অনলাইন ডেস্ক:-
ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তেকে ম্যানিলা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর, মঙ্গলবার তিনি হংকং থেকে দেশে ফেরার পরপরই ম্যানিলা বিমানবন্দরে পৌঁছালে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। রয়টার্স এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দুতার্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দুতার্তে তার শাসনামলে অবৈধ মাদক দমন অভিযানের নামে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালান, যা গণহত্যার শামিল। আদালত এই অভিযোগের তদন্ত করবে।
আইসিসি ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এই সময়কালে দুতার্তে ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ডাভাওয়ের মেয়র এবং পরে দেশের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, এই সময়ের মধ্যে তার নির্দেশেই বিপুলসংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
২০১৯ সালে দুতার্তে ফিলিপাইনকে রোম সংবিধি থেকে প্রত্যাহার করে নেন, যা আইসিসির আওতায় থাকা দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি। মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, তিনি তার বিরুদ্ধে আনিত গণহত্যার অভিযোগ এড়ানোর জন্যই এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ২০২১ সালে তার প্রশাসন আইসিসির তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত করার চেষ্টা করে এবং যুক্তি দেয় যে, ফিলিপাইনের নিজস্ব আদালতই এসব অপরাধের তদন্ত করছে। সে সময় দুতার্তে দাবি করেছিলেন যে, আইসিসি শুধুমাত্র তখনই হস্তক্ষেপ করতে পারে যখন কোনো দেশের নিজস্ব বিচারব্যবস্থা ব্যর্থ হয়।
২০২৩ সালে আইসিসির আপিল বিভাগ দুতার্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ পুনরায় তদন্ত করার অনুমতি দেয় এবং তার প্রশাসনের আপিল খারিজ করে দেয়। হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত শুধুমাত্র তখনই কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে, যখন সংশ্লিষ্ট দেশ গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক থাকে।
২০২২ সালে দুতার্তের স্থলাভিষিক্ত হওয়া প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র আইসিসির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো উদ্যোগ নেননি। তবে তার প্রশাসনের সঙ্গে দুতার্তের সম্পর্ক অত্যন্ত শীতল ছিল। তার কার্যালয় থেকে আগেই জানানো হয়েছিল, যদি আইসিসি ইন্টারপোলের মাধ্যমে দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করতে রেড নোটিশ পাঠায়, তাহলে ফিলিপাইন সরকার সহযোগিতা করবে।
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের যোগাযোগ দপ্তর নিশ্চিত করেছে, আইসিসি ম্যানিলা ইন্টারপোলকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানোর পরই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মঙ্গলবার দুতার্তে যখন হংকং থেকে ম্যানিলায় নামেন, তখনই তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।