বুধবার (২৭ আগস্ট) সিআইডির মহাপরিচালক মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়েরের অনুমোদন দেন। আজ কিংবা আগামীকাল বনানী থানায় মামলাটি রুজু হওয়ার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, একই অভিযোগে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সিন্ডিকেটের মূল হোতা হিসেবে পরিচিত বায়রার সাবেক মহাসচিব ও ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার রুহুল আমিন স্বপন। এ ছাড়া তিন সাবেক সংসদ সদস্য, তাদের স্ত্রী ও মেয়ে– যাদের নামে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স রয়েছে।
তালিকায় আছেন—
স্নিগ্ধা ওভারসিস লিমিটেডের কর্ণধার সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী,
ফাইভএম ইন্টারন্যাশনালের মালিক সাবেক লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, তার স্ত্রী জেসমিন মাসুদ ও মেয়ে তাসনিয়া মাসুদ,
আহম্মেদ ইন্টারন্যাশনালের মালিক সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদ,
সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামাল।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই তারা সবাই আত্মগোপনে আছেন। জানা গেছে, আ হ ম মুস্তফা কামাল বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন।
২০ আগস্ট আদালতের আদেশে রুহুল আমিন স্বপনের প্রায় ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর বসুন্ধরা, উত্তরা ও বনানীতে প্রায় ২৩১ কাঠা জমি রয়েছে।
সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠিয়ে লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও তার সহযোগীরা অন্তত ১০০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই অর্থের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—
সালাউদ্দিন মোরশেদ ভূঁইয়া, নূর মোহাম্মদ আব্দুল মুকিত, মেহবুবা আফতাব সাথী (ফাইভএম ইন্টারন্যাশনাল), কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুল (আদিব এয়ার ট্রাভেল), সায়েম মোহাম্মদ হাসান (আগা ইন্টারন্যাশনাল), মনসুর আহম্মেদ কালাম (আকাশ ভ্রমণ), শাহ জামাল মোস্তফা (আমিয়াল ইন্টারন্যাশনাল), এম এম সোবহান ভূঁইয়া হাসান (বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল), রফিকুল ইসলাম (ব্রাদার ইন্টারন্যাশনাল), রেহেনা আঞ্জুমান হাই (গ্রিনল্যান্ড ওভারসিস), লিনা রহমান (ঐশী ইন্টারন্যাশনাল), মোহাম্মদ আলী সরকার (সরকার ইন্টারন্যাশনাল), রাসেদ আবেদীন (এসওএস ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসেস), আবুল বাশার (আল রাবেতা ইন্টারন্যাশনাল), মোহাম্মদ শাহ আলম চৌধুরী (বেসিক পাওয়ার অ্যান্ড কেয়ার ওভারসিস), মো. আসলাম খান (দেশারী ইন্টারন্যাশনাল), মো. ইউসুফ নবী (ইস্ট ওয়েস্ট প্যারাডাইস), মাজহারুল ইসলাম (পাথ ফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল), মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম (আইএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স), মোহাম্মদ সোহেল রানা (জেজি আলফালাহ ম্যানেজমেন্ট), রাজিব আহম্মেদ (কিসওয়া এন্টারপ্রাইজ), গোলাম মোস্তফা (প্রান্তিক ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম), আলমগীর কবির (আরআরসি হিউম্যান রিসোর্স), রাকিবুল ইসলাম শাহিন (মুবিন এয়ার ইন্টারন্যাশনাল), মো. রাশেদ খান (আল হেরা ওভারসিস) এবং এস এম রফিক (ইউনাইটেড এক্সপোর্ট লিমিটেড)।
তদন্তে জানা গেছে, সিন্ডিকেট ভুক্ত এজেন্সিগুলো ২০১৬ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার ৩৭২ কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে। সরকার নির্ধারিত খরচ ছিল জনপ্রতি ৭৮,৯৯০ টাকা, কিন্তু বাস্তবে দেড় লাখ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অজুহাতে আরও ৩০-৪০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে। এতে কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে তদন্তে বেরিয়েছে।
অভিবাসন বিষয়ক ২৩টি সংগঠনের জোট বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ফর মাইগ্রেন্টস (বিসিএসএম) ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, অভিযুক্তদের কোনোভাবেই দায়মুক্তি দেওয়া যাবে না, বরং পুনঃতদন্ত ও বিচারিক তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।
একইসঙ্গে মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম মালয়েশিয়াকিনি জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার মালয়েশিয়ার অনুরোধে এ বিষয়ে তদন্ত স্থগিত করতে সম্মত হয়েছিল। এ খবরে আরও উদ্বেগ বেড়েছে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ঘিরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা লুটপাট ও শ্রমিক শোষণের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা ও রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের বিরুদ্ধে এবার দায়মুক্তির বদলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পথে এগোচ্ছে সিআইডি।