হাদিসের বর্ণনায় অশ্লীলতা প্রসারের কঠিন শাস্তি

প্রকাশকালঃ ২২ মে ২০২৩ ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ ১০৫ বার পঠিত
হাদিসের বর্ণনায় অশ্লীলতা প্রসারের কঠিন শাস্তি

শ্লীলতা মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত ধ্বংস করে। এ জন্য মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ দিয়েছেন, আপনি বলুন, আমার রব প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, পাপকাজ, অন্যায় ও অসংগত বিদ্রোহ ও বিরোধিতা এবং আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করা, যার পক্ষে আল্লাহ কোনো দলিল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি, আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা, যা সম্বন্ধে তোমাদের কোনো জ্ঞানই নেই, (ইত্যাদি কাজ ও বিষয়) নিষিদ্ধ করেছেন। (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩৩)

এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব ধরনের পাপ, অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

কারণ অশ্লীলতায় লিপ্ত হলে বা তা প্রসারে আত্মনিয়োগ করলে এর শাস্তি দুনিয়া থেকেই শুরু হয়, মহান আল্লাহ এদের লাঞ্চনাকর শাস্তি দেন। হাদিসের বর্ণনা মতো কোনো সমাজে অশ্লীলতার প্রসার হলে সেখানে নতুন নতুন রোগব্যাধি দেখা দেয়। শুধু অশ্লীলতাই নয়, আরো এমন অনেক পাপ আছে, যেগুলো জনজীবনে অস্থিরতা নামিয়ে আনে। 


হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন, হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে।

তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তা ছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা আগেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের ওপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসিবত।

যখন জাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি ভূপৃষ্ঠে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকত তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোনো জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের ওপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সব কিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকরা আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০১৯)


এই শাস্তি দুনিয়াতেই শেষ হয়ে যায় না, অশ্লীলতা প্রসারকারী ও তাদের মদদদাতাদের পরকালেও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)

পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে অশ্লীলতার আরবি শব্দ ‘ফাহেশা’ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা ইত্যাদি। আবার পবিত্র কোরআনের কোনো কোনো জায়গায় ব্যভিচারকেও ‘ফাহেশা’ বলা হয়েছে। যেমন সুরা বনি ইসরাঈলে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না, নিশ্চয়ই তা অশ্লীল ও মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২)


তাই প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব ধরনের অশ্লীলতা থেকে নিজেদের দূরে রাখা কর্তব্য। বর্তমানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অশ্লীলতায় লিপ্ত হওয়া এবং অশ্লীলতা কন্টেন্ট দেখা, শেয়ার করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। আমরা অনেক সময় না বুঝেই এগুলোতে লাইক, শেয়ার করে এগুলোর নির্মাতাদের উৎসাহ দিই, তাদের উপার্জন বাড়িয়ে দিই। নিজের অজান্তেই এগুলোর প্রসার ঘটিয়ে সমাজের মানুষকে পাপাচারে লিপ্ত করি। অথচ এগুলো আমাদের দুনিয়া-আখিরাতকে নষ্ট করে দিচ্ছে।

তাই আমাদের উচিত, অতীতের জানা-অজানা অশ্লীলতা থেকে তাওবা করে বাকি জীবন এগুলো থেকে দূরে থাকার দৃঢ় প্রতীজ্ঞা করা। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ফিরে আসার সুযোগ রেখেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যারা কোনো পাপ কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং আল্লাহ ছাড়া গুনাহসমূহের ক্ষমাকারী কে-ই বা আছে এবং তারা জেনে শুনে নিজেদের (পাপ) কাজের পুনরাবৃত্তি করে না। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৫)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।