শত বছরেও আরেকজন বেগম রোকেয়া সৃষ্টি করতে না পারা আমাদের দুর্ভাগ্য: ড. ইউনূস

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০২:৩৯ অপরাহ্ণ   |   ৩৮ বার পঠিত
শত বছরেও আরেকজন বেগম রোকেয়া সৃষ্টি করতে না পারা আমাদের দুর্ভাগ্য: ড. ইউনূস

গত ১০০ বছরে আরেকজন বেগম রোকেয়া সৃষ্টি না হওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ১০০ বছরে কতটা অগ্রসর হয়েছি? রোকেয়া সাংঘাতিক রকমের স্বপ্ন দেখেছেন, ওই আমলে, ওই পরিসরে। আজকে মনে হয় সুন্দর কথা বলেছেন, সুন্দর কথা না, বিপ্লবী কথা।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।


প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমরা ১০০ বছর পরেও আরেকজন রোকেয়া সৃষ্টি করতে পারি নাই। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। তিনি যেসব দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, যেসব স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন, সেই স্বপ্নকে আমরা আমলে আনতে পারি নাই। কথা বলেছি, অগ্রসর হতে পারি নাই।

তিনি বলেন, আজকে তার জন্ম উপলক্ষে যে আয়োজন, সেটা শুধু তাকে স্মরণ করার জন্য না; আমাদের ব্যর্থতাগুলো খুঁজে বের করার জন্য। কেন আমরা ব্যর্থ হলাম? কেন এই ১০০ বছরেও আরও বেগম রোকেয়া এলো না আমাদের মাঝখানে? যে আমাদের পথ দেখাতো, এগিয়ে নিয়ে যেতো, ধাক্কা দিতো, মনে করিয়ে দিতো কোন পথে আমাদের যাওয়া দরকার। ১০০ বছর পরে কী হলো? কত অগ্রসর হলাম?

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রোকেয়া স্বপ্ন দেখেছে, সাংঘাতিক রকমের স্বপ্ন; এরকম স্বপ্ন মানুষ দেখতে পারে সে আমলে—যে পরিসরে, সেটা বিশ্বাস করা যায় না। আজকে মনে হয় যে—হ্যাঁ, এটা তো সুন্দর কথা বলছে। সুন্দর কথা না; বিপ্লবী কথা। সমস্ত সমাজকে ঝাঁকুনি দিয়ে কথা, কিন্তু সে ঝাঁকুনি বহন করে নিয়ে যাওয়ার লোক আর আসলো না। এটি হলো দুর্ভাগ্য।

তিনি বলেন, কীভাবে আমরা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি। বেগম রোকেয়াও নিজেকে নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকতে পারত, তার বহু কাজ ছিল। কিন্তু কোনো কাজের মধ্যে সে সমাজকে বাদ দিয়ে করেনি। সবসময় সমাজকে নিয়েই করেছে।
তিনি আরও বলেন, তার যে কল্পনা শক্তি তার সাহিত্যে সে প্রকাশ করেছে; যে ভবিষ্যৎ চিন্তা সে করেছে, একটা বাক্য দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। বলছে যে, নারী কন্যাদের লেখাপড়া শেখাও—যাতে তার অন্ন উপার্জন করতে পারে। সে ১০০ বছর আগের কথা, ১৫০ বছর আগের কথা; অন্ন অর্জন করতে পারে।

নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার পথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বেগম রোকেয়া চাকরি করার কথা বলেননি। আজকে আমরা বলছি—উদ্যোক্তা হতে হবে, এই হতে হবে; সে বহু কাল আগে এটা বলে চলে গেছেন। সেখান থেকে আমরা শিখতে পারছি না কেন? উৎসব করছি, সব করছি। কিন্তু শিখতে পারছি না।

বেগম রোকেয়া ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩২ সালের একই তারিখে কলকাতায় তিনি মারা যান।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা নারীর শিক্ষা ও অধিকার, মানবাধিকার এবং নারী জাগরণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে চার বিশিষ্ট নারীর হাতে বেগম রোকেয়া পদক তুলে দেন। পদকপ্রাপ্তরা হলেন- নারীশিক্ষায় (গবেষণা) রুভানা রাকিব, নারী অধিকারে (শ্রম অধিকার) কল্পনা আক্তার, মানবাধিকার ক্যাটাগরিতে নাবিলা ইদ্রিস এবং নারী জাগরণে (ক্রীড়া) ঋতুপর্ণা চাকমা।