গ্রাম্য সালিশে দুই শিক্ষার্থী‌কে জুতা‌পেটা, প্রায়শ্চিত্ত বলেছে শিক্ষার্থীরা

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:৪৮ অপরাহ্ণ   |   ১৯৮ বার পঠিত
গ্রাম্য সালিশে দুই শিক্ষার্থী‌কে জুতা‌পেটা, প্রায়শ্চিত্ত বলেছে শিক্ষার্থীরা

ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-



 

কু‌ড়িগ্রা‌ম জেলার রা‌জিবপুর উপ‌জেলায় স্থানীয় ‌বি‌রো‌ধের জেরে ডাকা সা‌লি‌শে দুই শিক্ষার্থী‌কে জুতা‌পেটা করার ঘটনা ঘ‌টে‌ছে। বুধবার (২৯ জানুয়া‌রি) বিকা‌লে উপ‌জেলার সরকা‌রি পাইলট উচ্চ বিদ‌্যালয় মা‌ঠে এ ঘটনা ঘ‌টে। এ ঘটনার এক‌টি ভি‌ডিও সামা‌জিক যোগা‌যোগমাধ‌্যম ফেসবু‌কে ছ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে‌ছে।
 

রা‌জিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ তস‌লিম উদ্দিন এবং ভুক্ত‌ভোগী এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা ব‌লে বিষয়‌টি নি‌শ্চিত হওয়া গে‌ছে। ত‌বে ঘটনা‌কে নি‌জে‌দের অপরা‌ধের শা‌স্তি ব‌লে দা‌বি ক‌রে‌ছেন ভুক্ত‌ভোগী শিক্ষার্থীরা। এ নি‌য়ে তা‌দের কোনও অভিযোগ নেই ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন তারা।
 

এদিকে দুই শিক্ষার্থী‌কে জুতা‌পেটার ভি‌ডিও ফেসবু‌কে পোস্ট ক‌রে এ ঘটনা‌কে ‘সমন্বয়ক‌দের জুতা‌পেটা’ করা হ‌চ্ছে ব‌লে দা‌বি কর‌ছেন কেউ কেউ। ত‌বে ভুক্ত‌ভোগী শিক্ষার্থী ও বৈষম‌্যবি‌রোধী ছাত্র আন্দোলনের একা‌ধিক সদ‌স্যের সঙ্গে কথা ব‌লে এর সত‌্যতা পাওয়া যায়‌নি।
 

ভুক্ত‌ভোগী দুই শিক্ষার্থী গত বছর এইচএস‌সি পরীক্ষায় পাস ক‌রে‌ছেন। তারা বিশ্ব‌বিদ‌্যালয় ভ‌র্তিচ্ছু। দুজনে সহপাঠী এবং রা‌জিবপুর সদর ইউনিয়নের বা‌সিন্দা।  সা‌লি‌শে এক শিক্ষার্থীর বড় ভাইকে কান ধ‌রে উঠবস করা‌নো হয় ব‌লেও জানা গে‌ছে।
 

সেখানে দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক ছাড়াও স্থানীয় বি‌এন‌পি ও যুবদলের একা‌ধিক নেতা উপ‌স্থিত ছি‌লেন। ত‌বে জনসম্মুখে দুই‌ শিক্ষার্থী‌কে জুতা‌পেটা করার বিষ‌য়ে তারা কোনও মন্তব্য কর‌তে রাজি হন‌নি।
 

ভুক্ত‌ভোগী এক শিক্ষার্থী ব‌লেন, ‘আমার বন্ধুর বড় ভাই স্থানীয় দোকানদার। তার সঙ্গে ধুলাউ‌ড়ি গ্রা‌মের ফরমান না‌মে এক সেনাসদ‌স্যের ব‌্যবসায়িক লেন‌দেন নি‌য়ে ঝা‌মেলা হয়। বড় ভাই‌য়ের দোকান হওয়ায় তা‌তে আমার বন্ধুও জ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে। মঙ্গলবার ওই সেনাসদ‌স্যের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যা‌য়ে হাতাহা‌তি হয়। বন্ধুর সঙ্গে বি‌রোধ হওয়ায় আমিও সেখা‌নে জ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ি।’
 

