ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়িতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। রোগী, তাদের স্বজন এবং ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া অন্য কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারছেন না। এমনকি সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও সেনাবাহিনীর অনুমতি ছাড়া ভেতরে ঢোকা নিষেধ।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে ইনস্টিটিউটের প্রধান ফটকে আনসার সদস্যদের পাশাপাশি সেনা সদস্যদেরও কড়া অবস্থানে দেখা যায়। প্রবেশের সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে। রোগীর স্বজনদের জানাতে হচ্ছে রোগীর নাম, আত্মীয়তার সম্পর্ক ও ওয়ার্ড নম্বর। যাচাই-বাছাইয়ের পরই মিলছে প্রবেশাধিকার।
প্রবেশপথে দায়িত্বে থাকা এক আনসার সদস্য জানান, অতিরিক্ত ভিড় ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
এদিকে, আহতদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে ৯ বছর বয়সী শিশু বাপ্পি আইসিইউতে মারা যায়। তার শরীরের ৩৫ শতাংশ দগ্ধ ছিল।
এর আগে রাত সোয়া ৩টার দিকে আরও চার শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর দেন তিনি। এরা হলেন—এরিকসন (১৩), আরিয়ান (১৩), নাজিয়া (১৩) এবং সায়ান ইউসুফ (১৪)। এরিকসনের শরীরের ১০০ শতাংশ, আরিয়ানের ৮৫ শতাংশ, নাজিয়ার ৯০ শতাংশ এবং সায়ান ইউসুফের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল।
এ ছাড়া, রাত ১টার দিকে একই সূত্রে জানা যায়, আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন—অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ, সপ্তম শ্রেণির আফনান ফাইয়াজ, মাইলস্টোনের প্রাইমারি সেকশনের প্রধান সমন্বয়কারী মাহেরীন চৌধুরী এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ সামিন। বর্তমানে ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও আইসিইউতে ৪১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বিমান বিধ্বস্তে এখন পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে আটজনের পরিচয় শনাক্ত করে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার রাত দেড়টার দিকে এই তথ্য জানায় আইএসপিআর।
এর আগে সোমবার রাত ৮টায় আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১৭১ জন, যাঁরা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
উল্লেখ্য, সোমবার দুপুরে ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনের ওপর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার সময় ওই ভবনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলছিল।