কফি খাওয়া বন্ধ করলে ত্বকে কি প্রভাব পড়বে জেনে নিন
প্রকাশকালঃ
৩০ আগu ২০২৩ ১২:০৯ অপরাহ্ণ ২১৩ বার পঠিত
শহুরে জীবনে পানীয় হিসেবে কফি বেশ জনপ্রিয়। কফি যেমন শরীর চাঙা করে তোলে। তেমনি বিপরীত ফলাফলও আছে। কফিতে আছে ক্যাফেইন। ফিমেলফার্স্ট ডটকো ডটইউকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশিকা অনুসারে শরীরে খুব বেশি হলে দৈনিক ৪০০ মি.গ্রাম ক্যাফেইন নেওয়া যেতে পারে। তবে কফি ছাড়াও চা, চকলেট ও রঙিন কোমল পানীয়তেও আছে ক্যাফেইন। সারা দিনে কফি ছাড়া এসবও খাওয়া পড়ে। তাই সব মিলিয়ে দেখা যায়, শরীরে অতিরিক্ত ক্যাফেইন চলে যাচ্ছে।
কফি খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে, একথা সত্যি। এটি স্বাদ, গন্ধ ও উপকারিতার কারণে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। কফি খেলে শরীরে শক্তি মেলে, কাজের স্পৃহা বাড়িয়ে দেয়। তাই কাজে বসে ঘুম পেলে অনেকেই কফি খেয়ে নেন। যত উপকারিতা থাকুক, কোনো খাবারই একবারে অনেকখানি খাওয়া ভালো নয়। কফিও তার ব্যতিক্রম নয়।
বৃষ্টির মৌসুমে উষ্ণতা বজায় রাখতে অনবরত কফির কাপে চুমুক দিচ্ছেন। একঘেয়ে কাজ করতে করতে ক্লান্তি কাটাতে অনেকেই বার বার কফিতে চুমুক দেন। চাঙ্গা হতে কফির কোনো বিকল্প নেই। তবে অতিরিক্ত ক্যাফিন থেকেই শুরু হয় নানা রকম শারীরিক সমস্যা। সবচেয়ে প্রথম সেই প্রভাব পড়ে ত্বকে।
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্কয়ের ত্বক বিশেষজ্ঞ ও ‘ডা. ডেনিস গ্রস স্কিনকেয়ারয়ের প্রতিষ্ঠাতা ডেনিস গ্রস বলেন, দৈনিক এক কাপ (১২ আউন্স) কফি পান ত্বকে কোনো ক্ষতি করে না। তবে অতিরিক্ত কফি পান নেতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে। ত্বকের ক্ষতি হতে পারে ভেবে হঠাৎ যদি কফি খাওয়া বন্ধ করে দেন, তা হলে ত্বকে কি প্রভাব পড়তে পারে চলুন তা জেনে নেওয়া যাক:
পানির ঘাটতি কমায়
ডা. গ্রস মনে করেন, ক্যাফেইন মূত্র বর্ধক। এজন্য দেহে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। আর দেহ পানি শূন্য হলে ত্বক হয়ে পড়ে নির্জীব ও মলিন। নিউ ইয়র্কয়ের পুষ্টিবিদ মেলিসা রিফকিন বলেন, ক্যাফেইন গ্রহণ মানে সারাদিন দেহে পানি শূন্যতা সৃষ্টি। তাই এই ঘাটতি কমাতে পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। দেহে পানিশূন্যতা রয়েছে কি-না তা বোঝার উপায় হল মূত্রের রং বিবেচনা করা। যদি তা হালকা হলুদ ভাব বর্ণের হয়ে থাকে তবে বুঝতে হবে দেহে পানির ঘাটতি রয়েছে। তখন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত কফি খেলে শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে কিডনিতে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। তাই বার বার প্রস্রাবের বেগ আসে। এর ফলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়তে পারে। কিন্তু কফি না খেলে এই ধরনের কোনও সমস্যা হয় না।
ব্রণের সমস্যা কমায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত কফি খেলে তা ব্রণের সমস্যা বাড়াতে পারে। ব্রণ প্রধানত হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়, যা অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে হয়। এই কারণেই চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা তৈলাক্ত, চিনিযুক্ত, মশলাদার এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন যা শরীরে তাপ বাড়িয়ে ব্রণ সৃষ্টি করে। কফিতে থাকে দুধ, ক্যাফেইন সমৃদ্ধ কফি, চিনি এবং মাখনের মিশ্রণ, যা শরীরে তাপ তৈরি করে। এর ফলে ব্রণ হতে পারে। অনেকেই জানিয়েছেন, কফি খাওয়া কমালে মুখে ব্রণের সমস্যা কমে। আসলে কফিতে থাকা ক্যাফিন ব্রণ সৃষ্টিকারী হরমোনগুলিকে উদ্দীপিত করে। বেশ কিছু দিন কফি না খেলে হরমোনে এই ধরনের সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
ত্বক শুষ্ক হয় না
বেশি কফি খেলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে। ফলে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়। কিন্তু এই অভ্যাসে পরিবর্তন আনলে স্বাভাবিক ভাবেই ত্বকের শুষ্ক হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
চোখের নিচের কালো দাগ কমে
ডা. গ্রসের মতে, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ কর্টিসোল ও অ্যাড্রিনালিন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্নায়ুবিক চাপ বাড়ায়। ক্যাফেইন অতিরিক্ত গ্রহণ না করা হলেও এটা মানসিক যে পরিবর্তন আনে তা শারীরিক ক্লান্তির মতোই প্রভাব রাখে। দেহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও ত্বক থেকে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। যে কারণে ফোলাভাব, মলিনতা, চোখের চারপাশে কালচে ভাব এমনকি তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি করে। কফিতে ক্যাফেইন থাকে। তাই কফি খেলে অনিদ্রাজনিত সমস্যা বেড়ে যায়। ঘুম কম হলে চোখের নিচে কালচে দাগ পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু কফি খাওয়া পরিমাণে কমালে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সেবাম উৎপাদনের পরিমাণ কমে
কফি খাওয়ার অভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ আনতে পারলে সেবাম উৎপাদনের পরিমাণও কমে। বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে সেবাম উৎপাদনের সমস্যা বেশি হয়।
ঘুমের ঘাটতি হয় না
দুপুরের পরে ক্যাফেইন গ্রহণ ঘুম চক্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ডা. গ্রস বলেন, বেলা চারটার পরে ক্যাফেইন গ্রহণ রাতের ঘুমকে এক ঘণ্টার বেশি বিলম্বিত করতে পারে। এর ফলে অনিদ্রা, নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। যা মানসিক চাপ বৃদ্ধি, স্নায়ুবিক কার্যকারিতা হ্রাস, চোখের চারপাশে কালো দাগ ও ফোলাভাব দেখা দেয়। কিন্তু কফি খাওয়ার মাত্রা কমালে এই সমস্যা থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব।