‘সুলতানপুর’ মুক্তি পেয়েছে গত শুক্রবার। সৈকত নাসির পরিচালিত ছবিটি মুক্তির পর নতুন করে আলোচনায় আশীষ খন্দকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপে আশীষ খন্দকারকে নিয়ে আলোচনা। সবারই এক কথা, সুলতানপুর ছবিতে বাজিমাত করেছেন তিনি। কেউ কেউ আবার এ–ও বলছেন, মূলধারার চলচ্চিত্রে তাঁর আরও নিয়মিত হওয়া উচিত।
প্রেক্ষাগৃহের এক কোণে দর্শকের সঙ্গে বসে ছবিটি দেখেছেন আশীষ খন্দকার। বললেন, ‘ঢাকার বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রথম দিনের প্রথম শো দেখেছি। একদম হাউসফুল ছিল। লোকজনের মনে হয় ছবিটা ভালোই লেগেছে। দর্শক সারিতে যাঁরা বসা ছিলেন, পর্দার আমাকে দারুণভাবে রিসিভ করেছেন। মেলোড্রামাটিক এই কনটেন্টে মারপিট, ঝাঁপাঝাঁপি, দৌড়াদৌড়ি—সবকিছুই রয়েছে। এর মধ্যে আমি যে অভিনয়টা করেছি, দর্শক যেভাবে গ্রহণ করেছে, সেটা ভালো লেগেছে।’
‘সুলতানপুর’ নিয়ে আশীষ খন্দকারের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ করে চিত্রনাট্যকার আসাদ জামান। তখনকার কথা মনে করে বললেন, ‘সে–ই শুরুতে আমাকে ইনফর্ম করে। এরপর সৈকত নাসিরের সঙ্গে ছবি নিয়ে দীর্ঘ কথোপকথন হয়। মোটেও এক দিনের সিদ্ধান্ত ছিল না। আমি তো যেকোনো ছবিতে কাজ করতে পারি না।
কেউ চাইলে আমাকে নাচিয়ে নিতে পারে না। চরিত্রটা আসলে কোথায় যাবে, কেমন করে যাবে, অভিনয়শিল্পী হিসেবে জানার অধিকারও আমার আছে। আমার পছন্দে আমি অভিনয় করি। তবে সৈকত নাসিরকে একজন পরিশ্রমী ফিল্মমেকার মনে হয়েছে। সৎ অর্থে বাণিজ্যিকীকরণের একটা চেষ্টা তার মধ্যে আছে। ছবির গুণগত জায়গা হচ্ছে, শিল্পের সঙ্গে বাণিজ্যের সংমিশ্রণ রয়েছে।’
বছরের শুরুতে আবু রায়হান জুয়েলের ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রে নসু ডাকাত চরিত্রে অভিনয় করেও প্রশংসা কুড়ান আশীষ খন্দকার। নিয়মিত চলচ্চিত্রের পর্দায় না পাওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে বললেন, ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ।’ ৮ জুন চরকিতে মুক্তি পাচ্ছে ‘আন্তঃনগর’। ওয়েব ফিল্মটির পরিচালক গৌতম কৈরির সঙ্গে এটি তাঁর দ্বিতীয় এবং চরকির সঙ্গে প্রথম কাজ।
অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক, অনুবাদক, চলচ্চিত্র নির্মাতা—আশীষ খন্দকারের অনেক পরিচয়। বাবা-মায়ের প্রেরণায় অভিনয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সেই আশির দশকে, ছাত্রাবস্থায় মঞ্চের সঙ্গে তাঁর যুক্ততা। গাইবান্ধায় কেটেছে তাঁর শৈশব ও কৈশোর। আশীষ খন্দকার বললেন, ‘এসএসসি শেষে গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে মাইগ্রেশন করে ঢাকা কলেজে চলে আসি। এরপর যাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফাইনাল ইয়ার শেষ না করেই ১৯৯১ সালে ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে (এনএসডি) চলে যাই।’
এনএসডিতে তিন বছর পড়াশোনা করেন আশীষ খন্দকার, ‘আমি আসলে একাডেমিশিয়ান হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছি। এনএসডিতে পড়াশোনা করেছি। শুধু অভিনয় মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায়নি। তিন বেলা খাবার পেয়েছি। সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্য জীবন পেয়েছি। অনেক বই পড়েছি। ওখানে আমার যে বন্ধুবান্ধব ছিল, তার বাইরেও একটা বড় ক্ষেত্র তৈরি হয়। ভারতীয় আর্ট, থিয়েটার, ফিল্মে যেসব বরেণ্য অভিনেতা ও পরিচালক বেরিয়েছেন, তাদের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক হয়।’
একটি অ্যাক্টিং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করতে চান আশীষ খন্দকার, যেখান থেকে তিন ও চার বছর মেয়াদে শিক্ষা নিয়ে যে কেউ অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে পারবেন। আর এটার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও চান। তাঁর মতে, আমি ১৯৯১ সাল থেকে এনভায়রনমেন্টাল থিয়েটার শুরু করি। চেয়েছিলাম, একটা সঠিক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে অভিনয়শিল্পীদের ডেভেলপ করা। তাই বাংলাদেশে অ্যাক্টিং ল্যাবরেটরি করার চিন্তা।’