কুড়িগ্রামে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব পালনে অনিয়মের অভিযোগ

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৩২ অপরাহ্ণ   |   ৪৩৫ বার পঠিত
কুড়িগ্রামে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব পালনে অনিয়মের অভিযোগ

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:-

 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের (মাউশি) পরিপত্র লঙ্ঘন করে স্কুল শাখার সহকারী শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে। এমন ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বালারহাট আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজে।
 

সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যোগ্য কলেজ শাখার প্রভাষক থাকা স্বত্বেও প্রতিষ্ঠানটিতে ক্ষমতার বলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মনিরুজ্জামান সরকার। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে।
 

তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ দুনীতির নানা অভিযোগ দিলেও মেলেনি সাড়া। তদন্ত কিমিটি হলেও অভিযোগকারীরা জানেন না তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে।
 

২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোলেমান খান সাক্ষরিত এক পরিপত্রে বলা হয়, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় হয় তাহলে সহকারী প্রধান শিক্ষককে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ/ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার অর্পণ করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কর্মরত জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপকদের মধ্যে থেকে জোষ্ঠ্য প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপকদের দায়িত্ব প্রদান করবেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি।
 

এই পরিপত্র জারি হওয়ার পরও বহাল তবিয়তে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছেন মনিরুজ্জামান সরকার। তিনি ২০১৮ সালের জুন মাস থেকে স্কুল শাখার সহকারী শিক্ষক হয়েও প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সব মিলিয়ে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় ৬ বছর ৮ মাস ধরে।
 

জানতে চাইলে বালারহাট আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান সরকার বলেন, ‘আমি ২০১৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছি।
 

পরিপত্রের খ নম্বর ক্লোজে বলা আছে যে গ্রেড ৬-এর জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানে গ্রেড–৬ এর শিক্ষক না থাকায় আমি দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিষ্ঠানের কমিটি নেই। আমরা কমিটি করার জন্য আবেদন করেছি।’
 

প্রতিষ্ঠানটির অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মাসুদুর রহমান  বলেন, ‘মাউসির পরিপত্রের বিধি লঙ্ঘন করে বেআইনিভাবে মনিরুজ্জামান সরকার দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
 

তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। আমরা দীর্ঘদিন ধরে তার প্রতিবাদ করে আসছি। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে লিখিত অভিযোগ করে আসছি কিন্তু কোনো সমাধান হচ্ছে না।’
 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্কুল শাখার শিক্ষক হয়েও তিনি কীভাবে প্রায় ৭ বছর ধরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন তা আমাদের বোধগম্য হয় না। যেখানে পরিপত্রে বলা আছে- কলেজ শাখার সিনিয়র প্রভাষক এই দায়িত্ব পালন করবেন।’
 

তদন্ত কমিটি হয়েছে কিন্তু প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি:
প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম নিয়ে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান কনকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের ২৪ তারিখে তদন্ত কার্যক্রর্মের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের হল রুমে ৪ শিক্ষার্থীর নেওয়া হয় সাক্ষাৎকার। তদন্ত প্রক্রিয়া ঠিক শেষ হলেও এখনো পর্যন্ত দেওয়া হয়নি কোনো তদন্ত প্রতিবেদন। ওই তদন্ত কমিটিতে আরো ছিলেন ফুলবাড়ি উপজেলা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার।

 

তদন্তে সাক্ষাৎকার দেওয়া শিক্ষার্থী সফিউল হায়দায় বলেন, ‘আমরা চার জন শিক্ষার্থী ওই তদন্ত কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে কিছুই জানতে পারিনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে কনক (ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা) ভাইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে কিন্তু তিনি কোনো সদউত্তর দেননি। বলেছেন আবার তদন্ত হবে।’
 

জানতে চাইলে ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান কনক বলেন, ‘হ্যাঁ, অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা একটি তদন্ত কমেটি করে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছি উপজেলা নির্বাহী স্যারের কাছে। কোনো কারণে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়নি।’
 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম বলেন, ‘আমরা একটি তদন্ত কমিটি করেছি, সেই কমিটি তদন্তও করেছে। তারা প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অনিয়মের প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। তবে তিনি যে স্কুল শাখার শিক্ষক হয়েও দীর্ঘদিন ধরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন সেটি সম্পর্কে আমরা অবগত। তবে বিষয়টি নিয়ে একটি মামলাও চলমান। আর স্কুলের কোনো কমিটিও নেই যে তারা নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ করবে। কমিটি গঠন নিয়ে বারবার তাগাদাও দেওয়া হয়েছে।’