কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতের পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টে অভিযোগ দায়ের 

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ   |   ৫২ বার পঠিত
কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতের পক্ষপাতিত্বের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টে অভিযোগ দায়ের 

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

কুড়িগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ ইসমত আরার বিরুদ্ধে অসদচারণ, দুর্নীতি ও আসামির প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিচারাধীন মামলার বাদী কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগান।
 

সোমবার (০১ সেপ্টেম্বর) লিখিত অভিযোগটি পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগান।
 

অভিযোগপত্রের বর্ণনার বরাতে সাংবাদিক আরিফ জানান, কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন ও জেলা প্রশাসনের সাবেক তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে করা ফৌজদারি মামলার ১ নম্বর আসামি সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন গত ৩ আগস্ট হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে আগাম জামিন আবেদন করলেও হাইকোর্ট জামিন দেননি। বরং হাইকোর্ট আসামি সুলতানা পারভীনকে আদেশের তারিখ থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। 
 

কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও আসামি সুলতানা পারভীন জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আরিফের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু গত ৩১ আগস্ট জেলা জজ বরাবর আবেদন করেন। আবেদনে আইনজীবী বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু জেলা জজ আইনজীবী দুলুকে জানান, আসামি সুলতানা পারভীন গত ২১ আগস্ট সশরীরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন এবং ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ক্রিমিনাল মিসকেস নম্বর ১৩৪৫/২০২৫ যা নথি প্রাপ্তি সাপেক্ষে শুনানির জন্য ২/৯/২০২৫ তারিখ ধার্য রয়েছে।
 

তিনি আরও জানান, শুনানির সময় বিষয়টি অবগত হয়ে আইনজীবী দুলু গত ২১ আগস্ট আসামি সুলতানা পারভীন আদালতে সশরীরে উপস্থিত হননি মর্মে দৃঢ়ভাবে জানিয়ে আরেকটি লিখিত আবেদন দাখিল করে শুনানি করেন। এসময় কুড়িগ্রাম সরকারি পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) বজলুর রশিদ আদালতের কাছে একই ধরনের সবমিশন দেন। পিপি জানান, তিনি ওই তারিখে আসামি সুলতানা পারভীনকে আদালতে উপস্থিত হতে দেখেননি। এমনকি আসামির আবেদনে পিপির সইও নেই।
 

আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এর প্রেক্ষিতে আমার আইনজীবী আদালতের কাছে আসামির সশরীরে উপস্থিতির প্রমাণক হিসেবে ২১/০৮/২০২৫ তারিখের জেলা ও দায়রা জজের এজলাস কক্ষের ভেতরে স্থাপিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ আদালত চত্বরে স্থাপিত অন্য সব সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করে আসামি সুলতানা পারভীনের উপস্থিতির প্রমাণ প্রকাশ্য আদালতে প্রদর্শনের লিখিত আবেদন করেন।
 

কিন্তু দায়রা জজ আমার আইনজীবীর দাখিলকৃত দুটি লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে দেওয়া আদেশে সিসি টিভির ফুটেজ জব্দের আবেদনটি সুকৌশলে উল্লেখ না করে আসামির সশরীরে উপস্থিত না হওয়ার বিষয়টি এরিয়ে গেছেন। আবেদনটি গায়েব করে জালিয়াতি ও আসামির প্রতি পক্ষপাতিত্বের আশ্রয় নিয়েছেন, যা ন্যায় বিচারের পরিপন্থি।’
 

রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিক আরিফ বলেন, ‘আইনজীবীর কাছে বিস্তারিত বিষয় জানার পর আমার মনে হয়েছে— ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় আমার দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রতীক্ষা বিফলে যেতে বসেছে। বিচারক নিরপেক্ষ নন এবং তিনি আসামির পদ-পদবী বিবেচনায় পক্ষপাতিত্ব করছেন। আদালতের পবিত্রতা রক্ষা এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমি সার্বিক বিষয় জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রটার জেনারেল বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আশা করছি বিহিত পাবো।’
 

সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের ২১ আগস্ট আদালতে উপস্থিতির বিষয়টি জেলা আইনজীবী সমিতির কোনও আইনজীবী নিশ্চিত করতে পারেননি। আইনজীবীরা বলছেন, একটি আলোচিত মামলার আসমি আদালতে উপস্থিত হলে অন্তত এজলাস কক্ষে উপস্থিত থাকা আইনজীবীদের চোখে পড়তো। কিন্তু কারও চোখে না পড়ার বিষয়টি সন্দেহের উদ্রেক করে। এজলাস কক্ষের সিসি টিভির ফুটেজ যাচাই করলে সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যাবে।
 

কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতের আইনজীবী সাইদুর রহমান বলেন, ‘গত ২১ আগস্ট জেলা জজের এজলাস কক্ষে সারা দিন ছিলাম। কিন্তু সুলতানা পারভীনকে উপস্থিত হতে দেখিনি। আমার সঙ্গে থাকা অন্য আইনজীবীরাও দেখেননি।’
 

শুধু সাধারণ আইনজীবীরা নন, এজলাস কক্ষে সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) বজলুর রশীদও আসামি সুলতানা পারভীনের উপস্থিতির বিষয় জানেন না।
 

কুড়িগ্রাম পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোঃ বজলুর রশীদ বলেন, ‘২১ আগস্ট আমি পুরো সময় এজলাস কক্ষে ছিলাম। কিন্তু আসামি সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনকে আদালতে সশরীরে উপস্থিত হতে দেখিনি। আসামির আবেদনের কপিতে আমার সইও নেওয়া হয়নি।’
 

সাংবাদিক আরিফের আইনজীবী ও সাবেক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আজিজুর রহমান দুলু বলেন, ‘ আমি নিজেই সোমবার (৩১ আগস্ট) শুনানি করেছি। আবেদনের শুনানিতে উনি (জেলা জজ) যেসব কথা বলেছেন, তা আসামির পক্ষে ওকালতির শামিল। কর্তৃপক্ষ এজলাসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখলে স্বচ্ছ কাচের ন্যায় প্রমাণিত হবে— জেলা জজ পক্ষপাতিত্ব করেছেন। আসামির উপস্থিতির প্রমাণক হিসেবে সিসি টিভি ফুটেজ জব্দ ও প্রকাশ্য আদালতে প্রদর্শনের যে আবেদন আমরা দিয়েছি, সে বিষয়ে তিনি আদেশে উল্লেখ না করে কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলে আমার মক্কেল রিগানের অভিযোগের সত্যতা পাবে বলে আমি মনে করি। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষ অনতিবিলম্বে প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে আমরা ভবিষ্যতে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করবো।’