একের পর এক বিধি-নিষেধে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে আফগান নারীরা

প্রকাশকালঃ ২০ আগu ২০২৩ ১২:৪৫ অপরাহ্ণ ১৫৯ বার পঠিত
একের পর এক বিধি-নিষেধে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে আফগান নারীরা

দ্বিতীয় দফায় আফগানিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর দুই বছর পূর্ণ করেছে তালেবান। দায়িত্ব নেওয়ার শুরুতে তাদের প্রতিশ্রুতি ছিল আগের তুলনায় আরো বেশি উদার হবে তারা। নারীদের স্বাধীনতার প্রশ্নে শরিয়া আইন অনুযায়ী পর্দা রক্ষা করে পড়াশোনা ও চাকরির অধিকার থাকবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু বাস্তব চিত্র পুরো উলটো। এই দুই বছরে দেশটিতে সংকুচিত হয়েছে নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অধিকার। একের পর এক বিধি-নিষেধে নারীরা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।

২০ বছর পর ক্ষমতায় এসে নারীদের পর্দা রক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়তে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল তালেবান। কিন্তু এখন অবস্থা এমন যে, নারীদের হাইস্কুল পর্যায়ের শিক্ষার সুযোগ নেই বললেই চলে। ক্ষমতা দখলের পর তালেবান প্রশাসন ১২ বছরের বেশি বয়সি মেয়েদের স্কুলে যাওয়া কার্যত বন্ধ করে দিয়েছে। নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া, চাকরি, এনজিওর কাজ সব কিছুতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তালেবান। পুরুষ অভিভাবক ছাড়াও নারীদের চলাফেরার স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে। পার্ক কিংবা জিমের মতো জায়গায় তাদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত মাসে আফগানিস্তানের সব পার্লার ও বিউটি সেলুন বন্ধ করেছে তালেবান। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অন্তত ৬০ হাজার নারী।


গত দুই বছরে নারীর অধিকার প্রশ্নে কঠোর রক্ষণশীল অবস্থান বিদেশে তালেবান সরকারের ভাবমূর্তিকে খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে। এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত মানবাধিকারকর্মী মাহবুবা সিরাজ মনে করেন, আফগানিস্তানে নারী স্বাধীনতা বলতে আর কিছুই নেই। সমাজ থেকে ধীরে ধীরে মুছে দেওয়া হচ্ছে নারীদের। তাদের মতপ্রকাশ, তাদের কথা, চিন্তা সব কিছুই মুছে দেওয়া হচ্ছে।

আফগান নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কথাও গত মাসে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পারিবারিক নির্যাতন বাড়ছে, জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কয়েদখানার মতো বন্দি জীবন বাড়িয়েছে মানসিক চাপ। হতাশা আর অবসাদে ভুগছেন অনেক নারী। যদিও তালেবানদের অন্যতম মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদের দাবি, নারীদের নিরাপত্তার জন্য এসব করা হচ্ছে। তার মতে, ইসলামি আইন অনুযায়ী তারা নারীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতে কাজ করছেন। নারীরা এখন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুলিশ বিভাগ, পাসপোর্ট অফিস, বিমানবন্দরসহ বহু জায়গায় কাজ করছেন।

তবে কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, বাস্তব অবস্থা মোটেও তেমন নয়। তালেবান শাসনে একজন নারী কেবল অন্য কোনো নারীর কাছ থেকেই স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন। নারীদের উচ্চশিক্ষায় বাধা দেওয়ার ফলে নারী চিকিত্সক তৈরি অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে নারী ডাক্তার-নার্স পাওয়ার পথ কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নারী অধিকার বিভাগের সহপরিচালক হেথার বার এর মতে, তালেবানের এমন নীতির ফলে তাদের চোখের সামনে অনেক নারী অসুস্থ হয়ে পড়ছে, মারাও যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এ নিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ছে তালেবান। নারী বিষয়ক নীতিতে পরিবর্তন আনতে বলেছে জাতিসংঘ। তবে তাতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।


তালেবানদের ক্ষমতায় আসায় নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে নারীদের জীবন। জাতিসংঘের বিশ্ব শিক্ষা দূত গর্ডন ব্রাউন গত সপ্তাহে বলেছেন, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের উদ্দেশ্যে আফগানিস্তানে লিঙ্গ বৈষম্যকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে ঘোষণার করার আহবান জানিয়েছেন। গর্ডন ব্রাউনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তালেবানের ৮০টি অধ্যাদেশের মধ্যে ৫৪টি নারী অধিকার খর্ব করেছে।

মাহবুবা সিরাজ বলেন, আমি আফগানিস্তানে আছি আমার বোনদের পাশে থাকবার জন্য। আমি এখনো আশা হারাইনি। তবে আশা ধরে রাখাটা প্রতিনিয়ত কঠিন হয়ে পড়ছে।