শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যুবদল–ছাত্রদলের তাণ্ডব, চিকিৎসকসহ আহত ৪

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:২৪ অপরাহ্ণ   |   ৩৭ বার পঠিত
শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যুবদল–ছাত্রদলের তাণ্ডব, চিকিৎসকসহ আহত ৪

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক মর্মান্তিক ঘটনার জেরে মঙ্গলবার রাতে তাণ্ডব চালিয়েছে একদল যুবক। সড়ক দুর্ঘটনায় যুবদল কর্মীর শিশুপুত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাত ৮টার দিকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কে অবস্থিত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ছিলেন। তাদের হামলায় চিকিৎসক আবদুল আজিজ, ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আব্দুর রহমান এবং তাঁর গাড়িচালক নুরুজ্জামান আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
 

ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। উপজেলার শ্রীফলকাঠি এলাকায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবদল কর্মী রাহিম ইসলামের তিন বছরের ছেলে নিশাত গুরুতর আহত হয়। তাঁকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। কিন্তু শিশুটির মাথার খুলি ভেঙে মগজ বের হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে সাতক্ষীরায় রেফার করেন। পথে খানপুর এলাকায় শিশুটির মৃত্যু হলে স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্সসহ আবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফিরে আসেন।
 

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, এরপরই ১০–১২টি মোটরসাইকেলে করে ২৫–৩০ জন যুবক জরুরি বিভাগে প্রবেশ করে চিকিৎসক আবদুল আজিজের ওপর হামলা চালায়। এ সময় উপস্থিত জামায়াত নেতা আব্দুর রহমান চিকিৎসককে রক্ষা করতে গেলে তিনিও আক্রান্ত হন। তাঁদের বাঁচাতে এগিয়ে আসা গাড়িচালক নুরুজ্জামানও মারধরের শিকার হন।
 

চিকিৎসক আবদুল আজিজ বলেন, “শিশুটির অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর ছিল। মাথার হাড় ভেঙে মগজ বের হয়ে গিয়েছিল। উপজেলা হাসপাতালে এমন রোগীর চিকিৎসা সম্ভব নয়, তাই সাতক্ষীরায় রেফার করা হয়। পরে হঠাৎই একদল লোক আমার ওপর হামলা চালায়।”
 

জামায়াত নেতা আব্দুর রহমান জানান, “চিকিৎসককে মারধর শুরু করলে আমি দায়িত্ববোধ থেকে তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা করি। তখন আমিও আক্রান্ত হই, পরে আমার গাড়িচালক নুরুজ্জামানও হামলার শিকার হন।”
 

অন্যদিকে রাহিম ইসলামের এক স্বজন আব্দুল্লাহ দাবি করেন, “আমরা ডাক্তারকে শিশুটির অবস্থা দেখে এখানেই চিকিৎসা করতে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি রেফার করায় শিশুটি পথে মারা যায়। এরপর কিছু আত্মীয়–স্বজন ক্ষুব্ধ হয়ে আচরণ করেছিল, তবে আমরা মারামারি ঠেকানোর চেষ্টা করি।”
 

উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সোলায়মান কবির বলেন, “এই ঘটনায় বিএনপির কেউ জড়িত নয়। ভিডিও ফুটেজেও আমাদের কোনো কর্মীকে দেখা যায়নি। তারপরও কেউ জড়িত থাকলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
 

শ্যামনগর থানার ওসি মো. হুমায়ূন কবির জানান, হামলায় জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, “হামলার সময় হাসপাতালে রোগী ও চিকিৎসকরা চরম আতঙ্কে ছিলেন। চিকিৎসকরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হবে।”