কোরআন ও হাদিসে মানুষকে নানাভাবে হাঁটতে উৎসাহিত করা হয়েছে

প্রকাশকালঃ ২২ আগu ২০২৩ ০৩:৪৬ অপরাহ্ণ ২৪০ বার পঠিত
কোরআন ও হাদিসে মানুষকে নানাভাবে হাঁটতে উৎসাহিত করা হয়েছে

সলাম জীবনঘনিষ্ঠ ধর্ম। মানবজীবনের যাবতীয় কল্যাণ ও অকল্যাণের বিষয়ে ইসলামে পূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। যেসব বিষয় মানুষের জন্য উপকারী তা করতে ইসলাম নানাভাবে উৎসাহিত করেছে। যেমন—হাঁটা।

সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন লাভে চিকিৎসকরা প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটার পরামর্শ দেন। কোরআন ও হাদিসে মানুষকে নানাভাবে হাঁটতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

হাঁটার শক্তি আল্লাহর দান
আল্লাহ তাআলা তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে মানুষসহ কিছু প্রাণীকে হাঁটার শক্তি দান করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সব জীব সৃষ্টি করেছেন পানি থেকে, তাদের কতক পেটে ভর দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে চলে এবং কতক চলে চার পায়ে, আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন।

নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৪৫)

হেঁটে চলতেন নবীজি (সা.)। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রাত্যহিক প্রয়োজনে কোথাও গেলে হেঁটেই যেতেন। এমনকি কিছুটা দূরে গেলেও কখনো কখনো হেঁটে যেতেন। যেমন—হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কুবাতে গমন করতেন সাওয়ার হয়ে বা হেঁটে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৬৯৮)

মসজিদ-ই-নববী থেকে প্রায় সোয়া তিন কিলোমিটার দূরে মসজিদে কুবা অবস্থিত। 


পথচলা যখন প্রশংসনীয় কাজ

পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে পথচলা বা হাঁটার প্রশংসা করা হয়েছে। মূলত মানুষের উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে তার পথচলার বিনিময় কেমন হবে। যেমন—

১. সতর্ক করার জন্য পথচলা : মানুষকে সতর্ক করার জন্য পথচলা প্রশংসনীয়। আল্লাহ বলেন, ‘নগরীর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি ছুটে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসুলদের অনুসরণ কোরো।

অনুসরণ কোরো তাঁদের, যাঁরা তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চান না এবং যাঁরা সৎপথপ্রাপ্ত।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ২০-২১)

২. আল্লাহর স্মরণে পথচলা : যেখানে গেলে এবং যে পথে চললে আল্লাহকে স্মরণ হয়, তা প্রশংসনীয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কোরো, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি করো।’ (সুরা জুমা, আয়াত : ৯)

৩. জীবিকার সন্ধানে পথচলা : আল্লাহ জীবিকার সন্ধানে পথচলার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তিনিই তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করে দিয়েছেন। অতএব, তোমরা তার দিগ-দিগন্তে বিচরণ কোরো এবং তাঁর প্রদত্ত জীবনোপকরণ থেকে আহার গ্রহণ কোরো। পুনরুত্থান তো তাঁর কাছেই।’ (সুরা মুলক, আয়াত : ১৫)


হাঁটাহাঁটি ও পথচলা যখন নিন্দনীয়

কখনো পথচলা বা হাঁটা নিন্দনীয়, যখন তা মন্দ উদ্দেশ্যে হয়। যেমন—

১. দোষচর্চা করতে পথচলা : মানুষের দোষ ছড়িয়ে দিতে পথচলা নিন্দনীয়। ‘(অনুসরণ কোরো না) পেছনে নিন্দাকারী, যে একের কথা অন্যের কাছে লাগিয়ে বেড়ায়।’ (সুরা কালাম, আয়াত : ১১)

২. অহংকার প্রকাশের জন্য : মুমিনের পথচলায় অহংকার ও অহমিকা প্রকাশ পায় না। ইরশাদ হয়েছে, ‘ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ কোরো না; তুমি কখনোই পদভরে ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বতপ্রমাণ হতে পারবে না।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৭)


ইসলাম যেভাবে হাঁটতে উৎসাহিত করে

ইসলাম মানুষকে হাঁটতে নানাভাবে উৎসাহিত করেছে। নিচে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো—

১. হেঁটে জুমায় অংশগ্রহণ : আউস বিন আউস সাকাফি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘...যে ব্যক্তি জুমার জন্য বাহনে চড়ে নয়, বরং হেঁটে মাসজিদে যাবে এবং কোনোরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের কাছে বসে খুতবা শুনবে, তার প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নত হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সে এক বছর রোজা পালন ও রাতভর নামাজ আদায়ের সওয়াব পাবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)

২. আল্লাহর পথে পায়ে ধুলা মাখা : আবু আবস (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির দুই পা আল্লাহর পথে ধূলি-ধূসরিত হয়, তা জাহান্নামের জন্য হারাম হয়ে যায়।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩১১৬)। হাদিসে ধূলি-ধূসরিত শব্দটি হাঁটার প্রতি ইঙ্গিত দেয়।

৩. বেশি পথ অতিক্রম করে মসজিদে আসা : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, বনু সালিমা গোত্রের লোকজন মসজিদ-ই-নববীর কাছে এসে ওই খালি স্থানে বসতি স্থাপনের ইচ্ছা করল। মসজিদ-ই-নববীর পাশে কিছু খালি জায়গা ছিল। বিষয়টি নবী (সা.) অবগত হলে তিনি তাদের বললেন, হে বনু সালিমা গোত্রের লোকেরা! তোমরা তোমাদের বর্তমান ঘরবাড়িতেই থাকো। নামাজের জন্য মসজিদে আসতে তোমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ লিখিত হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৬৫)

৪. হেঁটে তাওয়াফ করা : ইসলামী শরিয়ত হেঁটে তাওয়াফ করার নির্দেশ দিয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কায় আগমন করলেন, তখন তিনি প্রথমে মসজিদে (হারামে) প্রবেশ করে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করলেন। এরপর এর ডান দিকে গেলেন এবং তিনবার রমল করলেন এবং চতুর্থবার স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাওয়াফ করলেন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৯৪৯)

৫. সাফা ও মারওয়ায় হাঁটা : হজের গুরুত্বপূর্ণ বিধান সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সায়ি করা তথা হাঁটা। হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন সাফা থেকে অবতরণ করতেন তখন (স্বাভাবিক) হাঁটতেন, এমনকি তাঁর পদদ্বয় উপত্যকার নিম্নভূমিতে অবতরিত হলে তিনি সায়ি করে তা পার হতেন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৯৮১)

৬. লাশের সঙ্গে হাঁটা : একাধিক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিরা লাশের সঙ্গে হেঁটে কবরস্থানে যেতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁদের মধ্যম গতিতে পথচলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (সুনানে আবি দাউদ, ৩১৮০-৩১৮২)

৭. অন্যের চলার পথ সুগম করা : মুমিন শুধু নিজে হাঁটবে না, বরং অন্যের হাঁটার পথও সুগম করবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় রাস্তায় একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখতে পেয়ে তা সরিয়ে ফেলল। আল্লাহ তাআলা তার এই কাজ সাদরে কবুল করে তার গুনাহ মাফ করে দিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৫২)

আল্লাহ সবাইকে ইসলাম মেনে চলার তাওফিক দিন। আমিন।