পবিত্র শবে বরাতের আলোচনা, কুরআন ও হাদীসের দলীল, গুরুত্ব, তাৎপর্য ও আমল।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
যে সকল রজনীতে আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের প্রতি করুণার দৃষ্টি দান করে থাকেন, শবে বরাত তারই অন্যতম। রাতটি হলো শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত।
প্রিয় নবী ﷺ সলফে সালেহীন এবং বিজ্ঞ মনীষীগণ এ রাতটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পালন করেছেন। অনুরূপভাবে যুগে যুগে মুসলমানগণ এরই ধারাবাহিকতায় এ রাতটি পালন করে আসছেন।
আরবী ‘শা’বান’ (شعبان،)যথা شعب،او تشعب
থেকে গৃহীত। এর অর্থ ছড়ানো ও শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট হওয়া।
ইমাম রাফে’ হযরত আনাস (রা:)-র উক্তি লিখেছেন, হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, এ মাসের নাম ‘শা’বান’ এ জন্য রাখা হয়েছে যে, এ মাসে রোযা পালনকারীর সাওয়াব, মঙ্গল ও সৌন্দর্য শাখা-প্রশাখার ন্যায় বিস্তার লাভ করে, যাতে রোযাদার জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে।
আরবী ১২ মাসের অষ্টম মাস শাবান। শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রটি কোরআনের ভাষায়- ليلة مباركة (লাইলাতুম মুবারাকা) বা বরকতময় রজনী,
আর হাদীসের ভাষায়-ليلة النصف من شعبان (লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান) বা শাবানের মধ্য রজনী।
তাফসীরের ভাষায় ليلة الصك (লাইলাতুছ্ ছাক) বা সনদপ্রাপ্তির রাত্রি, ليلة النجاة (লাইলাতুন নাজাহ) তথা মুক্তি রজনী। আর আমাদের উপমহাদেশে যাকে শবে বরাত বলে আমরা জানি তা ফারসী ভাষা থেকে উদ্ভূত। শব (شب) বা রাত ও বরাত (برات) বা ভাগ্য, পবিত্রতা, নাজাত, মুক্তি, ত্রাণ ইত্যাদি। এছাড়াও এর আরো অনেক নাম রয়েছে। যেমন- لیلة البراءة বা পাপ মুক্তির রজনী,لیلة القسمة বা বন্টনের রজনী ليلة التكفير বা গুণাহের কাফ্ফারার রাত,لیلة الاجابة বা দোয়া কবুলের রাত, لیلة عید الملاٸکةবা ফেরেস্তাদের ঈদের রাত, ليلة الجاٸزة বা প্রতিদানের রাত।
পবিত্র কোরআন ও নির্ভরযোগ্য মুফাসসিরগণের মতে পবিত্র শবে বরাতঃ--
মধ্য শাবানের রাত্রি যা কোরআনের পরিভাষায় লাইলাতুম মুবারাকা নামে পরিচিত। এ রাতটির মর্যাদা, অস্তিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব কোরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
ইদানিং একটি ভ্রান্ত-মতবাদী দল বিভিন্ন মিডিয়ায় তাদের বক্তব্য, আলোচনায় এবং লেখনীতে সর্বদা এ কথা বলে বেড়াচ্ছে যে, লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাতের নির্ভরযোগ্য কোন দলীল কোরআন ও হাদীস শরীফে নেই। যা আছে তাও মাওজু তথা বানোয়াট বা জাল কিংবা সাংঘাতিক পর্যায়ের দুর্বল। অথচ, দেখুন পবিত্র কোরআনে কারীম ও নির্ভরযোগ্য তাফসিরের কিতাবের ভাষ্য-
সূরা দুখানের ১-৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন
সূরা আদ-দুখান (الدّخان), আয়াত: ১
উচ্চারণঃ হা-মীম। ওয়াল কিতা-বিল মুবীন। ইন্নাআনঝালনা-হূফী লাইলাতিম মুবা-রাকাতিন ইন্না-কুন্না-মুনযিরীন।ফীহা-ইউফরাকুকুল্লুআমরিন হাকীম।
হা-মীম, এ স্পষ্ট কিতাবের শপথ! নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে বন্টন করে দেওয়া হয় প্রত্যেক হিকমতের কাজ।
১.। তাফসীরে জালালাইন শরীফে ৪১০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। আর বরকতময় রাত হল লাইলাতুল ক্বদর (ক্বদরের রাত) অথবা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান (শাবানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত)। কেননা এই রাতে উম্মুল কিতাব (কোরআন শরীফ) ৭ম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে (১ম আসমান) নাযিল হয়েছে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।
২।তাফসীরে জালালাইন শরীফে ৪১০ পৃষ্ঠায় ২৪নং হাশিয়ায় বর্ণিত আছে-
৩।. তাফসীরে তাবারী শরীফ পৃষ্ঠা-২২, খন্ড ১০ -এ বর্ণিত আছে-
আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ-
এর তাফসীরে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মধ্য শাবানের রাত্রিতে বছরের সকল ব্যাপার চূড়ান্ত করা হয়, জীবিত ও মৃতদের তালিকা লেখা হয় এবং হাজীদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকা থেকে একজনও কমবেশি হয় না।
অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ইবনুল মুনজির ও ইবনু আবি হাতেম (রা:)। এরূপ রুহুল মায়ানীতেও আছে।
৪। তাফসীরে কুরতুবী পৃষ্ঠা-১২৬, খন্ড ১৬ এ বর্ণিত আছে :
ولها أربعة أسماء: الليلة المباركة, وليلة البراءة, وليلة الصك, وليلة النصف من شعبان-
ইমাম কুরতুবী (রা:) বলেন, এ রাতের ৪ টি নাম আছে-
ক. লাইলাতুম মুবারাকা,খ.লাইলাতুল বারাআত
গ. লাইলাতুছ্ ছাক,ঘ. লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান।
৪.। তাফসীরে বাগভী পৃষ্ঠা-২২৮, খন্ড ৭ -এ বর্ণিত আছে :
নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন শবে বরাতের রাতে এবং তা সংশ্লিষ্ঠ দায়িত্ববান ফেরেস্তাদের কাছে ন্যস্ত করেন শবে ক্বদরের রাতে।
এ ছাড়া ও এ রকম ২৩১ টি তাফসীর গ্রন্থে লাইলাতুম মোবারাকা বলতে শবে ক্বদরের পাশাপাশি মধ্য শাবানের অর্থাৎ ১৪ শাবানের রাতের কথাও গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে।
তাফসিরে রুহুল বয়ান ৩য় খন্ড ৫৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে- আল্লাহ পাক জাল্লা শানুহু উক্ত রুজি রোজগার ও রিজিক বন্টনের আনুষ্ঠানিক দায়িত্বভার হযরত মিকাঈল (আঃ) এর উপর, কার্যসমূহ ও বন্দেগীর দায়িত্ব ভার ১ম আসমানের ফেরেস্তা হযরত ইসরাইল (আঃ) এর উপর, বিপদাপদ ও দুঃখ দুর্দশায় দূরীকরনের দায়িত্বভার হযরত আযরাইল (আঃ) এর উপর অর্পণ করেন।
শবে বরাত যে মুসলিম উম্মার জন্য একটি বরকতময় ও ফজিলত পূর্ণ রাত্রি এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। সমস্ত মুফাসসিরীন ও মুহাদ্দিসীনে কেরাম এ রাতকে একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন।
গাউসূল আজম বড় পীর শেখ সৈয়্যদ আবূ মুহাম্মদ আবদুল কাদের জিলানী (র:) তদ্বীয় কিতাব “গুনিয়াতুত্ত্বালেবীন” এর ১ম খন্ডে-এ ৬৮৪ পৃষ্টায় উল্লেখ করেন-
অর্থাৎ:- আল্লাহ পাক এরশাদ করেন- হা-মী-ম প্রকাশ্য মহাগ্রন্থ আল কোরআনের শপথ- যে কোরআনকে আমি মুবারক (বরকতময়) রাতে নাযিল করেছি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) এর তাফসীর প্রসংগে বলেন- কিয়ামত পর্যন্ত যা হওয়ার আছে- তা আল্লাহ পাক ফয়সালা করে দিয়েছেন। শপথ উজ্জল প্রকাশ্য গ্রন্থ তথা কোরআনের যাকে আমি বরকতময় রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যবর্তী রজনীতে নাযিল করেছি- ঐ ১৫ শাবানের রাতটি হচ্ছে লাইলাতুল বরাআত- এবং অধিকাংশ মোফাসসিরীনে কেরাম এ মত পোষন করেছেন।
হুজুর গাউছে পাক ( رضی الله عنه) তদ্বীয় কিতার “গুনিয়াতুত্ত্বালেবীন” এর ১ম খন্ড-এ ১৮৭ পৃষ্টায় আরো বলেন-
অর্থাৎঃ লাইলাতুল বরাতকে এ কারণে “মুবারক” তথা বরকতময় বলা হয়েছে- যেহেতু এ পবিত্র রাতে দুনিয়াবাসীদের জন্য অফুরন্ত রহমত, বরকত ও কল্যাণ নাযিল করা হয়ে থাকে। অধিকন্তু পৃথিবীবাসী মুসলিমদেরকে এ রাতে ক্ষমা করা হয়ে থাকে।
মালেকী মাযহাবের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা শেখ আহমদ ছাভী (র:) সূরা দুখানের তাফসীরে তদ্বীয় তাফসীরে ছাভী-র ৪র্থ খন্ডের ৪০ পৃষ্টায় উল্লেখ করেন-
অর্থাৎ ঐ বরকতময় রজনী হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত্রি (মোফাসসিরীনে কেরামের অন্যতম মোফাসসির) বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রা:) ও অন্যান্য তাফসীরকারকদের একদলের অভিমত। তারা এর কয়েকটি কারণও উল্লেখ করেছেন। শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত্রির চারটি নামে নামকরণ করেছেন। যেমন-
১। লাইলাতুম মুবারাকাহ- বরকতময় রজনী।
২। লাইলাতুল বারাআত- মুক্তি বা নাজাতের রাত্রি।
৩। লাইলাতুর রহমাহ- রহমতের রাত্রি।
৪। লাইলাতুছ ছাক- সনদপ্রাপ্তির রাত্রি ,ইত্যাদি।
পবিত্র শাবান মাস। এ মাসে রোজা পালনের গুরুত্বের উপর বোখারী ও মুসলিম, তিরমিযীসহ অনেক বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থের বর্ণনা আমরা লক্ষ্য করেছি। অনুরূপভাবে এ মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত তথা শবে বরাত সম্পর্কে ছিহাহ্ ছিত্তাহর উল্লেখযোগ্য কিতাবাদিসহ নানা নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে প্রমাণ মেলে:
