প্রকাশকালঃ
২০ আগu ২০২৩ ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ ২৬৭ বার পঠিত
মানবজাতিকে পথপ্রদর্শনের জন্য আল্লাহ যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসুল প্রেরণ করেছেন। নবুয়তের ধারায় প্রথম নবী ছিলেন আদম (আ.) এবং সর্বশেষ নবী ছিলেন মুহাম্মদ (সা.)। আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে তাঁর শরিয়তকে পূর্ণতা দান করেন। ফলে নতুন কোনো নবী প্রেরণের প্রয়োজন শেষ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো তিনি বিশ্বনবী। আল্লাহ তাঁকে সমগ্র মানবজাতির জন্য মনোনীত করেছেন।
আল্লামা ইবনে আবি ইয়ালা (রহ.) এ বিষয়ে মুসলমানের বিশ্বাস এভাবে তুলে ধরেন—‘মুসলমান বিশ্বাস করে, আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) শেষ নবী, সব নবীদের নেতা, আল্লাহভীরু মানুষের সর্দার, আল্লাহর রাসুল, তাঁকে তিনি আমাদের প্রতি এবং সমগ্র সৃষ্টির জন্য প্রেরণ করেছেন। তিনি আদমসন্তানদের ভেতর শ্রেষ্ঠতম।
কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম তাঁকে উঠানো হবে এবং আদম (আ.) ও তাঁর সন্তানরা মুহাম্মদ (সা.)-এর পতাকাতলে সমবেত হবে। তিনি সব নবী ও তাঁদের উম্মতের জন্য সাক্ষী। আল্লাহ সব নবী থেকে তাঁর প্রতি ঈমান স্থাপন ও তাঁর আগমনের সুসংবাদ প্রদানের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা অঙ্গীকার করেছিলেন যে মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্ণ বিবরণ, তাঁর নবুয়তের আগে ও পরে যত নিদর্শন প্রকাশ পাবে তা কিতাবে লিপিবদ্ধ করবেন।’ (আল ইতিকাদ, পৃষ্ঠা ৩৫)
পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে মুহাম্মদ (সা.)-কে সমগ্র মানবজাতির নবী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি; কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ জানে না।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ২৮)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘বোলো হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার জন্য আল্লাহর রাসুল, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী। তিনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই, তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৮) পবিত্র কোরআনে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে শেষ নবী ঘোষণা করা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪০)
কোনো ব্যক্তি যদি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বিশ্বনবী হিসেবে বিশ্বাস না করে, তবে তার ঈমান গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লামা ইবনে কুদামা (রহ.) লেখেন, ‘যে ব্যক্তি মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়তকে স্বীকার করে অথচ তিনি যে বিশ্বজগতের জন্য প্রেরিত তা অস্বীকার করে, তবে তার ইসলাম গ্রহণযোগ্য নয়। যদি না সে এই সাক্ষ্য দেয় যে মুহাম্মদ (সা.) সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত।’ (আল মুগনি : ১২/২৮৮)
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ যে তিনি তাদের জন্য মুহাম্মদ (সা.)-কে প্রেরণ করেছেন। আর মুহাম্মদ (সা.)-এর মর্যাদার দিকগুলো হচ্ছে তিনি শেষ নবী ও রাসুল, তাঁর মাধ্যমে দ্বিনে হানিফকে পূর্ণতা দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ তাঁর কিতাবে এবং রাসুল তাঁর সুন্নাহতে সংবাদ দিয়েছেন তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৬/৪৩০)
আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) লেখেন, ‘এটা জেনে রাখা আবশ্যক যে আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.)-কে সমগ্র মানুষ ও জিনের জন্য প্রেরণ করেছিলেন। সুতরাং প্রতিটি মানুষ ও জিনের জন্য তাঁর ওপর ঈমান গ্রহণ করা এবং তাঁর আনুগত্য ওয়াজিব।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া : ১১/৩০৩)
যেহেতু কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.)-কে সমগ্র মানবজাতি ও বিশ্বজগতের নবী হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন, তাই তাঁকে বিশ্বনবী বলা হয়। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় সভ্য পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে তাঁর দাওয়াত পৌঁছে যায়, সব ধর্ম ও বর্ণের প্রতিনিধিরা তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করে এবং তাঁর মৃত্যুর এক শতাব্দীকালেরও কম সময়ে পৃথিবীতে ইসলাম অন্যতম প্রধান ধর্ম ও নিয়ন্ত্রক শক্তিতে পরিণত হয়, যা অন্য কোনো নবীর ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।
এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, আল্লাহ তাঁকে বিশ্বনবী হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই তাঁর রাসুলকে প্রেরণ করেছেন সুপথ ও সত্য দ্বিনসহ সব দ্বিনের ওপর তাকে বিজয়ী করার জন্য, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।’ (সুরা সাফ্ফ, আয়াত : ৯) আল্লাহ মুহাম্মদ (সা.), তাঁর পরিবার, সাহাবিরা ও সব অনুসারীর প্রতি শান্তি বর্ষণ করুন। আমিন