রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ, বিক্রি তলানিতে

প্রকাশকালঃ ০৮ মে ২০২৩ ০৪:০০ অপরাহ্ণ ১৩৩ বার পঠিত
রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ, বিক্রি তলানিতে

বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়ন হয়েছে। টাকার লাগামহীন অবমূল্যায়নের ফলে আমদানি পণ্যের দামও বেড়ে গেছে। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে ব্যক্তিগত রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। একই সঙ্গে কমেছে গাড়ির আমদানি। দাম বৃদ্ধিতে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বিক্রি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।

গাড়ি আমদানিকারকরা বলছেন, ডলার সংকট কাটাতে গত বছরের অক্টোবরে সরকারের পক্ষ থেকে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসপণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন ‘বিলাসপণ্য’ হিসেবে গাড়িকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যার কারণে শতভাগ এলসি মার্জিনে গাড়ি আমদানি করতে হয়। এতে গাড়ির আমদানি কমে গেছে ৭০ শতাংশের বেশি। এক বছর আগে ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ৭৫-৭৬ টাকা, সেটি এখন বেড়ে হয়েছে ১০৭-১০৮ টাকা। ডলারের সঙ্গে টাকার এই অবমূল্যায়নসহ নানা কারণে গাড়ির দাম ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আর তাই উল্লেখযোগ্য হারে বিক্রি কমেছে বলেও জানান আমদানিকারকরা। বর্তমানে দেশে নতুন ও রিকন্ডিশন্ড ব্যক্তিগত গাড়ির বাজার ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তার মধ্যে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশই রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দখলে। আর বাকিটুকু নতুন গাড়ির দখলে রয়েছে।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শোরুম ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাম বৃদ্ধিতে গাড়ির বিক্রি অনেক কমেছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় শোরুম ভাড়া, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন গাড়ির ব্যবসায়ীরা।


রাজধানীর প্রগতি সরণির বারিধারা এলাকায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির সবচেয়ে বড় শোরুম ‘স্কাই ট্রি’। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মশিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গত বছরের এপ্রিল-মে থেকে দেশে ডলার সংকট শুরু হয়। তখন ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার ছিল ৮৬ থেকে ৮৬.৫ টাকা, সেটি এখন উঠে গেছে ১০৭-১০৮ টাকায়। তার পরও শতভাগ এলসি মার্জিন দিয়ে গাড়ি আমদানি করতে চাইলেও ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো এলসি দিচ্ছে না। স্বল্প পরিমাণে যেসব গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে ডলারের সঙ্গে টাকার এই অবমূল্যায়নের কারণে সেগুলোর খরচ গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এলসি করতে না পারায় বেশির ভাগ শোরুম ফাঁকা পড়ে আছে। যেগুলো আছে, গাড়ির দাম বাড়ার কারণে সেগুলোও বিক্রি করা যাচ্ছে না। ফলে অনেকে ব্যাংকঋণের কিস্তি, শোরুম ভাড়া ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ঠিকমতো দিতে পারছেন না। অনেকে বাধ্য হয়ে কর্মচারী ছাঁটাই করছেন। এভাবে চলতে থাকলে সরকারকে এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাতে হবে। এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে আগামী বাজেটে সরকারকে আমদানি শুল্কহার কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে আস্তে আস্তে এলসির জটিলতা স্বাভাবিক করে গাড়ি আমদানির সুযোগ দিতে হবে।’


রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারক ও পরিবেশক সমিতির (বারভিডা) সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখনো আমরা গাড়ি আমদানির জন্য এলসি করতে পারছি না। তবে এখন ব্যাংকগুলোতে ডলারের জোগান বাড়ায় স্বল্প পরিমাণে এলসি খোলা যাচ্ছে। যেসব আমদানিকারক আগে মাসে ১০০ গাড়ি আনতেন, তাঁরা এখন ২০টি গাড়ির এলসি খুলতে পারছেন। ডলার সংকটের কারণে যদি আমরা এলসি খুলতে না পারি, তাহলে তো ক্ষতিগ্রস্ত শুধু আমরা হচ্ছি না, এতে এনবিআরের রাজস্বও কমছে। রিকন্ডিশন্ড গাড়ি থেকেই বছরে চার-পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব দেওয়া হতো। গাড়িসহ অন্যান্য পণ্যের আমদানি কমে যাওয়ায় এবার এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ে বিশাল একটি ঘাটতির মধ্যে পড়তে হবে।’

সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এনবিআর যদি গাড়ির খাত থেকে রাজস্ব নিতে চায়, তাহলে অবশ্যই আগামী বাজেটে যে হারে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে, সেই হারে শুল্ক কমাতে হবে।

গাড়ির দর-দাম
এক বছর আগের তুলনায় বর্তমানে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম বৃদ্ধির চিত্র—এলিয়ন প্রিমিও ১৬ মডেলের গাড়ির দাম ছিল ৩২-৩৩ লাখ টাকা, সেটি দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৩৯ লাখ টাকায়। এক্সিও ১৬ মডেলের গাড়ির দাম ছিল ১৭-১৮ লাখ টাকা, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ২৬-২৭ লাখ টাকায়। নোহা স্কয়ার ১৬ মডেলের দাম ছিল ২৮-২৯ লাখ টাকা, দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৭-৩৮ লাখ টাকায়। হোন্ডা গ্রেস ১৬ মডেলের দাম ছিল ২০-২১ লাখ, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ২৭-২৮ লাখ টাকায়। নিশান এক্সট্রাইল ১৬ মডেলের দাম ছিল ৩৮-৩৯ লাখ টাকা, দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৬ লাখ টাকা। করলা ক্রস ২১ মডেলের গাড়ির দাম ছিল ৫০-৫১ লাখ টাকা, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৫৯ লাখ টাকায়। টয়োটা প্রিয়াসের দাম ছিল ২৩-২৪ লাখ টাকা, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ২৮-২৯ লাখ টাকায়।