সমাজে আলেমদের মৃত্যুর প্রভাব

প্রকাশকালঃ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ ১৬২ বার পঠিত
সমাজে আলেমদের মৃত্যুর প্রভাব

ক্ষরিক অর্থে আলেম মানে জ্ঞানী। যিনি দ্বিন ও শরিয়তের গভীর জ্ঞান রাখেন এবং সে অনুযায়ী আমল করেন। পাশাপাশি সুন্নাহের আলোকে জীবন পরিচালনা করেন এবং অন্তরে আল্লাহর ভয় সদা জাগরূক রাখেন; শরয়ি পরিভাষায় এমন ব্যক্তিকে আলেম বলা হয়। আল্লাহ তাআলাও ইলমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তথা আলেমদের মর্যাদা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উন্নত করবেন। তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।’ (সুরা মুজাদালা, আয়াত : ১১)

সাহাবি আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের উদ্দেশ্যে পথ চলে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের পথে পৌঁছে দেন। ইলম অন্বেষীর সন্তুষ্টির জন্য ফেরেশতারা ডানা বিছিয়ে দেন।


আসমান-জমিনের সব সৃষ্টি, এমনকি পানির মাছগুলোও আলেমের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। (শরয়ি জ্ঞান সম্পর্কে অশিক্ষিত/স্বল্প শিক্ষিত) ইবাদতকারীর ওপর আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব তেমন, পূর্ণিমা রাতে তারকারাজির ওপর চাঁদের প্রাধান্য যেমন। নিশ্চয়ই আলেমরা নবীদের উত্তরসূরি। আর নবীরা উত্তরাধিকার স্বত্ব হিসেবে দিনার-দিরহাম (অর্থ-সম্পদ) রেখে যাননি; তারা রেখে গেছেন ইলমের উত্তরাধিকার।

সুতরাং যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করেছে, সে পূর্ণ অংশ লাভ করেছে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৬৮২) উল্লিখিত হাদিস দ্বারা আলেমদের মর্যাদা, দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার পাশাপাশি বিশ্ববাসীর জন্য তাদের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে আসে।

উত্তরাধিকার হিসেবে আলেমদের ওপর সেসব দায়িত্ব অর্পিত হয়, যেসব দায়িত্বের জিম্মাদারি দিয়ে আল্লাহ নবী-রাসুলদের দুনিয়ায় প্রেরণ করেন। জাতিকে শরয়ি বিষয়ক প্রয়োজনীয় জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া, তাদের সচেতন ও সতর্ক করা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা, যুগজিজ্ঞাসার সমাধান করা, সত্য-মিথ্যা ও ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বোঝানো, আদর্শ নেতৃত্ব গড়ে তোলা এবং সুষ্ঠু-সুন্দর ও সুশৃঙ্খল সমাজ-বিনির্মাণে আলেমদের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। উম্মাহর সামনে ইসলামের স্বরূপ তুলে ধরতে, ইসলামী তাহজিব-তমদ্দুনকে সমুন্নত রাখতে এবং নবী-রাসুলদের জিম্মাদারি পালন ও তাদের মিশন বাস্তবায়নে আলেমদের অনেক কষ্ট করতে হয়, নিরলস সাধনা ও আত্মত্যাগের পরিচয় দিতে হয়।


মুসলিম জাতিসত্তাকে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করেন আলেমরা। ইসলামের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেন তারা। বিশ্ববুকে ইসলামের শান-মান ও সোভা-সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে ইসলামী জ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম। এই জ্ঞান তার কার্যকারিতা ও প্রচার-প্রসারের স্বাভাবিক গতি হারায় আলেমদের প্রস্থান ও মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষ থেকে ইলমকে ছিনিয়ে নেবেন না। তবে তিনি আলেমদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে ইলমকে তুলে নেবেন। এক পর্যায়ে (পৃথিবী) যখন আলেমশূন্য হবে, মানুষ তখন মূর্খদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। অতঃপর তাদের যখন (দ্বিনি বিষয়ে কিছু) জিজ্ঞাসা করা হবে, তখন তারা না জেনে উত্তর দেবে। ফলে তারা ভ্রষ্টপথে হাঁটবে এবং অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০০)

আবি উমামা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইলমকে উঠে যাওয়ার পূর্বে তোমরা তা শিক্ষা করো। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর নবী, আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব থাকার পরও ইলম কিভাবে উঠে যাবে? বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে নবীজি (সা.) ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, তোমাদের মা তোমাদের হারিয়ে ফেলুক! বনি ইসরাঈলের নিকট কি তাওরাত ও ইঞ্জিল ছিল না? অথচ সেগুলো তাদের কোনো উপকারে আসেনি। ইলম উঠে যাওয়ার অর্থ হলো ইলমের বাহক তথা আলেমদের চলে যাওয়া!’ (সুনানে দারেমি, হাদিস : ২৪৬)

হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘আলেমের মৃত্যুতে ইসলামে কিয়ামত পর্যন্ত অপূরণীয় এক শূন্যতা তৈরি হয়।’ (সুনানে দারেমি : ১/৩৫১) সুতরাং বলা যায়, আলেমরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের মৃত্যুতে জাগতিকভাবে নানা প্রভাব পরিলক্ষিত হয় এবং অপূরণীয় এক শূন্যতা অনুভূত হয়। আবু দারদা (রা.) বলেন, ‘তুমি আলেম হও, নতুবা আলেমের ছাত্র হও, নতুবা আলেমদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ কোরো অথবা আলেমের অনুসারী হও। পঞ্চম ব্যক্তি হইয়ো না। তাহলে তোমার ধ্বংস অনিবার্য।’ (বায়হাকি, হাদিস : ২৬৯)