বিএনপির সমালোচনা করলেও আলোচনায় বসতে চায় জামায়াত

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ০১:১৭ অপরাহ্ণ   |   ৩৭ বার পঠিত
বিএনপির সমালোচনা করলেও আলোচনায় বসতে চায় জামায়াত

জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোটের সময়সূচি নিয়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্য বিএনপিকে দায়ী করলেও আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, “বিএনপির সঙ্গে কোনো সংঘাতে যেতে চায় না জামায়াত; বরং দেশের স্বার্থে আলোচনায় বসতে চায়।”
 

রোববার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “রাজনীতিতে অনেক খেলা আছে, কিন্তু জামায়াত খেলায় নয়, সমাধানে বিশ্বাসী।” তিনি জানান, সোমবার দলীয় বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে।
 

বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা আপাতত সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে আহ্বান জানাচ্ছি। দেখি, বিএনপি কী প্রতিক্রিয়া দেখায়।”
 

ডা. তাহের আরও বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হোক, তা আমরা চাই। তবে নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট হওয়া জরুরি। গণভোটে সব দল একমত, কিন্তু বিএনপি নির্বাচনের দিনেই গণভোট চায়, যা সম্পূর্ণ অবাস্তব।”
 

গত ১৭ অক্টোবর সাত মাসব্যাপী সংলাপের পর প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এ সই করে। এতে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিএনপি এতে কয়েকটি বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেয় এবং নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনের দাবি জানায়।
 

জামায়াত এই অবস্থানের বিরোধিতা করে জানায়, গণভোটে জনগণের রায়ই চূড়ান্ত হবে। ডা. তাহের বলেন, “বিশ্বের কোথাও ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ গণভোটের নজির নেই। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে বিএনপিকে আলোচনায় আসতে হবে। জনগণ ঐক্য ও সংকটের অবসান চায়।”
 

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “যারা আজ জামায়াত নিষিদ্ধের কথা বলছেন, তারা যেন মনে রাখেন—১৯৯১ সালে জামায়াতের সমর্থন ছাড়া বিএনপি কি ক্ষমতায় যেতে পারত? তখন জামায়াতই তাদের সরকার গঠনে সহায়তা করেছিল। আজ সেই দল অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দিচ্ছে।”
 

সনদ স্বাক্ষরের পর প্রতারণার অভিযোগও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। বলেন, “জামায়াত প্রতারণা বা ধোঁকার রাজনীতি করে না, বিএনপিই করে। মহাসচিব স্বাক্ষর দেওয়ার পর এখন জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন।”
 

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
 


‘সনদের বিরোধিতা মানেই ফ্যাসিবাদের চিন্তা’

এর আগে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত আয়োজিত সেমিনারে ডা. তাহের বলেন, “জুলাই সনদের বিরোধিতা মানে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চিন্তা। এক ব্যক্তির হাতে অগাধ ক্ষমতা মানেই একনায়কতন্ত্রের পথে যাত্রা।”
 

তিনি সমালোচনা করেন নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট একসঙ্গে করার দাবিরও। বলেন, “বিএনপি শহীদদের রক্তের চেয়ে তিন হাজার কোটি টাকার ব্যয়কে বেশি দামি মনে করছে। টাকা নয়, শহীদদের ত্যাগই আমাদের কাছে মূল্যবান।”
 

তিনি আরও বলেন, “নভেম্বরে গণভোট আয়োজনেই শহীদদের রক্তের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে। বিএনপিকে এই উদ্যোগে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। সংস্কার বাস্তবায়ন না হলে ড. ইউনূস শূন্যে পরিণত হবেন।”
 

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা দক্ষিণ জামায়াতের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল। এতে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, জাগপার সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, কর্নেল (অব.) জাকারিয়া ও নয়া দিগন্তের সম্পাদক সালাউদ্দিন বাবর প্রমুখ।