সারাদেশে হামলা ও ভাঙচুর: এক নজরে

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:৫০ অপরাহ্ণ   |   ৬৪ বার পঠিত
সারাদেশে হামলা ও ভাঙচুর: এক নজরে

ঢাকা প্রেস নিউজ
 

গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস পূর্তি ও ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ
গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষে বুধবার রাতে সারাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ক্রেন, এক্সকাভেটর ও বুলডোজার দিয়ে বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচিহ্ন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

 

ঘটনার সূচনা
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা কর্মসূচির ঘোষণা দেন। বুধবার লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির দিন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের কথা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বিক্ষুব্ধরা ‘বুলডোজার মিছিল’ ও ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচির ডাক দেয়।

 

এদিন বিকেলে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিসহ বেশ কয়েকজন সামাজিক মাধ্যমে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। রাত ৯টার পরিবর্তে কর্মসূচির সময় এগিয়ে রাত ৮টায় নিয়ে আসা হয়।
 

এদিকে, হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হাসিনার বক্তব্য প্রচারের সুযোগ দেওয়া বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।’
 

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভকারীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে জমায়েত হন। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী স্লোগান দিতে দিতে একপর্যায়ে তারা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং শাবল, হাতুড়ি, রড ও লাঠি নিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। রাত পৌনে ১১টার দিকে বড় একটি ক্রেন আনা হয়, তবে পিলার না ভাঙতে পারায় পরে বুলডোজার ব্যবহার করা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ির একটি অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সারারাত ধরে ভাঙচুর অব্যাহত থাকে।

 

সুধা সদনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ
ধানমন্ডি ৫ নম্বর সড়কে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন দেয় ছাত্র-জনতা। রাত পৌনে ১১টার দিকে সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে চাইলে জনতার বাধার মুখে ফিরে যেতে হয়।

 

সারাদেশে হামলা ও ভাঙচুর
১, নোয়াখালী: ওবায়দুল কাদেরের কোম্পানীগঞ্জের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। ২, রাজশাহী: সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাসায় আগুন ও ভাঙচুর। ৩, নারায়ণগঞ্জ: জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ তিনটি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর। ৪, সুনামগঞ্জ: পাঁচটি ম্যুরালসহ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনায় হামলা। ৫, খুলনা: শেখবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ৬, সিলেট: বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস। ৭, চট্টগ্রাম: মেডিকেল কলেজ ও জামালখান মোড়ে দুটি ম্যুরাল ভাঙচুর। ৮, কুষ্টিয়া: মাহবুবউল-আলম হানিফের বাড়ির সামনের অংশ ভাঙচুর। ৯, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: শেখ পরিবারের নামে থাকা চারটি স্থাপনার নাম পরিবর্তন। ১০, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: শেখ হাসিনার ছবি টাঙিয়ে গণজুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি। ১১, নাটোর: সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের পোড়া বাড়িতে পুনরায় আগুন। ১২, বরিশাল: আমির হোসেন আমুর ডুপ্লেক্স ও আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর বাড়ি ধ্বংস। ১৩, ভোলা: তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ।

 

সারাদেশজুড়ে এসব হামলা ও ভাঙচুরের ফলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কিছু এলাকায় অভিযান চালিয়েছে।