সুদ মানুষের ইহকাল-পরকালকে ধ্বংস করে। জনজীবনে অস্থিরতা নামিয়ে আনে। মানুষের ইবাদতকে মূল্যহীন করে দেয়। কেননা পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইবাদতের আগে হালাল ভক্ষণের শর্ত দিয়েছেন।
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে রাসুলগণ, তোমরা পবিত্র ও ভালো বস্তু থেকে খাও এবং সৎকর্ম করো। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আমি সম্যক জ্ঞাত।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৫১)
যারা সুদ খায়, তারা মহান আল্লাহর এই শর্ত লঙ্ঘন করে। এর চেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, তারা যদি এই পাপ থেকে তাওবা করে বিরত না হয়, তাহলে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থাকার মতো ভয়াবহ পাপে লিপ্ত থাকে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না করো তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও, আর যদি তোমরা তাওবা করো, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের জুলুম করা হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৮-২৭৯)
এ জন্যই হয়তো রহমাতুল্লিল আলামিন নবীজি (সা.) তাদের অভিশাপ দিতে বাধ্য হয়েছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুর রহমান ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিত, তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের সাক্ষী ও এর দলিল লেখক সবাইকে অভিশম্পাত করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৩৩৩)
যাদের নবীজি (সা.) অভিশাপ দিয়েছেন, তারা যদি তাওবা না করে, তাহলে তাদের দুনিয়া-আখিরাত দুটোই যে অভিশপ্ত এতে কোনো সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই। তাদের এই পাপের মাত্রা এতটাই নিম্ন যে হাদিস শরিফে তাদের এই পাপকে ব্যভিচারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘সুদ সত্তর প্রকার পাপের সমষ্টি। তার মাঝে সবচেয়ে নিম্নতম হলো, আপন মায়ের সঙ্গে ব্যভিচার করার সমতুল্য।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৫৩৪৫)
নাউজুবিল্লাহ, অন্য হাদিসে সুদকে ধ্বংসাত্মক কাজ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বস্তু থেকে বেঁচে থাক। তাঁরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, সেগুলো কী? তিনি বলেন, আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, জাদু, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করেছেন, সুদ খাওয়া, এতিমের সম্পদ ভক্ষণ করা, জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা, সাধ্বী সরলমনা রমণীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করা।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৮৫৭)
গরিবের রক্তচোষা সুদখোর মহাজনদের পরকালীন শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। যারা সুদকে ব্যবসার মতো হালাল মনে করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হলো, যা গত হয়েছে তা তার জন্যই ইচ্ছাধীন। আর তার ব্যাপারটি আল্লাহর হাওলায়। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৭৫)
হাদিস শরিফের তথ্যমতে কবরের জীবনেও তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। নবীজি (সা.)-কে স্বপ্নযোগে একবার কিছু পাপীর পরকালীন শাস্তি দেখানো হয়েছে, সেখানে সুদখোরের শাস্তি দেখানো হয় এ রকম—এক ব্যক্তি রক্তের নদীর মাঝখানে আসছে, সে বারবার পাড়ে ওঠার চেষ্টা করছে, কিন্তু পাড়ে থাকা এক ফেরেশতা তার মুখ বরাবর সজোরে তার ওপর পাথর নিক্ষেপ করছে এবং সে আগের জায়গায় চলে যাচ্ছে। এভাবে যত বারই পাড়ে আসার চেষ্টা করছে, ততবারই তাকে পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে। (বুখারি, হাদিস : ১৩৮৬)
মহান আল্লাহ সবাইকে এই ধ্বংসাত্মক পাপ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন