কারফিউ শিথিল, তীব্র যানজটে কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি
প্রকাশকালঃ
২৮ জুলাই ২০২৪ ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ ৯৩ বার পঠিত
চলমান কারফিউয়ের অষ্টম দিনে গতকাল শনিবার রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে অনেকের তিন ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগেছে। সড়কের পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার পাশাপাশি যানজটে কর্মজীবী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতেও।
গত কয়েক দিনের তুলনায় গতকাল সড়কে গণপরিবহনের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে এখনো ট্রেন চলাচল শুরু না করলেও দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। ক্রমে বাড়ানো হচ্ছে অফিসের কর্মঘণ্টা। আজ রবিবার থেকে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত তিন দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত অফিসের সময়সূচি নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
গত রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, আজ রবিবার থেকে তিন দিন ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে।এদিকে কারফিউয়ের মধ্যে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের কোথাও কোনো ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। সার্বিক পরিস্থিতি ছিল পুরোপুরি স্বাভাবিক। তবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গত কয়েক দিনের মতো গতকালও সড়কের মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের চেকপোস্ট।
বিকেল ৫টার পর আবারও কারফিউ শুরু হলে সেনাবাহিনী সড়কের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে বেশ কিছুদিন সারা দেশে দুর্বৃত্তরা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশে জারি করা হয় কারফিউ। তবে চলমান এই কারফিউয়ের সময় ক্রমে শিথিল করা হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি দেখা গেছে।
গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর কোথাও কোনো সংঘাত-সহিংসতা ঘটেনি। সার্বিক পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। অফিস খুলে দেওয়ায় সড়কে বিপুলভাবে বেড়েছে যানবাহন। সার্বিক পরিবেশ ছিল শান্ত। বেশির ভাগ ফুটপাতের দোকান ছিল খোলা। সাধারণ মানুষ অনেকটা ভয়হীন ও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করেছেন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীর পথে পথে তল্লাশি চালানো হয়। কারফিউ বহাল থাকায় সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে। সব মিলে বেশির ভাগ এলাকা ছিল শান্তিপূর্ণ। সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
তীব্র যানজট
গতকাল রাজধানীতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। সরেজমিনে মিরপুর ইসিবি ফ্লাইওভার থেকে শুরু করে কুড়িল উড়াল সড়ক পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা যায়। এ সময় প্রতিটি গাড়িকে অতি ধীরগতিতে চলতে দেখা গেছে। কুড়িল উড়াল সড়কের সামনে উত্তরামুখী রাস্তায় পুলিশকে সতর্কতার সঙ্গে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। কুড়িল উড়াল সড়ক থেকে নতুন বাজারমুখী সড়কে এবং শেখ হাসিনা সরণির (৩০০ ফিট সড়ক) মুখে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এ সময় নদ্দামুখী গাড়িগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে মালিবাগ থেকে বাড্ডা লিংক রোড পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এরপর কিছুটা রাস্তা ফাঁকা থাকার পর উত্তর বাড্ডা থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার পর্যন্ত আবারও তীব্র যানজট দেখা যায়। নতুনবাজারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মাইকিং করে চালকদের লেন পরিবর্তন না করতে বলতে দেখা গেছে। প্রায় একই রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় উত্তরা থেকে খিলক্ষেতমুখী সড়কে। যান চলাচল স্থবির ছিল বনানী, মহাখালী ও তেজগাঁও এলাকায়ও। নতুনবাজারে কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত নিখিলেশ রায়ের সঙ্গে। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘তিন বছর ধরে চাকরিসূত্রে আমাকে এদিকে আসতে হয়। এমন যানজট এর আগে কখনো দেখিনি।’
অফিস ৬ ঘণ্টা
সরকারি-বেসরকারি অফিস সময় আজ রবিবার থেকে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত ছয় ঘণ্টা। এই তিন দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে অফিস। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। কারফিউ জারি হওয়ায় গত রবিবার ও সোমবার সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। এরপর গত মঙ্গলবার আরো এক দিন ছুটি বাড়ানো হয়। চলমান কারফিউয়ের সময়সীমা শিথিল হওয়ায় গত বুধ ও বৃহস্পতিবার চার ঘণ্টা (সকাল ১১টা থেকে ৩টা) করে চলে অফিস। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিসের সময়ও বাড়ানো হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আজ রবিবার থেকে আগামী মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি ও পোশাক কারখানাসহ সব ধরনের কলকারখানা খোলা থাকবে। জরুরি পরিষেবা যেমন—বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাকসেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবেন।
হাসপাতাল ও জরুরি সেবা, এ সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মীরা, চিকিত্সাসেবার সঙ্গে জড়িত কর্মীরা, চিকিত্সা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন, জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসগুলোর কর্মীরাও এই নিয়মের বাইরে থাকবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনা দেবেন।
চলছে লঞ্চ, এখনো বন্ধ ট্রেন, স্বাভাবিক হচ্ছে মহাসড়ক
পদ্মা সেতুর দুই পাশে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে যান চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। গতকাল সকাল থেকে ব্যস্ত এই মহাসড়কে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল যেমন বেড়েছে, তেমনি স্থানীয় পরিবহনে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কে গত এক সপ্তাহের তুলনায় গতকাল গাড়ির চলাচল অনেক বেড়েছে। গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলও বেড়েছে।
টানা ছয় দিন পর বরিশাল থেকে ঢাকার পথে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘এম ভি অ্যাডভেঞ্চার-৯’ লঞ্চটি যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে বরিশাল নদীবন্দর ত্যাগ করে। চলমান কারফিউ পরিস্থিতিতে যাত্রী না থাকায় গত ২০ জুলাই বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ওই দিন ঢাকা থেকেও বরিশালের পথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন জানান, বরিশাল থেকে ঢাকার পাশাপাশি ঝালকাঠি থেকে এমভি সুন্দরবন-১২ নামের আরেকটি লঞ্চ রাতে বরিশাল নদীবন্দর থেকে যাত্রী নিয়ে চাঁদপুর হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। কিন্তু ট্রেন চলাচলের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ে সূত্র বলছে, ট্রেন গণপরিবহন হলেও এটি সরকারি যান। তাই সরকারের নির্দেশনা ছাড়া ট্রেন চালানোর সুযোগ নেই। নিরাপত্তাঝুঁকি থাকায় কারফিউ শিথিলের সময়েও অল্প দূরুত্বে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ল
অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ অব্যাহত থাকলেও আজ রবিবার থেকে তিন দিন ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। অন্য জেলাগুলোয় কারফিউ শিথিলের সময়সীমার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা সিদ্ধান্ত নেবেন।