চিলমারীতে সরকারি কলেজের কক্ষে অধ্যক্ষের ‘সংসার’ — অভিযোগে সরব শিক্ষক-কর্মচারীরা

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৮ অক্টোবর ২০২৫ ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ   |   ২৭ বার পঠিত
চিলমারীতে সরকারি কলেজের কক্ষে অধ্যক্ষের ‘সংসার’ — অভিযোগে সরব শিক্ষক-কর্মচারীরা

হাবিবুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি (কুড়িগ্রাম):-


 

কুড়িগ্রামের চিলমারী সরকারি ডিগ্রি কলেজে এক অস্বাভাবিক দৃশ্য। প্রথম দেখলে মনে হবে এটি কোনো সাধারণ বাসাবাড়ির ঘর। কিন্তু না—এটি কলেজের প্রশাসনিক ভবনের একটি কক্ষ, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মজিবল হায়দার চৌধুরী।
 

অভিযোগ উঠেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে তিনি প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় পরীক্ষার কন্ট্রোল কক্ষেই রাতযাপন করছেন। প্রতি সপ্তাহে বুধবার রাতে নিজ বাড়িতে গিয়ে রবিবার সকালে আবার কলেজে ফিরে আসেন তিনি। এছাড়া, অভিযোগ রয়েছে যে তিনি কয়েকটি শ্রেণিকক্ষের দেয়াল ভেঙে কক্ষ বড় করেছেন—যা নিয়ে শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
 

সরেজমিনে দেখা গেছে, পরীক্ষার কন্ট্রোল কক্ষটিতে বিছানা, টেবিল, চেয়ারসহ গৃহস্থালী আসবাবপত্র রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুরুর দিকে অধ্যক্ষ নিজেই ওই কক্ষে রান্না করে খেতেন। বর্তমানে এক কর্মচারীর বাড়ি থেকে নিয়মিত খাবার এনে খান তিনি।
 

কলেজের প্রভাষক এ কে এম গোলাম ফারুক বলেন, “আমি শিক্ষক প্রতিনিধির সেক্রেটারি হিসেবে দেয়াল ভাঙার বিষয়ে কিছুই জানতাম না। আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে রেজুলেশন লেখানো হয়েছে। এমনকি অধ্যক্ষ আমাকে বলেছেন, আমার অবসরের কাগজে তাঁরই স্বাক্ষর লাগবে—এভাবে হুমকির মধ্যে রেখেছেন।”
 

প্রভাষক জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, “দেয়াল ভেঙে কক্ষ বড় করার ক্ষেত্রে একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক, কিন্তু কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। উপস্থিতি তালিকায় স্বাক্ষর জাল করে দেখানো হয়েছে যে মিটিং হয়েছে, অথচ আসলে এমন কোনো মিটিংই হয়নি।”
 

আরেক প্রভাষক এটিএম আতিকুর রহমান বলেন, “কলেজে রাতযাপনের কোনো নিয়ম নেই। সরকার আমাদের প্রত্যেককে বাড়ি ভাড়ার জন্য মূল বেতনের ৩৫ শতাংশ দেয়। অথচ অধ্যক্ষ স্যার পরীক্ষার কন্ট্রোল রুমেই থাকেন, যার ফলে পরীক্ষার সময় নানা জটিলতা দেখা দেয়।”
 

কলেজের নাইট গার্ড লাল মিয়া বলেন, “স্যার উপরে এক রুমে থাকেন। বুধবার রাতে বাড়ি যান, আবার রবিবার সকালে ফিরে আসেন। আগে রুমেই রান্না করতেন, এখন আমি আমার বাড়ি থেকে খাবার এনে দিই।”
 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মজিবল হায়দার চৌধুরী ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। তবে তিনি দাবি করেন, কলেজের স্বার্থেই তিনি ওই কক্ষে অবস্থান করেন এবং অন্যান্য সব অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
 

চিলমারী সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের একাংশ এখন প্রশ্ন তুলছেন—সরকারি কলেজের প্রশাসনিক ভবনের কক্ষে ‘ব্যক্তিগত বাসস্থান’ তৈরি করা কি নিয়মসিদ্ধ, নাকি দায়িত্বের নামে আরেক ধরনের অনিয়ম?