১।কালব গোত্রের মেষপালের পশমের চাইতেও অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ মাফ করেন।
দলীল নং-০১
৪-২/১৩৮৯। আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি নাবী ﷺ কে (বিছানায়) না পেয়ে তাঁর খোঁজে বের হলাম। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি বাকির কবরস্থানে, তাঁর মাথা আকাশের দিকে তুলে আছেন। তিনি বলেন: হে আয়িশাহ! তুমি কি আশঙ্কা করেছো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন? আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তা নয়, বরং আমি ভাবলাম যে, আপনি হয়তো আপনার কোন স্ত্রীর কাছে গেছেন। তিনি বলেনঃ মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে জালওয়া প্রকাশ করেন এবং কালব গোত্রের মেষপালের পশমের চাইতেও অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ মাফ করেন।
তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: মুসলিম ৯৭৩-৭৪, তিরমিযী ৭৩৯, নাসায়ী ২০৩৭, আহমাদ ২৫৪৮৭। মিশকাত ১২৯৯।
বিঃদ্রঃ আল্লাহ উঠা -নামা যাওয়া আসা থেকে পবিত্র।
২।মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া তাঁর সৃষ্টির সকলের গুনাহ ক্ষমা করে দেন।---
১--১৩০৬-[১২] আবূ মূসা আল আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা শা‘বান মাসের পনের তারিখ রাত্রে দুনিয়াবাসীর প্রতি ফিরেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া তাঁর সৃষ্টির সকলের গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
(হাসান : ইবনু মাজাহ্ ১৩৯০, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৫৬৩, সহীহুল জামি‘ ১৮১৯।তাখরীজ জামি সগীর ১৮১৯ হাসান, মিশকাত ১৩০৬ যঈফ, সহীহা ১৫৬৩ সহীহ, মিশকাত ১৩০৬, ১৬০৭, ফিলাল ৫১০, সহীহ আবী দাউদ ১১৪৪, ১৫৬৩।
১৩০৭-[১৩] ইমাম আহমাদ (রহঃ) এ হাদীসটি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের এক বর্ণনায় এ বাক্যটি আছে যে, কিন্তু দু’ লোকঃ ‘হিংসা পোষণকারী ও আত্মহত্যাকারী ব্যতীত আল্লাহ তার সকল সৃষ্টিকে মাফ করে দেন)।[1]হাসান : আহমাদ ৬৬৪
এ রাতে বান্দাদের ‘আমাল উপরে উঠিয়ে নেয়া হয়-
--৩-১৩০৫-[১১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী ﷺআমাকে বললেনঃ তুমি কি জানো এ রাতে অর্থাৎ শা‘বান মাসের পনের তারিখে কি ঘটে? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো জানি না। আপনিই বলে দিন এ রাতে কি ঘটে? রসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ বানী আদামের প্রতিটি লোক যারা এ বছর জন্মগ্রহণ করবে এ রাতে তাদের নাম লেখা হয়। আদম সন্তানের যারা এ বছর মৃত্যুবরণ করবে এ রাতে তা ঠিক করা হয়। এ রাতে বান্দাদের ‘আমাল উপরে উঠিয়ে নেয়া হয়। এ রাতে বান্দাদের রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) আসমান থেকে নাযিল করা হয়।‘আয়িশাহ্ (রাঃ) প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! কোন লোকই আল্লাহর রহমাত ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না? তিনি (ﷺ ইরশাদ করলেনঃ হ্যাঁ! কোন মানুষই আল্লাহর রহমাত ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তিনি (ﷺ) এ বাক্যটি তিনবার উচ্চারণ করলেন। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) আবেদন করলেন, এমনকি আপনিও নয়! এবার তিনি (ﷺ) আপন মাথায় হাত রেখে বললেন, আমিও না, তবে আল্লাহ তার রহমাত দ্বারা আমাকে আবৃত করে নেবেন। এ বাক্যটিও তিনি তিনবার উচ্চারণ করলেন। (বায়হাক্বী এ বর্ণনাটি দা‘ওয়াতুল কাবীর নামক গ্রন্থে নকল করেছে)[1]
ব্যাখ্যা: এ রাতে আদম সন্তানের ‘আমালনামা উঠানো হবে। আর এ জন্যই ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছেন ‘‘কোন লোকই আল্লাহর রহমাত ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না?’’ এ ব্যাপারে ইবনু হাজার (রহঃ) বলেনে যে, تُرْفَعُ أَعْمَالُهُمْ
(‘আমালনামা উঠানো হবে) এর অর্থ হলো تُرَفَعُ أَعْمَالُهُمْ إِلَى الْمَلَإِ الْأَعْلى
অর্থাৎ ‘আমালনামাগুলো ঊর্ধ্বতন মালায়িকাহ্-এর (ফেরেশতাগণের) নিকট উঠানো হবে এবং প্রতিদিনের ‘আমাল, তথা রাত্রের ‘আমাল ফাজ্রের (ফজরের) সলাতের পর, দিনের ‘আমাল ‘আসর সলাতের পর ও প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবারের ‘আমালনামা উঠানো সংক্রান্ত হাদীস আলোচ্য হাদীসের বিরোধী নয়। কেননা প্রথমটি পূর্ণ বছরের ‘আমাল উঠানো সম্পর্কে, দ্বিতীয়টি প্রতি দিন-রাতের সাথে নির্দিষ্ট এবং তৃতীয়টি পূর্ণ সপ্তাহের ‘আমালনামা সংক্রান্ত। আর এ ‘আমালনামা উঠানোর বারংবার উল্লেখ (দিন, সপ্তাহ, বছর) আনুগত্যশীলদের মর্যাদা বৃদ্ধি ও নাফরমানদের ধমকের জন্য। মিরকাতেও অনুরূপ আলোচনা রয়েছে।
৩।যে মুসলমান বান্দা আল্লাহর সহিত কাহাকেও শরীক করে না তাহা কে ক্ষমা করিয়া দেওয়া হয়ঃ-
রেওয়ায়ত ১৭. আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলিয়াছেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার বেহেশতের দ্বার খুলিয়া দেওয়া হয় এবং যে মুসলমান বান্দা আল্লাহর সহিত কাহাকেও শরীক করে না তাহা কে ক্ষমা করিয়া দেওয়া হয়, তবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে নিজ ভাইয়ের সহিত শক্রতা পোষণ করে। বলা হইতে থাকে, তাহাদের পরস্পর মেলামেশা না হওয়া পর্যন্ত তাহদের ব্যাপারে অপেক্ষা কর অর্থাৎ যতক্ষণ তাহারা আপস না করে তাহাদেরকে ক্ষমা করা হইবে না।
৪। বান্দা কে ক্ষমা করার জন্য আগাম ঘোষণাঃ--রাতে দাঁড়িয়ে (নামায পড়ো এবং এর দিনে সওম রাখো
৫--১/১৩৮৮। আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে (নামায পড়ো এবং এর দিনে সওম রাখো। কেননা এ দিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ পৃথিবীর নিকটতম আকাশে তার কুদরতী জালওয়া প্রকাশ করেন এবং বলেনঃ কে আছো আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিযিকপ্রার্থী, আমি তাকে রিযিক দান করবো। কে আছো রোগমুক্তি প্রার্থনাকারী, আমি তাকে নিরাময় দান করবো। কে আছো এই প্রার্থনাকারী। ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত (তিনি এভাবে আহবান করেন)।ইবনু মাজাহ্ ১৩৮৮,
৫।আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় সওম রাখে,
২০৭৪-[৩৯] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় সওম রাখে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জাহান্নাম থেকে ওই উড়তে থাকা কাকের দূরত্বের পরিমাণ দূরে রাখবেন, যে কাক বাচ্চা অবস্থায় উড়তে শুরু করে বৃদ্ধ অবস্থায় মারা যায়। (আহমদ, বায়হাক্বী)[1]
আহমাদ ১০৪২৭,
৬।আমাদের রব প্রত্যেক রাতে তার কুদরতী জালওয়া প্রকাশ করেন
৭৪৯৪ আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন আমাদের রব প্রত্যেক রাতে যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকী থাকে তখন পৃথিবীর আসমানে তার কুদরতী জালওয়া প্রকাশ করেন এবং বলেন, আমার কাছে যে দু‘আ করবে, আমি তার দু‘আ কবূল করব। আমার কাছে যে চাইবে, আমি তাকে দেব। আমার কাছে যে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তাকে আমি ক্ষমা করে দেব। [১১৪৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৯৭৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৮৬)
৬) দলিলঃ--
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন,যখন পনেরই শাবানের রাত হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে তশরীফ আনেন এবং সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, মুশরিক ও অপর ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত।
মুসনাদে বাযযার ১:২০৬, হাদীস নং-৮০; ইবনে আসেম আস সুন্নাহ-৫০৯; দারে ক্বুতনী আন নুযুল-৭৫,৭৬; ইবনে খুযাইমাহ আত তাওহীদ-৪৮; আলী মুরুযী মুসনাদে আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-১০৪; আবু নুয়াইম তারিখে ইস্পাহান-২:২;হায়ছামী মাজমাউজযাওয়ায়িদ-১২৯৫৭; সুয়ুতী তাফসীরে দুররে মানসুর, সুরা দুখান-৭:৪০৩ [3]
(৭) দলিলঃ--
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- আল্লাহ তায়ালা শ’বানের পনেরতম রাতে সিদ্ধান্তসমুহ চুড়ান্ত করেন এবং শবে ক্বদরে তা বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের সোপর্দ করেন।
— তাফসীরে খাজিন ৪র্থ খণ্ড,পৃষ্ঠাঃ১১২/১১৬; তাফসীরে বাগভী আল ইহিয়ায়ুত তুরাস, ৪:১৭৪, সুরা দুখান; তাফসীরে ক্বুরতুবী, ১৬:১২৭, সুরা দুখান; ইবনে আ’দিল আল লুবাব ফি উলুমিল কিতাব-১৭:৩১১...
(৮) দলিল--
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন এমন পাঁচটি রাত আছে যে রাতগুলোয় দু’আ ফেরত হয়না। ওইগুলো হল- জুমু’আর রাত, রজব মাসের প্রথম রাত, শ’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত এবং দুই ঈদের রাত অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাত।মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, কিতাবুস সিয়াম হাদীস নং-৭৯২৭; বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমান-৩৪৪০; ফাজায়িলুল আওকাত-১৪৯
(৯) দলিল--
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন- আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে স্বীয় মাখলুকের প্রতি রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। অতঃপর দু শ্রেণীর বান্দা ব্যতীত সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। তারা হল মুসলমান ভাইয়ের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারী এবং অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যাকারী।( মুসনাদে আহমদ-৬৬৪২; আত তাগরীব; হায়ছামী মাজমাউজ যাওয়ায়িদ-১২৯৬১; তাফসীরে রূহুল মা’আনী, সুরা দুখান, ১৮:৪২৩/১৩:১১০ [4])
(১০) দলিল--
হযরত কাসীর বিন মুররাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন- শাবানের মধ্য রাত্রিতে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা মুশরিক ও কলহকারী ব্যতীত সকল দুনিয়াবাসীদের ক্ষমা করে দেন। বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমান হাদীস নং-৩৫৫০; আলবানী সহীহ আত তারগীব ওয়াত তাহরিব-২৭৭০ [5]
(১১) দলিল--
হযরত কাসীর বিন মুররাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন- শাবানের মধ্য রাত্রিতে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং মুশরিক ও কলহকারী ব্যতীত সকল ক্ষমাপ্রার্থী দুনিয়াবাসীদের ক্ষমা করে দেন। মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, কিতাবুস সাওম-৭৯২৩; মুসান্নাফে আবী শায়বাহ-২৯৮৫৯; আন নুযুল দারে ক্বুতনী-৮২, ৮৩, ৮৪; বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমান হাদীস নং ৩৫৫০, ৩৫৪৯
(১২) দলিল--
হযরত আবু সা’অলাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন- যখন পনেরই শাবানের রাত হয়,আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৃষ্টির প্রতি বিশেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং মুমিনদের ক্ষমা করে দেন ও কাফিরদের অবকাশ দেন। আর হিংসা বিদ্বেষ পোষণকারীদের আহ্বান করেন অবকাশ দেন (তাওবার জন্য) যতক্ষণ তাদের হিংসার কারণে তারা তার নিকট তওবা না করে। বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমান হাদীস নং-৩৫৫১; ইবনে আসেম আস সুন্নাহ-৫১০; তাবরানী আল মু’জামুল কবীর ২২: ২২৩, ২২৪, হাদীস নং ৫৯০, ৫৯৩; বায়হাক্বী আস সুনানুস সগীর-১৪২৬; ফাজায়িলুল আওকাত-২৩; দার ক্বুতনী আন নুযুল-৭৮,৮১; হায়ছামী মাজমাউজ যাওয়ায়িদ ১২৯৬২; আলবানী সহীহ আত তারগীব ওয়াত তাহরিব ২৭৭১; সহীহুল জামে ৭৭১; সুয়ুতী তাফসীরে দুররে মানসুর, সুরা দুখান-৭:৪০৩, কানযুল উম্মাল-৩৫১৮৩ [6].
(১৩) দলিল
হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, যখন পনেরই শাবানের রাত হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, মুশরিক ও অপর ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত। মুসনাদে বাযযার ১৬:১৬১ হাঃনং-৯২৬৮; হায়ছামী মাজমাউজ যাওয়ায়িদ ১২৯৫৮; নুজহাতুল মাজালিস ওয়া মুনতাখাবুন নাফাইস, বাব,ফাদলু শ’বান ওয়া ফাদলু সালাতুত তাসবীহ, ১:১৪৬/১:১৬১ [7]
(১৪) দলিল--
হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা রাতে সালাত আদায় করছিলেন। তিনি সিজদায় গিয়ে দীর্ঘ সময় সিজদায় থাকলেন। এমনকি আমার মনে হলো যে, তাঁর ওফাত হয়ে গেছে। আমি যখন এমনটি দেখলাম, তখন শোয়া থেকে উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, ফলে তিনি নড়ে উঠলেন। তখন আমি (বিছানায়) ফিরে গেলাম। অতঃপর যখন তিনি সিজদা থেকে মস্তক উঠালেন এবং নামায শেষ করলেন তখন বললেন, হে আয়েশা, তুমি কি মনে করেছিলে যে নবী ﷺ তোমার সাথে প্রতারণা করছেন? আমি বললাম, আল্লাহর শপথ, আমি এমনটি মনে করিনি। বরং আপনার দীর্ঘ সিজদার কারনে আমার মনে হয়েছে যে, আপনার ওফাত হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, তুমি কি জান এটি কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম অবগত। তিনি বললেন এটি মধ্য শাবানের রাত। আল্লাহ তাআলা এ রাতে তার বান্দাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। যারা ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদেরকে ক্ষমা করেন, যারা দয়া প্রার্থনা করে তাদেরকে দয়া করেন এবং যারা বিদ্বেষী তাদেরকে তাদের অবস্থাতেই রেখে দেন।বায়হাক্বী শোয়া’বুল ঈমান-৩৬৭৫/৩৫৫৪; ফাযায়িলুল আওকাত-২৬; সুয়ুতী আদ দুররুল মান্সুর,সুরা দুখান,৭:৪০৩,৪ [8]
(১৫) দলিলঃ---
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম ﷺ ইরশাদ করেন, চারটি রাত এমন রয়েছে যেগুলোর ফযীলত তাদের দিনের ন্যায় দিনের ফযীলত রাতের ন্যায়। যাতে আল্লাহ তা’আলা বান্দাহদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেন, তাঁর বান্দাদের মুক্ত করেন এবং অফুরন্ত নি’আমত প্রদান করেন। তা হল- কদরের রাত ও তার পরবর্তী দিন, আরাফার রাত ও তার পরবর্তী দিন, শাবানের মধ্য রাত্রি (শবে বরাত) ও তার পরবর্তী দিন, জুম’আর রাত ও তার পরবর্তী দিন। দায়লামি, কানযুল উম্মাল-৩৫২১৪; সুয়ুতী জামেউল আহাদীস-৩০৮০..
