ব্যাংকঋণের সুদহার বাজারভিত্তিক হবে, তবে উন্মুক্ত হবে না
প্রকাশকালঃ
২১ মার্চ ২০২৩ ০৩:২৯ অপরাহ্ণ ২২০ বার পঠিত
ব্যাংকঋণের সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে একেবারে উন্মুক্ত না করে সরকারি ট্রেজারি পণ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত রেখে সুদহার নির্ধারণের কৌশল নেওয়া হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হলো ব্যাংকঋণের সুদহার যেন একবারে হঠাৎ বেড়ে না যায়। এখন ব্যাংকঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ।
পাশাপাশি নীতিনির্ধারণী সুদহার—রেপো ও রিভার্স রেপোর সুদহার নির্ধারণেও নতুন কৌশল নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর কল মানি সুদহারকে রেপো সুদহারের মধ্যে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুলাই মাস থেকে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকরের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। আগামী জুনে মুদ্রানীতি ঘোষণায় সুদহারসংক্রান্ত এই নির্দেশনা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। বিষয়গুলো চূড়ান্ত হলে এবং সরকারের উচ্চপর্যায় ইতিবাচক সাড়া দিলে এর আগেই এই বিষয়ে নির্দেশনা আসতে পারে বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য যে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে, তাতে এসব সংস্কার আনার শর্ত দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুলাইয়ের মধ্যে একটি সুদহার করিডরব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সুদহার করিডর এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সুদহারের বেঁধে দেওয়া সীমা ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহারে পরিচালনভিত্তিক পরিবর্তন করা যায়।
কীভাবে কাজ করবে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হবে সরকারি বিল বা বন্ডের সঙ্গে মিল রেখে। যেমন এক বা দুই বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ১ বা ২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিতে পারবে ব্যাংক।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, এমন একটি সরকারি ট্রেজারি পণ্য নির্ধারণ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যার সুদহার চাহিদা ও জোগানোর সঙ্গে ওঠানামা করে। তবে এমন পণ্য বেছে নেওয়া হবে, যাতে ঋণের সুদহার বর্তমানে প্রচলিত ৯ শতাংশের খুব বেশি না হয়। এর মাধ্যমে সুদহার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ, বন্ডের সুদ বাড়লে ঋণের সুদ বাড়বে।
২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংকঋণের সুদহার ৯ শতাংশে আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমানতের সুদহার বাড়ালেও ঋণের সুদ বাড়াতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এর ফলে অনেক ব্যাংক তারল্যসংকটে পড়ে গেছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক যে পদ্ধতিতে ব্যাংকগুলোকে টাকা ধার দেয়, সেই রেপোর সুদহার নির্ধারণেও নতুন পদ্ধতি চালু করা হবে। আবার ব্যাংকগুলো থেকে যে পদ্ধতিতে টাকা তুলে নেয় (রিভার্স রেপো) কেন্দ্রীয় ব্যাংক, তা–ও বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে। এর ফলে নীতি সুদহার নির্দিষ্ট না রেখে ঋণের সুদহারের মতো একইভাবে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
অন্যদিকে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংক যে টাকা ধার নেয়, সেই কল মানিতে সুদহার নির্ধারিত হবে রেপোর সঙ্গে মিল রেখে। কল মানি সুদ হবে রেপো সুদহারের কম।
এখন রেপো সুদহার ৬ শতাংশ। আর কল মানিতে সুদহার গত রোববার ছিল সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ শতাংশ। এর উদ্দেশ্য, এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে এখন যে উচ্চ সুদহারে টাকা ধার করছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনা। এর মাধ্যমে সুদহারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রথম আলোকে বলেন, আগামী জুনে যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে, সেখানে সুদহারের বিষয়ে ঘোষণা থাকবে। কোন পদ্ধতি চালু করলে কম প্রভাব পড়বে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। যেটা উপযোগী মনে হবে, তাই কার্যকর করা হবে। তবে এমন ঘোষণা থাকবে না, যাতে সুদহার হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যায়।
আইএমএফের শর্ত মেনে নিতে এই উদ্যোগ, নাকি বাজার চাহিদার কারণে, এই প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, আমানতের সুদহার বেড়ে গেছে। তবে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ বাড়াতে পারছে না। এই কারণে বাজারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে সুদহার নির্ধারণের পদ্ধতি চালু করা হবে।