হতাশা থেকে আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়

প্রকাশকালঃ ০৬ জুন ২০২৪ ০১:৪৩ অপরাহ্ণ ৪৭৭ বার পঠিত
হতাশা থেকে আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়

জীবন সবসময় একভাবে চলে না। জয়-পরাজয় মিলেই জীবন। তবে অনেক সময় চলার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় হতাশা। সেই হতাশা কিংবা ডিপ্রেশন থেকে কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন এমন কথা প্রায়ই শোনা যায়। সে মানুষটা চলে যাওয়ার পর তার কাছের মানুষগুলো আক্ষেপ করলেও কিছুই করার থাকে না। কেউ হুট করেই আত্মহত্যার পথও বেছে নেন না। কোনো বিষয়ে হতাশা থেকেই আত্মহত্যার চিন্তা দেখা দেয়। সে সময় নিজেকে একটু সামলে নিলেই জীবন বিসর্জন দিতে হতো না। আত্মহত্যার চিন্তা মনে আসলে কী করা উচিত সে বিষয়ে বলেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান লাইফস্প্রিং এর প্রতিষ্ঠাতা ডা. সাঈদুল আশরাফ কুশল।

 

আত্মহত্যার চিন্তা নিয়ে ডা. সাঈদুল আশরাফ কুশল বলেন, বেশিরভাগ আত্মহত্যার সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক থাকে। বিষণ্নতা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ইত্যাদি মানসিক রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করালে এবং সম্পর্কজনিত জটিলতা, ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।

 

যখন আত্মহত্যার চিন্তা আসবে সে সময়ে কী করা উচিত এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সবার আগে আমাদের বুঝতে হবে কোনোকিছু স্থায়ী না। জীবনে পরাজয় আসলেও সেটা একসময় কেটে যাবে। তার জন্য দরকার ধৈর্য। যখন কোনো ব্যক্তির মনে আত্মহত্যার চিন্তা আসবে সে সময় তাকে সবার প্রথমে নিজেকে শান্ত করতে হবে। কিছু সময় নিয়ে ভাবতে হবে আমার জীবনে এই যে কষ্টটা আছে, এটার সমাধান আছে। হতে পারে এই মুহূর্তে আমি সেটা করতে পারছি না এটা স্বাভাবিক বিষয়। তবে অবশ্যই এর সমাধান আছে।

 

ডা. সাঈদুল আশরাফ কুশল বলেন, আত্মহত্যার চিন্তা আসলে ভাবতে হবে আমি হয়তো পথ খুঁজে পাচ্ছি না। আমার পথের শেষে যে আলো আছে আমি পাচ্ছি না। আমাকে এই অবস্থায় একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমি আত্মহত্যা চিন্তা বাদ দিয়ে মাত্র একটা মাস শেষ চেষ্টা করি দেখি কেউ সাহায্য করতে পারে কিনা। যদি একজন ডাক্তার কিংবা সাইকোলজিস্টের কাছে গিয়ে আমার আশা ভঙ্গ হয়, তাহলে আমি আরও একজন অভিজ্ঞ সাইকোলজিস্টের কাছে যাবো। সমাধানের পথ আমি খুঁজে নেবো।

 

সহজ কথায় আত্মহত্যার চিন্তা আসতেই পারে, আর এই চিন্তা থেকে বের হতে সমস্যার সম্মুখীন হলে একজন অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। শরীরের রোগে চিকিৎসকের কাছে গেলে মনের সমস্যায় মনের চিকিৎসকের কাছে যাওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার, এটা আমাদের বুঝতে হবে। ডা. সাঈদুল আশরাফ কুশল বলেন, আমরা কেউ জানি না মৃত্যুর পরের জীবন কেমন হতে পারে। হয়তো ওই জীবনে আরও কঠিন কিছু অপেক্ষা করছে। আর এই জীবনে কঠোর চেষ্টা করলে ভালো কিছু হতে পারে। যখন একজন মানুষ এই বিষয়টা বুঝতে পারবে, সেটা তাকে সুইসাইড থেকে অনেকাংশে বাঁচিয়ে নেবে।


এমন অনেক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে যখন সেই মানুষটা বেঁচে থাকতে তার বন্ধু, কাছের মানুষ কিংবা পরিবারের সদস্যদের নিজের কষ্টের কথা জানান। তার চলে যাওয়ার পর সেই কথা বলে হা-হুতাশ করে সেই বন্ধু। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। কাছের মানুষটিকে হতাশ হয়ে আত্মহত্যার চিন্তায় ডুবে যেতে দেখলে করণীয় পদক্ষেপ কী হতে পারে জানিয়ে ডা. সাঈদুল আশরাফ কুশল বলেন, একটা মানুষ খুব হতাশায় ডুবেই এমনটা ভাবেন। আর সে তার ভাবনা অনেক সময় কাছের মানুষকে, বন্ধ কিংবা পরিবারের যার সঙ্গে তার সবচেয়ে বেশি ভালো সম্পর্ক তাকে বলেন। এ ক্ষেত্রে যার সঙ্গে সে নিজের হতাশা শেয়ার করবে তার বসে থাকা উচিত না। 


এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, যে সময় শুনবেন আপনার কাছের কেউ হতাশার কথা বলে নিজেকে শেষ করতে চাইছেন, তখনই তাকে বুঝাতে হবে। প্রথমে তাকে জাজ না করে তার কথা শুনতে হবে। এমনকি তাকে কোনো পরামর্শ দেবেন না। অনেক সময় কথা বললে যে হতাশায় আছেন সে একটু হালকা বোধ করেন। তার কথা শোনার পর যদি মনে হয়, সে একটু হালকা হয়েছে, তখন তাকে বলতে হবে আমি তোমাকে একজন সাইকোলজিস্টের কাছে নিয়ে যেতে চাই। তবে কোনোভাবেই বলা যাবে যে তুমি নিজে যাও। যিনি শুনেছেন তিনি তাকে নিজে একজন অভিজ্ঞ সাইকোলজিস্টের কাছে নিয়ে যাবেন। আমি মনে করি এই দুটো করলেই প্রথম অবস্থায় আত্মহত্যার চিন্তা থেকে মানুষটাকে বের হয়ে আসার পথে এক ধাপ এগিয়ে নেয়া যাবে।