(১৬) দলিল--
হযরত উসমান বিন আবীল আ’স রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন-রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন,যখন পনেরই শাবানের রাত হয়,তখন আহবানকারী আহবান করবে এই বলে, আছে কেউ মুক্তিকামী গুনাহ হতে ? তাকে ক্ষমা করা হবে। কেউ আছে যে কিছু চাইবে তাকে তা দান করা হবে। প্রত্যেক কামনাকারীকে প্রদান করা হবে শুধুমাত্র মুশরিক ও ব্যভিচারকারী মহিলা ব্যতীত।বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমান হাদীস নং-৩৫৫৫; ফাজায়েলু আওকাত-২৫; কানযুল উম্মাল-৩৫১৭৮; সুয়ুতী তাফসীরে দুররে মানসুর, সুরা দুখান-৭:৪০৩
(১৭) দলিল-
আতা বিন ইয়াসার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, শা’বানের মধ্য রজনীতে (শবে বরাতে) মানুষের হায়াত পূর্ণ করা হয়। অথচ লোকটি ভ্রমণকারী হিসেবে বের হয়েছে, এমতাবস্থায় তার হায়াত পূর্ণ করা হয়েছে এবং মৃত্যু তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং বিবাহ করেছে এমতাবস্থায় তার হায়াত শেষ করা হয়েছে ও মৃত্যু তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ জীবন, মৃত্যু ইত্যাদি এ রাতে নির্ধারিত হয়।
— মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, কিতাবুস সাওম-৭৯২৫; সুয়ুতী তাফসীরে দুররে মানসুর, সুরা দুখান-৭:৪০৩
(১৮) দলিল--
হযরত ইকরামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি সুরা দুখানের আয়াত (এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ কাজের ফয়সালা দেওয়া হয়। আয়াত-৪)এর তাফসীরে বলেন, শাবানের মধ্য রজনীতে আল্লাহ তায়ালা পরবর্তী বছরে যে সকল ঘটনা সংগঠিত হবে (বাজেট) তা লিপিবদ্ধ করবেন যারা মৃত্যু বরণ করবে তাদের মধ্য থেকে কারো কারো হায়াত বৃদ্ধি করা হবে এবং যারা আল্লাহর পবিত্র গৃহের তাওয়াফ করবে অর্থাৎ হজ্জ্ব আদায় করবে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হবে। অতঃপর এদের মধ্যে কোন কিছু বৃদ্ধি পাবে না এবং তাদের মধ্য হতে কমতিও হবে না। সুয়ুতী আদ দুররুল মান্সুর,সুরা দুখান,৭:৪০১; শিহাব উদ্দীন আলুসী রুহুল মা’আনী, সুরা দুখান,১৩:১১২/১৮:৪২৭; ইবনে জারীর তাবারী তাফসীরে ত্ববারী জামেউল বয়ান, সুরা দুখান,২২:১০; তাফসীরে সা’লাবী ৮:৩৪৯; তাফসীরে বাগভী, সুরা দুখান ৪:১৭৩; তাফসীরে মাযহারী ৮:৩৬৮
(১৯) দলিল-
উসমান বিন মুগীরাহ বিন আখফাশ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺইরশাদ করেন, শবে বরাতে এক শা’বান হতে আর এক শা’বানের মধ্যকার হায়াত কর্তন করা হয়। অথচ মানুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় সন্তান সন্ততি জন্ম দেয় এমতাবস্থায় তার নাম মৃত্যুর তালিকায় নেয়া হয়।(বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমান হাদীস নং-৩৫৫৮; শিহাব উদ্দীন আলুসী রুহুল মা’আনী, সুরা দুখান,১৩:১১২/১৮:৪২৭; ইবনে জারীর তাবারী তাফসীরে ত্ববারী জামেউল বয়ান, সুরা দুখান,২২:১০; কানযুল উম্মাল-৪২৭৮০; তাফসীরে সা’লাবী ৮:৩৪৯; তাফসীরে খাজিন ৪:১১২/১১৬; শওকানী ফাতহুল ক্বাদীর, সুরা দুখান,৪:৬৫৫; সুয়ুতী জামেউল আহাদীস-১০৯১৭; দায়লামী ২:৭৩-২৪১০; তাফসীরে বগভী সুরা দুখান ৪:১৭৪; তাফসীরে মাযহারী ৮:৩৬৮
হাদিসটি হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতেও বর্ণিত হয়েছে। সুয়ুতী আদ দুররুল মান্সুর, সুরা দুখান,৭:৪০১; শওকানী ফাতহুল ক্বাদীর, সুরা দুখান ৪:৬৫৫; মুসনাদে দায়লামী-২৪১০
(২০) দলিল
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়ায়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, শা’বানের মধ্য রজনীতে যাবতীয় বিষয়ের ফয়সালা করা হয় এবং উহা রমযানের ২৭ তারিখ ক্বদরের রাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দায়িত্বশীলদের নিকট সোপর্দ করা হয়।শিহাব উদ্দীন আলুসী রুহুল মা’আনী,সুরা দুখান,১৩:১১২/১৮:৪২৭
..(২১) দলিল--
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়ায়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নিশ্চই আল্লাহ্ তা’আলা শা’বানের মধ্য রজনীতে যাবতীয় বিষয়ের ফয়সালা করেন এবং উহা ক্বদরের রাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দায়িত্বশীলদের নিকট সোপর্দ করেন। তাফসীরে বগভী, সুরা দুখান ৪:১৭৪; তাফসীরে খাযিন, সুরা দুখান ৪:১১৬, আল লুবাব ফি উলুমিল কিতাব ১৭:৩১১; তাফসীরে মাযহারী ৮:৩৬৮
(২২) দলিল--
হযরত আবু উমামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন এমন পাঁচটি রাত আছে যে রাতগুলোয় দু’আ ফেরত হয়না। ওইগুলো হল-জুমু’আর রাত,রজব মাসের প্রথম রাত,শ’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত এবং দুই ঈদের রাত অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাতসুয়ুতী জামেউল আহাদীস-১১৯৭৯; দায়লামীতথ্যসূত্র1.হাদিসটি ভিন্ন সূত্রে সহীহ, বায়হাক্বী একে মুরসাল বলেন2. হাসান সহীহ, এর বর্ণনাকারী গণও নির্ভরযোগ্য। ইবনে হিব্বান একে সহীহ বলেছেন
3. ↑ সহীহ লিগাইরিহি4. ↑ হাদিসটি সহীহ , রাবীর স্তরে ইবনে লাহীয়াহ ব্যতীত বাকী সবাই নির্ভরযোগ্য ।
5. ↑ সহীহ লিগায়রিহি, বায়হাক্বী একে মুরসাল বলেছেন
6. ↑ সহীহ লিগাইরিহি, বায়হাক্বী মুরসাল বলে উল্লেখ করেন।7. ↑ মারফু, এর সনদে হিশাম বিন আব্দুর রহমান অজ্ঞাত এ ছাড়া বাকীরা নির্ভরযোগ্য।
8. ↑ হাদীসটি মুরসাল.....
৭।জান্নাতের দ্বারসমূহ খুলে দেওয়া হয়।
(২১৫৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘‘সোম ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দ্বারসমূহ খুলে দেওয়া হয়। (ঐ দিনে) প্রত্যেক সেই বান্দাকে ক্ষমা ক’রে দেওয়া হয়, যে আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থাপন করেনি। কিন্তু সেই ব্যক্তিকে নয়, যার সাথে তার মুসলিম ভাইয়ের শত্রুতা থাকে। (তাদের সম্পর্কে) বলা হয়, এদের দু’জনকে সন্ধি হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও, এদের দু’জনকে সন্ধি হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও।’’
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘প্রত্যেক বৃহস্পতি ও সোমবারে আমলসমূহ উপস্থাপন করা হয়।’’ আর অবশিষ্ট হাদীসটি অনুরূপ। (মুসলিম ৬৭০৯-৬৭১১, ইবনে মাজাহ ১৭৪০, আবূ দাউদ, তিরমিযী)
৬৯৪৭-(২৭/২৭৮৯) সুরায়জ ইবনু ইউনুস ও হারূন ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ আমার হাত ধরে বললেন, আল্লাহ তা’আলা শনিবার দিন মাটি সৃষ্টি করেন এবং এতে পর্বত সৃষ্টি করেন রবিবার দিন। সোমবার দিন তিনি বৃক্ষরাজি সৃষ্টি করেন। মঙ্গলবার দিন তিনি বিপদাপদ সৃষ্টি করেন। তিনি নূর সৃষ্টি করেন বুধবার দিন। তিনি বৃহস্পতিবার দিন পৃথিবীতে পশু-পাখি ছড়িয়ে দেন এবং জুমুআর দিন আসরের পর জুমুআর দিনের শেষ মুহূর্তে অর্থাৎ আসর থেকে নিয়ে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে সর্বশেষ মাখলুক আদাম (আঃ) কে সৃষ্টি করেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৯৭,ইসলামিক সেন্টার ৬৮৫১)
৮।সম্পর্ক ছিন্নকারী দু’ ব্যক্তি ব্যতীত প্রত্যেক মুসলমানকে ক্ষমা করেন
২/১৭৪০। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী ﷺসোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রেখ থাকেন। তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা সোমবার ও বৃহস্পতিবার এ দু’ দিন পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারী দু’ ব্যক্তি ব্যতীত প্রত্যেক মুসলমানকে ক্ষমা করেন। তিনি (ফেরেশ তাদের) বলেনঃ তারা সন্ধিতে আবদ্ধ হওয়া অবধি তাদের ত্যাগ করো।তিরমিযী ৭৪৭, তা’লীকুর রগীব ৩২/৮০-৮৫
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সোমবার ও বৃহস্পতিবারে (আল্লাহর দরবারে বান্দার) ‘আমাল পেশ করা হয়। তাই আমি চাই আমার ‘আমাল পেশ করার সময় আমি সওম অবস্থায় থাকি।
[1] সহীহ লিগায়রিহী : তিরমিযী ৭৪৭, শামায়িল ২৫৯, ইরওয়া ৯৫৯, সহীহ আত্ তারগীব ১০৪১, সহীহ আল জামি‘ ২৯৫৯।
(১১১৬) আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী ﷺ শাবান মাস চাইতে বেশি নফল সিয়াম অন্য কোন মাসে রাখতেন না। নিঃসন্দেহে তিনি পূর্ণ শাবান মাস সিয়াম রাখতেন।’অন্য বর্ণনায় আছে, ‘অল্প কিছুদিন ছাড়া তিনি পূর্ণ শাবান মাস সিয়াম রাখতেন।’ (বুখারী ১৯৭০, মুসলিম ২৭৭৮)
২/১২৫৫। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী ﷺ শাবান মাস চাইতে বেশি নফল রোযা অন্য কোন মাসে রাখতেন না। নিঃসন্দেহে তিনি পূর্ণ শাবান মাস রোযা রাখতেন।’
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘অল্প কিছুদিন ছাড়া তিনি পূর্ণ শা‘বান মাস রোযা রাখতেন।’ সহীহুল বুখারী ৪৩, ১১৩২, ১১৫১, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৮৭, ৬৪৬১, ৬৪৬২, ৬৪৬৪-৬৪৬৭, মুসলিম ৭৪১, ৭৮২, ৭৮৩, ৭৮৫, ১২৫৬, ৭৮২, ১৮১৮, নাসায়ী ৭৬২, ১৬১৬, ১৬৪২, ১৬৫২, ২১৭৭, ২৩৪৭, ২৩৪৯, ২৩৫১, ৫০৩৫, আবূ দাউদ ১৩১৭, ১৩৬৮, ১৩৭০, ২৪৩৪, ইবনু মাজাহ ১৭১০, ৪২৩৮, আহমাদ ২৩৫২৩, ২৩৬০৪, ২৩৬৪২, ২৩৬০৪, ২৩৬৬৯, ২৪০১৯, ২৪১০৭, মুওয়াত্তা মালিক ৪২২, ৬৮৮
২০৩৬-[১] ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ যখন (নফল) সওম রাখা শুরু করতেন, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি (ﷺকি এখন সওম বন্ধ করবেন না। আবার তিনি (ﷺ যখন সওম রাখা ছেড়ে দিতেন আমরা বলতাম, এখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি আর সওম রাখবেন না। রমাযান (রমজান) ছাড়া অন্য কোন মাসে তাঁকে পূর্ণ মাস সওম রাখতে দেখিনি। আর শা‘বান ছাড়া অন্য কোন মাসে তাঁকে আমি এত বেশী সওম রাখতে দেখিনি। আর একটি বর্ণনায় রয়েছে তিনি [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ কিছু দিন ছাড়া শা‘বানের গোটা মাস সওম পালন করতেন। বুখারী ৪৩, ১১৩২, ১১৫১, ১৯৬৯, মুসলিম ৭৪১, ৭৮২, ৭৮৩, ৭৮৫, নাসায়ী ৭৬২, ১৬১৬, ১৬৪২, আবূ দাউদ ১২১৭, ১২৬৮, ১২৭০, ইবনু মাজাহ ১৭১০, ৪২২৮, আহমাদ ২৩৫২৩, মুওয়াত্তা মালেক ৪২২, ৬৮৮।
১৯৭৫-[৭] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ রমাযান (রমজান) মাসের জন্য শা‘বান মাসের (নতুন চাঁদের) হিসাব রেখ। ([1] হাসান : তিরমিযী ৬৮৭, মুসতাদারাক লিল হাকিম ১৫৪৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৯৪০, সহীহ আল জামি‘ ১৯৮, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৬৫।
১/১৬৪৮। উম্মু সালামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুললাহ ﷺ শাবান মাসে রোযা রাখতে রাখতে রমযানে পৌঁছতেন।তিরমিযী ৭৩৬, নাসায়ী ২১৭৫, ২১৭৬, ২৩৫২, ২৩৫৩, আবূ দাউদ ২৩৩৬, আহমাদ ২৬০২২, ২৬১১৩, দারেমী ১৭৩৯ সহীহ আবী দাউদ ২০২৪। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ:
সংকলনেঃ- মুহাম্মদ হাসান