি ইউনিয়নের শালজোড় গ্রাম দিয়ে এ দেশে প্রবেশ করেছে। এটি সোনাহাট ব্রিজের দক্ষিণে আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের বারৈইটারী মৌজার দক্ষিণে এসে দুধকুমর নামে আরও দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা, বেরুবাড়ী, বল্লভেরখাস ও কালীগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়েছে।

নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত এ নদ অগভীর, খরস্রোতা ও আঁকাবাঁকা। শুকনো মৌসুমে শান্ত ও শীর্ণকায়। বর্ষায় অশান্ত। প্রকৃতিতে ধ্বংসযোগ্য চালায়। প্রতি বছর শিকার বানিয়ে গিলে খাচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। অসংখ্য মানুষ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব, রিক্ত ও অসহায়। বালুর স্তর জমে অনেক আবাদি জমি হয়ে গেছে অনাবাদি। প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে বামনডাঙ্গা, রায়গঞ্জ, কেদার, বেরুবাড়ী, বল্লভেরখাস ও কালীগঞ্জ ইউনিয়নের মানচিত্র। ভাঙনে নিঃস্ব এ ইউনিয়নের মানুষগুলো দরিদ্র থেকে হচ্ছে অতিদরিদ্র। বর্ষাউত্তর এর দুই তীরে বিস্তীর্ণ চর কাশবনে ভরে ওঠে। এখন এই চরে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ হচ্ছে। আঁকাবাঁকা ও দীর্ঘ সময় পলি জমে গভীরতা কমে গিয়ে খরস্রোতা হওয়ায় বর্ষায় ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি তলানিতে নতুন করে পলি জমে নাব্য কমে যাচ্ছে।

নাব্য সংকটে কালের বিবর্তনে ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী পাঁচমাতা মাল ঘাট। ব্রহ্মপুত্র:- ব্রহ্মপুত্র নদ মানস সরোবর হতে উৎপন্ন হয়ে তিব্বতে ডিহং নামে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ভারতের আসাম রাজ্যে লোহিত্য নাম ধারণ করে আসাম রাজ্যের গোয়ালপাড়া জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের মাঝিয়ালী গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সেখান থেকে অগ্রসর হয়ে এ উপজেলার নুনখাওয়া দিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা সদরের ঘোগাদহ ইউনিয়নের পাঁচগাছিতে যাত্রাপুর নদীবন্দর অতিক্রম করে উলিপুরের সাহেবের আলগা বুড়াবুড়ি হাতিয়া অনন্তপুর হয়ে রৌমারীতে প্রবেশ করে। আরও অগ্রসর হয়ে চিলমারী ও রাজিবপুর উপজেলা অতিক্রম করে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়িতে এসে যমুনা নাম ধারণ করে। আঁকাবাঁকা ও খরস্রোতা হওয়ায় অনেক জায়গায় জেগে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য বালুচর। ভাটিতে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে তা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। এর নাব্য সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নৌরুটগুলো। এবারের প্রচণ্ড খরায় নদ-নদীগুলের পানি শুকিয়ে ধু ধু বালু চরে পরিণত হয়েছে।