যিনি শয়তানের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি

প্রকাশকালঃ ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ ২০১ বার পঠিত
যিনি শয়তানের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি

নন্দ ও দুঃখ নিয়ে মানুষের দাম্পত্য জীবন। নানা কারণে অনেক সময় স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক মনোমালিন্য দেখা যায়। অনেকে সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে উভয়ের মধ্যে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করে। এ ধরনের কাজ শয়তান সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে।

তাই পরস্পরের বোঝাপড়ার মাধ্যমে এ দূরত্ব কমানো চাই। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করো এবং তোমাদের মধ্যে হৃদ্যতা ও ভালোবাসা তৈরি করেছেন, নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা : রুম, আয়াত : ২১)

বৈবাহিক জীবনে স্থিতিশীলতা ও পারস্পরিক সুসম্পর্ক অর্জন করাই ইসলামী শরিয়তের অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই নারী ও পুরুষের দ্বন্দ্বের মীমাংসা করা ও সমঝোতায় এগিয়ে যাওয়া অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কেউ আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখলে সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। তোমরা নারীদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে সদাচরণ কোরো। কারণ তাদের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের সবচেয়ে বেশি বাঁকা বস্তু হলো এর ওপরের অংশ।


তুমি তা সোজা করতে গেলে তা ভেঙে ফেলবে। আর আপন অবস্থায় রেখে দিলে তা সর্বদা বাঁকা থাকবে। অতএব তোমরা নারীদের সঙ্গে সদাচরণ কোরো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৮৬)

মানুষ হিসেবে সব কাজ সবার পছন্দের নয়। কারো কোনো আচার-ব্যবহার পছন্দের হলে অন্য আচরণ অপছন্দ হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ যেন কোনো মুমিন নারীকে (স্ত্রী) ঘৃণা না করে। (স্বামী) তার (স্ত্রীর) কোনো একটি আচরণ অপছন্দ করলে অন্য আচরণকে পছন্দ করবে; (মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৯)


অন্য হাদিসে পরিবারের কাছে যে ব্যক্তি তাকে সর্বোত্তম ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজ পরিবারের কাছে উত্তম। আর তোমাদের মধ্যে আমি আমার পরিবারের কাছে সবচেয়ে বেশি উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬২১)

একদিন ফাতেমা (রা.)-এর সঙ্গে তাঁর স্বামী আলী (রা.)-এর মনোমালিন্য হয়। তখন রাসুল (সা.) জামাতার খোঁজ-খবর নিতে ঘর থেকে বের হন এবং মসজিদে এসে জামাইকে আদর-যত্ন করেন। সাহাল বিন সাআদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, একদিন রাসুল (সা.) তাঁর মেয়ে ফাতেমা (রা.)-এর ঘরে এলেন। কিন্তু তাঁর ঘরে আলী (রা.)-কে পেলেন না। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার চাচাতো ভাই কোথায়? ফাতেমা (রা.) বললেন, আমার সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদ হওয়ায় তিনি আমার সঙ্গে রাগ করে বেরিয়ে গেছেন। 


আমার কাছে দুপুরে বিশ্রামও করেননি। তখন রাসুল (সা.) এক ব্যক্তিকে বললেন, ‘দেখো, সে কোথায় আছে?’ সেই ব্যক্তি খোঁজ নিয়ে বলল, তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। অতঃপর রাসুল (সা.) এসে দেখলেন, আলী (রা.) শুয়ে আছেন। তাঁর শরীরের এক পাশের চাদর পড়ে গেছে এবং তাতে মাটি লেগে আছে। রাসুল (সা.) তাঁর শরীরের মাটি ঝেড়ে দিয়ে বললেন, ‘ওঠো, হে আবু তুরাব (মাটির সন্তান)। ওঠো, হে আবু তুরাব (মাটির সন্তান)’। (বুখারি, হাদিস : ৪৪১)

অপরদিকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ ও সংঘাত সৃষ্টি করা অত্যন্ত নিকৃষ্ট ও গর্হিত কাজ। মূলত প্রতিহিংসা ও অর্থলিপ্সা থেকে মানুষ এভাবে অন্যের ক্ষতি সাধন করে। হাদিসে এসেছে, জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ইবলিস পানির ওপর তার আরশ স্থাপন করে মানুষের মধ্যে তার বাহিনীকে ছড়িয়ে দেয়। তাদের মধ্যে শয়তানের কাছে বেশি মর্যাদাবান সে, যে সবচেয়ে বেশি ফেতনা সৃষ্টি করে। তাদের একজন এসে বলে, আমি অমুক অমুক কাজ করেছি। সে বলে, তুমি কিছু করোনি। 

অতঃপর অন্যজন এসে বলে, অমুকের সঙ্গে আমি অমুক কাজ করেছি। এক পর্যায়ে আমি তাকে ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিভক্তি তৈরি না করে ছাড়িনি। অতঃপর শয়তান তাকে তার কাছে নিয়ে আসে। আর বলে হ্যাঁ, তুমি অনেক বড় কাজ করেছ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৮১৩)