তি‌নি আরও ব‌লেন, ‘আমরা জানতাম না ফরমান সেনাসদস‌্য। আঘা‌তে তি‌নি আহত হ‌লে আইনি ব‌্যবস্থা নি‌তে চান। কিন্তু আমা‌দের অভিভাবকরা স্থান‌ীয়ভা‌বে মীমাংসা করার উদ্যোগ নেন। বুধবার স্কুল মা‌ঠে সা‌লিশ হয়। সেখা‌নে আমার বড় ভাই আমা‌কে ও আমার বন্ধু‌কে জুতা দি‌য়ে মা‌রেন। এটা অনেকটা পা‌রিবা‌রিক শাস‌নের ম‌তো ক‌রে হ‌য়ে‌ছে। এতে আম‌াদের কোনও অভিযোগ নেই।’

‘আমি ম‌নে ক‌রি, আমি অপরাধ ক‌রে‌ছি। অভিভাবকরা আমা‌কে শা‌স্তি দি‌য়ে‌ছেন। এটা আমার প্রাপ্য ছিল।’ 
 

সমন্বয়ক প‌রিচয় দি‌য়ে ফেসবুকে ভি‌ডিও ছ‌ড়ি‌য়ে পড়া প্রসঙ্গে জান‌তে চাইলে ওই শিক্ষার্থী ব‌লেন, ‘আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম। ত‌বে গত দুই মা‌সেরও বে‌শি সময় ধ‌রে আমি ও আমার বন্ধু বৈষম‌্যবি‌রোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেই। কিন্তু এক‌টি মহল পা‌রিবা‌রিক এই ঘটনা‌কে রাজনৈতিক রঙ দি‌য়ে ছ‌ড়ি‌য়ে দি‌চ্ছে। বি‌শেষ ক‌রে ছাত্রলী‌গের ছে‌লেরা সমন্বয়ক ট‌্যাগ দি‌য়ে ‌ফেসবু‌কে ভি‌ডিও শেয়ার কর‌ছে। কিন্তু এর সঙ্গে বৈষম‌্যবি‌রোধী ছাত্র আন্দোল‌নের কোনও সম্পর্ক নেই।’
 

এ ব‌্যাপা‌রে জান‌তে সেনাসদস‌্য ফরমানের সঙ্গে যোগা‌যো‌গের চেষ্টা ক‌রে পাওয়া যায়‌নি।  
 

বৈষম‌্যবি‌রোধী ছাত্র আন্দোলন কু‌ড়িগ্রাম জেলা শাখার সংগঠক ও রা‌জিবপু‌রের বা‌সিন্দা র‌বিউল ইসলাম ব‌লেন, ‘দুই শিক্ষার্থী‌কে পা‌রিবা‌রিক সা‌লি‌শে শাসন ক‌রে শা‌স্তি দেওয়া হ‌য়ে‌ছে। এটা দুই প‌ক্ষের পা‌রিবা‌রিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু এক‌টি মহল তা‌দের‌কে সমন্বয়ক প‌রিচয় দি‌য়ে বৈষম‌্যবি‌রোধী ছাত্র আন্দোল‌নের সঙ্গে জড়ি‌য়ে গুজব ছাড়া‌চ্ছে। ওই দুই শিক্ষার্থী আমা‌দের সঙ্গে কোনও পর্যা‌য়ে যুক্ত নেই।’
 

রা‌জিবপুর থানার ওসি তস‌লিম উ‌দ্দিন ব‌লেন, ‘স্থানীয় বা‌সিন্দা এক সেনাসদ‌স্যের সঙ্গে বিবা‌দের কার‌ণে পা‌রিবা‌রিকভা‌বে দুই শিক্ষার্থীকে শা‌স্তি দেওয়া হ‌য়ে‌ছে ব‌লে শু‌নে‌ছি। এ নি‌য়ে কোনও পক্ষ থানায় অভি‌যোগ দেয়‌নি।’