প্রকাশকালঃ
৩১ জুলাই ২০২৪ ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ ৫০৬ বার পঠিত
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে নাশকতা ও সহিংসতার জন্য কয়েক দিন ইন্টারনেটসেবা বন্ধের পর এখনো ধীরগতি রয়েছে। এতে থানায় অনলাইনে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করে সেবাপ্রাপ্তিতে ব্যাঘাত ঘটছে। অনেকেই জরুরি ভিত্তিতে সরাসরি থানায় উপস্থিত হয়ে পুরনো পদ্ধতিতে জিডি করছেন। সেগুলো আবার ইন্টারনেটের গতি পেলে অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে।
কিছু থানায় বিলম্ব হলেও অনলাইন ছাড়া অ্যানালগ পদ্ধতিতে জিডি নেওয়া হচ্ছে না। এতে সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি বাড়ছে এবং জিডির পরিমাণও কয়েক দিন ধরে কমেছে। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রামপুরা, ভাটারা, বাড্ডা, হাতিরঝিলসহ কয়েকটি থানায় সরেজমিনে ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্তরা রাজধানীর বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়ি ও থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
এসব থামানোর সময় অনেক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁরা এখনো চিকিত্সাধীন। জিডিসহ সাধারণ অন্য সেবাগুলো কিছুদিন আগের তুলনায় কমে গেছে। কারণ অনেকেই সহিংসতার আশঙ্কায় এখনো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না। তবে দু-তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতি আরো স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। মঙ্গলবার বিকেলে রামপুরা থানায় কথা হয় তিনজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে। তাঁরা বলেন, ১৯ জুলাই থানায় দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এর পর থেকে থানায় আগের মতো সব কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তবে গুরুত্বের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কাজগুলো আগে করা হচ্ছে।
থানার ওসি (অপারেশন) মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, ‘ইন্টারনেট বন্ধ থাকার সময়ে অনলাইন জিডি বন্ধ। এখন আবার চালু হয়েছে। আশা করছি দু-এক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’ এর আগে দুপুরে বাড্ডা থানায় জিডি করতে আসা একজন নারী জানান, পারিবারিক একটি ঝামেলার বিষয়ে জিডি করা প্রয়োজন। অনলাইনে ইন্টারনেটের গতি কম থাকায় জিডি করতে পারছেন না। তাই সরাসরি থানায় চলে এসেছেন জিডি করতে। এখানে এসেও তাঁকে বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে বাড্ডা থানার ডিউটি অফিসার এসআই মো. জাফর বলেন, ‘আগে স্বাভাবিক সময়ে আমাদের থানায় হারানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে দিনে ১৫০টির মতো জিডি হতো। মূল রাস্তার পাশের থানাগুলোতে তুলনামূলক বেশি জিডি হয়। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় চার-পাঁচ দিন জিডি হয়নি। পরে চালু হলে কয়েক দিন ধরে দিনে প্রায় ১০০ জিডি হচ্ছে।’ হাতিরঝিল থানার ওসি শাহ মো. আওলাদ হোসেন বলেন, ‘ইন্টারনেট মন্থরগতিতে চলছে। এই ইন্টারনেট আছে, এই থাকে না। তাই অনেক সময় আগের মতোই (অ্যানালগ পদ্ধতি) চলছে। পরে এগুলো অনলাইন করে নিচ্ছি। তবে জিডির পরিমাণ কয়েক দিন ধরে কমেছে।’
অন্যদিকে অনলাইন জিডির বিষয়ে সবুজবাগ থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা বলেন, ‘ইন্টারনেটে গতি কম। তাই অনেকে নিজেরা করতে পারছেন না। পরে আমাদের কাছে সেবার জন্য এলে কাউকেই ফিরিয়ে দিচ্ছি না। অনলাইনে নিতে না পারলে পুরনো পদ্ধতিতে নিচ্ছি। তবে সম্প্রতি দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ইন্টারনেটের ধীরগতিতে অনলাইন জিডি কমেছে বলে মনে হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের ২১ জুন থানায় না গিয়ে অনলাইনে জিডি পদ্ধতি চালু করা হয়। সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনলাইন জিডির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এর পর থেকে http://gd.police.gov.bd পোর্টালে ঢুকে যে যেখানেই থাকেন না কেন, সংশ্লিষ্ট থানায় অনলাইনে জিডি করতে পারছেন। জিডির এই কার্যক্রম বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। তবে অনলাইনে জিডি করতে গিয়ে বর্তমানে ইন্টারনেটের ধীরগতি, কখনো আবার একেবারেই সংযোগ না থাকায় অনেকেই ভোগান্তিতে পড়ছেন। থানাগুলোতে কর্মরত অনলাইন জিডির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরাও এই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।