আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো যেভাবে

প্রকাশকালঃ ৩১ জুলাই ২০২৩ ০২:১২ অপরাহ্ণ ২৫৩ বার পঠিত
আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো যেভাবে

কারো উপকার স্বীকার করা, তার প্রশংসা করা এবং কাজে-কর্মে প্রতিদান দেওয়ার নামই কৃতজ্ঞতা। বান্দার পক্ষে আল্লাহর ক্ষুদ্রতম কোনো অনুগ্রহেরও প্রতিদান দেওয়া সম্ভব নয়। তবে সে মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও দান স্বীকার করে, তাঁর প্রশংসা করে ও তাঁর আনুগত্য করে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা মুমিনের অপরিহার্য দায়িত্ব।

কৃতজ্ঞতা অপরিহার্য কেন

মুমিনের জীবনে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা অপরিহার্য। কারণ হলো :

১. আল্লাহর নির্দেশ : মহান আল্লাহ বান্দাদের তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কোরো এবং আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং তোমরা কৃতঘ্ন হইয়ো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫২)

২. নেয়ামত বৃদ্ধি পায় : কোনো বান্দা যদি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে আল্লাহ তার প্রতি স্বীয় অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা আদায় করো, আমি অবশ্যই (আমার অনুগ্রহ) তোমাদের বাড়িয়ে দেব। আর যদি কৃতঘ্ন হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৭)


৩. নবী-রাসুলদের বৈশিষ্ট্য : কৃতজ্ঞতা আদায় করা নবী-রাসুলদের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে নবীদের কৃতজ্ঞ বলে প্রশংসা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ইবরাহিম ছিল এক উম্মত, আল্লাহর অনুগত, একনিষ্ঠ এবং সে শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সে ছিল আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ। আল্লাহ তাঁকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাকে পরিচালিত করেছিলেন সরল পথে।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ১২১)

অন্য আয়াতে নুহ (আ.) সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে তাদের বংশধর, যাদের আমি নুহের সঙ্গে আরোহণ করিয়েছিলাম, সে ছিল পরম কৃতজ্ঞ বান্দা।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩)

৪. আদর্শ বান্দার বৈশিষ্ট্য : আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করা ছাড়া কোনো পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারে না। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের আমি যেসব পবিত্র বস্তু দিয়েছি তা থেকে আহার কোরো এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কোরো, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৭২)

৫. মানবপ্রকৃতির দাবি : আল্লাহ মানুষের সেবায় তাঁর অসংখ্য সৃষ্টিকে নিয়োজিত করেছেন। সুস্থ মানবপ্রকৃতির দাবি হলো মানুষ এই বিপুল অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর নিদর্শনাবলির একটি যে তিনি বায়ু প্রেরণ করেন সুসংবাদ দেওয়ার জন্য ও তোমাদের তাঁর অনুগ্রহ আস্বাদন করানোর জন্য; এবং তাঁর নির্দেশে নৌযানগুলো বিচরণ করে, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।’ (সুরা রোম, আয়াত : ৪৬)


যেভাবে কৃতজ্ঞতা আদায় করব

কৃতজ্ঞতা আদায়ের যত পদ্ধতি আছে মুমিন সব পদ্ধতিতে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, বান্দা অন্তর তথা অভ্যন্তরীণ বিনয় ও বিনম্রতার মাধ্যমে, জবান তথা প্রশংসা ও স্বীকারোক্তির মাধ্যমে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তথা আনুগত্য ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। (মাদারিজুস সালিকিন : ২/২৪৬)

১. অন্তরের কৃতজ্ঞতা : বান্দা তাঁর হৃদয় ও মন দিয়ে মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। মুমিন হৃদয়ের বিশ্বাস যেন নিম্নোক্ত আয়াতে ব্যক্ত করা হয়েছে, ‘তোমাদের কাছে যেসব নিয়ামত রয়েছে তা আল্লাহর কাছ থেকে; আবার যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদের স্পর্শ করে তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহ্বান করো।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৫৩)

২. মৌখিক স্বীকৃতি : বান্দা অন্তরে যেমন আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে, তেমন মুখে আল্লাহর অনুগ্রহের স্বীকৃতি দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সে বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন যে খাবার খায় এবং এ জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে অথবা যে পান করে এবং সে জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭৩৪)


৩. কাজে-কর্মে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ : মুমিন তাঁর কর্মকাণ্ড তথা আল্লাহর প্রতি তার আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি বলেছিলাম, হে দাউদ পরিবার, কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তোমরা কাজ করতে থাকো। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ১৩)

৪. কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার প্রার্থনা : মহানবী (সা.) উম্মতকে তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হে মুয়াজ, আমি তোমাকে অসিয়ত করছি, তুমি প্রত্যেক নামাজের পর এই দোয়াটি কখনো পরিহার করবে না : হে আল্লাহ, আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ইবাদতে আমাকে সাহায্য করুন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৫২২)

আল্লাহ সবাইকে তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন