আবুল কালাম আজাদ ভূঁইয়া, কুমিল্লা প্রতিনিধি:
কুমিল্লা মহানগরীর জাঙ্গালিয়া এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও র্যাবের যৌথ অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় নাজমুল ইসলাম শামীম (৩৫) নামের এক চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) গভীর রাত থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ২৩ বীর ও র্যাব-১১ (সিপিসি-২)-এর সমন্বয়ে এই বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়।
সেনাবাহিনী সূত্র জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে শামীমের জাঙ্গালিয়ার বাসভবনে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে স্থানীয়ভাবে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র, দেশি ও বিদেশি গোলাবারুদসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পরে তার ব্যবহৃত একাধিক গোপন আস্তানায় তল্লাশি চালানো হলেও প্রাথমিকভাবে তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে র্যাব-১১ (সিপিসি-২) আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় জিপিএস ও লোকেশন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে শামীমের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে আটক করে।
গ্রেপ্তার নাজমুল ইসলাম শামীম কুমিল্লা মহানগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের জাঙ্গালিয়া এলাকার মরহুম আব্দুল হালিমের ছেলে।
উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে—স্থানীয়ভাবে তৈরি ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র (পাইপগান), ৬০ রাউন্ড শটগান কার্তুজ (১২ বোর × ৭০ মিমি ৪০ রাউন্ড এবং ১২ বোর × ৭৬ মিমি ২০ রাউন্ড), ১৮ রাউন্ড মেশিনগান গোলাবারুদ (৭.৬২×৫৪ মিমি, পিওএফ নির্মিত), ১ রাউন্ড পিস্তল গোলাবারুদ (৭.৬২×২৫ মিমি টোকারেভ, এসঅ্যান্ডবি নির্মিত), ১ রাউন্ড রিভলভার/এয়ারগান গোলাবারুদ, ১০টি ছুরি, চাপাতি ও চাইনিজ কুড়াল। এছাড়া দুটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, ৮টি মানিব্যাগ, এটিএম কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শামীম জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডের সহ-সভাপতি হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং একসময় আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি কুমিল্লা শহরের একজন চিহ্নিত বড় চাঁদাবাজ হিসেবেও পরিচিত। ভয়ের কারণে অনেকেই তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতে সাহস পান না বলে স্থানীয়দের দাবি।
পুলিশ সূত্র জানায়, শামীমের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ তাকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থার জন্য র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের আওতাধীন ৪৪ পদাতিক ব্রিগেডের নেতৃত্বে ২৩ বীর পরিচালিত এই অভিযানকে কুমিল্লা অঞ্চলে অবৈধ অস্ত্র ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনে একটি উল্লেখযোগ্য ও সফল উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।