খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়

প্রকাশকালঃ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ ১৬৬ বার পঠিত
খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়

খুশকি হচ্ছে মাথার ত্বকের শুকনো, মৃত কোষ। স্বাভাবিক নিয়মে কিছু মৃত কোষ সবার মাথার ত্বকেই থাকে, চোখে পড়ার আগেই সেগুলো ঝরে পড়ে যায়। সমস্যাটা যখন বাড়ে, তখনই তা বাইরে থেকে চোখে পড়ে। চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে বা মাথা চুলকালে জামাকাপড় ভরে যায় খুশকিতে, মাথার তালু চুলকায়, চুলও ওঠে অনেক। সব মিলিয়ে বেশ বিরক্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

খুশকি হওয়ার কারণগুলি কী কী?
বিজ্ঞানীরা বলেন, খুশকির মূল কারণ হচ্ছে ফাঙ্গাল ইনফেকশন। এবং বিউটিশিয়ানরা বলেন যে, অনেক সময় শ্যাম্পু করার পর চুল ভালো করে না ধুলে বা মাথার তালুতে কন্ডিশনার লাগিয়ে ফেললে খুশকির সমস্যা হতে পারে। মৃত কোষে ফাঙ্গাস বা ছত্রাক বংশবৃদ্ধি করতে শুরু করলে সমস্যাটা মাত্রা ছাড়ায়।

অনেকেই অভিযোগ করেন যে, তাদের মাথার ত্বক অতি শুষ্ক বা অতি তৈলাক্ত হওয়ার কারণে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সত্ত্বেও খুশকি পিছু ছাড়ে না কখনোই। যারা মাথার চুলে নিয়ম করে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন না, তাদেরও খুশকির সমস্যা হতে পারে। যারা গরম পানি দিয়ে গোসল করেন, 


তাদের খুশকির সমস্যা বেশি হয়। কিছু মানুষ স্ক্যাল্প সোরিয়াসিসে ভুগে থাকেন। সোরিয়াসিসের কারণেই তাদের মাথার ত্বকে অতিরিক্ত পরিমাণে কোষ তৈরি হয়, আঁশের মতো চামড়া উঠতে শুরু করে। তার উপর ধুলাবালি, স্ক্যাল্পে থাকা সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত তেল মিশে আরও বাড়িয়ে তোলে সমস্যা।

তবে যারা নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খান, সারাদিনে প্রচুর জল পান করেন, শরীরে আপাতদৃষ্টিতে কোনও সমস্যা নেই, তাদের সাধারণত খুশকির সমস্যা খুব বেশি হয় না। তাই সুস্থ জীবনযাপনের উপর জোর দেওয়া উত্তম।


যেভাবে মুক্তি পেতে পারেন খুশকির হাত থেকে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

নিমপাতা 
এক মুঠো নিমপাতার মিশ্রণ তৈরি করে নিন। গোসলের এক ঘণ্টা আগে সেটা মাথায় লাগিয়ে শ্যাম্পু দিয়ে পরে মাথা ভালো করে ধুয়ে নিন। কিংবা এক মুঠো নিমপাতা ভিজিয়ে দিন এক মগ গরম পানিতে। গোসল শেষে মাথা ধুয়ে নিন এই পানিতে। নিমের নিয়মিত ব্যবহার আপনার মাথার তালুর চুলকানি কমাবে, যে ফাঙ্গাসের কারণে খুশকির বাড়ে, সেগুলিকে কমাতে সাহায্য করে।

গ্রিন টি
এক কাপ গ্রিন টি বানিয়ে নিন। তার মধ্যে কয়েক ফোঁটা পেপারমিন্ট এসেনশিয়াল তেল আর এক চা চামচ ভালো মানের সাদা ভিনিগার মিশিয়ে দিন। গোসলের আগে চুল ভিজিয়ে এই মিশ্রণ মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন। তারপর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করে চুলটা ধুয়ে নিতে হবে। 


সঠিক শ্যাম্পু
চুল অপরিষ্কার হলেই ধুয়ে ফেলুন, মাথার তালুতে যেন বাড়তি তেল না জমতে পারে। শ্যাম্পুর ফেনা যেন চুলের ফাঁকে আটকে না থাকে, সেগুলি জমেও খুশকি হয় পরবর্তীকালে। শীতকালে আমাদের স্ক্যাল্পকে শুষ্কতার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য মাথার সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ডগুলি বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে, তাই চুলে বেশি তেলভাব লক্ষ্য করতে পারেন। নিয়মিত শ্যাম্পু ছাড়া একেবারেই চলবেন না এ সময়ে।

নারকেল তেল
নারকেল তেলেরও কিন্তু ফাঙ্গাস তাড়ানোর আর চুলকে খুশকিমুক্ত রাখার ক্ষমতা আছে। 5 টেবিলচামচ নারকেল তেলের সঙ্গে 10 ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিন৷ তার পর মাথার তালুতে ভালো করে মাসাজ করে নিন এই মিশ্রণ৷ পরদিন সকালে মাইল্ড কোনও শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে পারেন৷ হাতে সময় না থাকলে অন্তত আধ ঘণ্টা এই মিশ্রণ মাথায় লাগিয়ে রাখুন৷ টি ট্রি অয়েল বজায় রাখবে চুলের প্রাকৃতিক ঝলমলেভাব৷


লেবুর রস 
লেবুর রসের অ্যাসিড ফাঙ্গাস বিনষ্ট করতে খুব কার্যকর ভূমিকা রাখে। এক কাপ পানিতে একটি লেবুর রস মিশিয়ে শ্যাম্পুর পর চুল ধুয়ে ফেললেও খুব ভালো ফল পাওয়া যায়৷ 

টক দই
গোসলের এক ঘণ্টা আগে টক দই মাথায় খুব ভালো করে লাগিয়ে নিন। তারপর ভালো করে চুল ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন। দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিডের প্রভাবে আপনার চুল হয়ে উঠবে নরম, কোমল ও উজ্জ্বল। নিয়মিত ব্যবহারে খুশকি মুক্ত থাকতে পারবেন।

মনে রাখা জরুরি যে, খুশকি একেবারে গোড়াতেই নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি। কারণ একবার বাড়তে শুরু করতে তার নিরাময় কঠিন হয়ে পড়ে। কেন খুশকি হচ্ছে, সেটা জানার চেষ্টা করুন। যারা স্ক্যাল্প সোরিয়াসিসে ভুগছেন, তারা ডাক্তারের দেওয়া বিধি-নিষেধ মেনে চলুন।