নবম শ্রেণিতে নয়, একাদশ শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন

প্রকাশকালঃ ০৩ অক্টোবর ২০২৪ ১২:৪৭ অপরাহ্ণ ৪৪৩ বার পঠিত
নবম শ্রেণিতে নয়, একাদশ শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন

প্রাথমিক শিক্ষার কনসালট্যান্ট কমিটির আহ্বায়ক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ বৈষম্য দূর করে শিক্ষাকে মানসম্মত করতে ‘শিক্ষা কমিশন’ গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি নবম শ্রেণিতে নয়, একাদশ শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। গতকাল বুধবার গণসাক্ষরতা অভিযান আয়োজিত রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বৈষম্য দূরীকরণে শিক্ষায় নিরবচ্ছিন্ন রূপান্তর: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শিরোনামে পলিসি ব্রিফ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। বেসরকারি শিক্ষা পরিবারের পক্ষে পলিসি ব্রিফ উপস্থাপন করা হয়।


শিক্ষায় সংস্কার আনতে বর্তমান সরকার গত ৩০ সেপ্টেম্বর ড. মঞ্জুর আহমদকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের একটি কনসালট্যান্ট (পরামর্শক) কমিটি গঠন করে। অনুষ্ঠানে শিক্ষায় সংস্কার নিয়ে বক্তব্য রাখেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ বলেন, নবম শ্রেণি থেকে বিভাগ (বিজ্ঞান, বাণিজ্য, কলা) বিভাজনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এত অল্প বয়সে (নবম-দশম) বিভাগ বিভাজনের বিষয়টি থেকে অন্যান্য দেশ সরে গেছে।

 

আমাদের জন্যও এটি উপযুক্ত নয়, একাদশ থেকে হবে। সেটা হঠাৎ করে পরিবর্তন করা হলো। এটা কীভাবে হলো, কেন হলো? আগের জায়গায় চলে গেল, সেটাই মনে হচ্ছে। এরকম ঢালাওভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ঠিক নয়, এটা বিচার-বিবেচনা করে করা উচিত, আমরা সেটাই বলতে চাচ্ছি। এক্ষেত্রে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাওয়া দরকার। একটি কমিশন হোক, আলাপ-আলোচনা শুরু হোক, সিদ্ধান্তর একটি প্রক্রিয়া হোক, তারপর একটা পরামর্শ দেবে কীভাবে করতে হবে, মধ্যবর্তী ও লম্বা সময়ের জন্য। এখন নেই, তবে সেটি করা দরকার।

 

কমিশন স্থায়ীভাবে করা হবে কি না, জানতে চাইলে ড. মনজুর আহমদ বলেন, ‘কমিশন স্থায়ী হবে কি না, এখন একটি কমিশন করে, আমরা সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি। স্থায়ী করার একটি সিদ্ধান্ত ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে ছিল। আগের সরকার সেদিকে যায়নি। এখন স্থায়ী হওয়া দরকার। বর্তমানে যেটি হবে, সেটিকে স্থায়ী করতে পারে। সেটার জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হতে হবে। পার্লামেন্টে বা যেভাবে হয়—সেই চিন্তা-ভাবনা মাথায় রেখে আমরা কাজ শুরু করি, তারপরে যেটা স্থায়ী হবে, বিধিবদ্ধভাবে হবে।’


প্রাথমিক শিক্ষার কনসালট্যান্ট কমিটির সদস্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ইরাম মারিয়াম বলেন, ‘শিশুদের খেলার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। খেলার মাধ্যমে তাদের বিকাশ ঘটে।’ শিশুদের মানসিক অবস্থা বোঝার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, মন ভালো না থাকলে শিখন ভালো হয় না। প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্যের যে বড় বিষয় সেটার স্বীকৃতি দিতে হবে। সেটার জন্য প্রস্তুতি দরকার। কেন দরকার?

 

কারণ শিখনের সঙ্গে মনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অনেকেই যুক্ত ছিলেন, তাদের অনুভূতি কাজ করছে। সেটা চিহ্নিত করা দরকার, কাজ করা দরকার। ‘শিক্ষাক্রম হয় কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না’ এমন প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার কনসালট্যান্ট কমিটির সদস্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ইরাম মারিয়াম বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে দেখছি প্রাক-প্রাথমিক বাস্তবায়ন হচ্ছে। এখন দুই বছরের যে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ২০২৪ সালে ৩ হাজার স্কুলে পাইলট হচ্ছে, ২০২৫ সালে সেটি ৫ হাজার স্কুলে হবে।

 

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা বারবার বলেছি, শিক্ষার কাঠামো ঠিক না করলে হবে না। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা জৌতি এফ গমেজ, লালমাটিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আকমল হোসেন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শাহিনুর আল আমিন, এডুকেশন ওয়াচের আহ্বায়ক ড. আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

 

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মানসম্মত শিক্ষক ছাড়া শিক্ষায় কোনো উন্নয়ন টেকসই হবে না। এ জন্য একটি সমন্বিত জাতীয় শিক্ষক উন্নয়ন রূপরেখা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশার জন্য প্রস্তুতি, নিয়োগ, পদোন্নতি, ক্ষমতায়ন, বেতন কাঠামো, মাননিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। বাংলাদেশের শিক্ষকদের মান নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্নতা রয়েছে। কাজেই অনেক শিক্ষক শিক্ষাক্রমের যে কোনও রূপান্তর বাস্তবায়ন করার জন্য প্রস্তুত নন। তাই বছরব্যাপী হাইব্রিড ট্রেনিংয়ের আয়োজন করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা এবং বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা খুবই জরুরি।

 

কারণ শিক্ষায় যে কোনও সংস্কার বাস্তবায়নে শিক্ষকদের মোটিভেশনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের প্রাথমিক কাজ হিসেবে ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। মুখস্থনির্ভর লিখিত পরীক্ষার বদলে প্রবণতানির্ভর টেস্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও সক্ষমতা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া গতানুগতিক কনটেন্টনির্ভর কোর্সের বদলে গবেষণানির্ভর, প্রয়োগমুখী, সমস্যা সমাধাননির্ভর আন্তঃবিষয়ক মাইক্রো-ক্রেডেন্সিয়াল কোর্স চালু করা সময়ের দাবি।

 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার মান ও শ্রমবাজারের দাবি অনুযায়ী শিক্ষার সংস্থান জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন যাতে তারা মনিটরিং, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং মার্কেট বেসিস ডিগ্রি বা কোর্স প্রণয়নে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারে। ভর্তি পরীক্ষায় পরিবর্তন, মুখস্থনির্ভর লিখিত পরীক্ষার বদলে প্রবণতানির্ভর, গতানুগতিক কনটেন্টনির্ভর কোর্সের বদলে গবেষণানির্ভর কোর্স চালু করার সুপারিশ করা হয়।