আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
গ্রামীণ সড়কের মাঝে মূল সড়ক থেকে প্রায় ১০ ফুট উচ্চতায় ঠায় দাঁড়িয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের কংক্রিটের সেতু। দুই প্রান্তে ঝোপ জঙ্গল। কিন্তু ছিল না সংযোগ সড়ক। ফলে নির্মাণের ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সুফল পাচ্ছিল না ওই সড়কে চলাচলকারী সাত গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। কয়েকটি গণমাধ্যমে জনভোগান্তি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সড়কটি সংস্কারে উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি সংস্কার শেষে সেতুসহ সড়কটি দিয়ে পথচারী ও যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
সেতুটির অবস্থান কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সদর ও যাদুরচর ইউনিয়েনের মধ্যবর্তী কর্তিমারী বাজার থেকে দুবলাবাড়ি বাজার সড়কের পুরাতন যাদুরচর নামক এলাকায়।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেন রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার হালদার। জনভোগান্তি দূর হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি।
এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় উপজেলার পুরাতন যাদুরচর এলাকার ময়নাল মেম্বরের বাড়ির পাশে ভেঙে যাওয়া সড়কে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে এ সেতু নির্মাণে সরকারের ৩২ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৩ টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণ হলেও এর সংযোগ সড়ক না থাকায় সুফল পাচ্ছিল না এলাকাবাসী। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছিল উপজেলার দুবলাবাড়ি, পুরাতন যাদুরচর, ঝাউবাড়ি,বকবান্ধা, খেওয়ারচর, কাশিয়াবাড়ি ও বাওয়াইর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
জনভোগান্তি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) তত্ত্বাবধায়নে প্রায় ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ সড়কটি মেরামত করা হয়।
পিআইও শামসুদ্দিন বলেন, ‘চলতি অর্থ বছরের কাবিখা প্রকল্প থেকে চার লাখ টাকা এবং এডিবি বরাদ্দ থেকে দুই লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে সেতুটি পথচারীসহ গ্রামীণ যানবাহন চলাচলের জন্য উপযোগী হয়েছে।’
দুবলাবাড়ি এলাকার ভ্যানচালক সমেশ উদ্দিন বলেন, ‘সড়ক চালু হওয়ায় অহন আয় বাড়ছে। গর্ভবতী নারী ও রোগীদের উপকার বেশি হইলো। আগে এই পথে হাঁইটা চলাচল ছাড়া গাড়িতে যাওয়ার উপায় ছিল না। অহন গাড়িতে কইরা সরাসরি উপজেলা সদর যাওন যাইতেছে। মাইনষের খুব উপকার হইলো।’
দুবলাবাড়ি বাজার থেকে ওই সড়ক ধরে মোটরসাইকেলে করে ফিরছিলেন একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ও কাঁঠালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা নয়ন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সেতু হওয়ার পর এই রাস্তায় এই প্রথম মোটরসাইকেলে চলতে পারছি। আগে দুবলাবাড়ি বাজারের যাইতে অনেক দূর ঘুরে যাইতে হইতো। সড়ক মেরামত করে সেতু পারাপারের ব্যবস্থা হওয়ায় দীর্ঘ দিনের ভোগান্তি কমলো। মানুষের যাতায়াত ও মালামাল পরিবহন ব্যয় কমবে। আমরা এলাকাবাসী খুশি।’
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার হালদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জনভোগান্তির বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পরপরই আমরা সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। সম্প্রতি সংস্কার কাজ শেষে সড়ক ও সেতুটি চলাচলের জন্য উপযোগী করে দেওয়া হয়েছে। এতে কয়েকটি গ্রামের মানুষের যোগাযোগ ভোগান্তি নিরসন হলো। উপজেলা প্রশাসন সবসময় মানুষের কল্যাণে পাশে থাকবে।’