মোবাইল ফোন আবিষ্কারের ইতিহাস

প্রকাশকালঃ ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:১০ অপরাহ্ণ ২২১ বার পঠিত
মোবাইল ফোন আবিষ্কারের ইতিহাস

অতীতের কোন ইলেকট্রনিক পণ্য মোবাইল ফোনের মতো এত বিস্তার ঘটেনি । মোবাইল ফোন এখন আর কোন বিলাসিতা পণ্য নয় বরং দৈনন্দিন জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় একমাত্র অনুষঙ্গ।

প্রায় পাঁচ দশক আগেই মোবাইল ফোনের তুলনায় আজকের এক একটি স্মার্টফোন যেন সুপার কম্পিউটার। আধুনিক জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ মোবাইল ফোন আবিষ্কারের গল্প বলা হবে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে।  মোবাইল ফোন আবিষ্কারের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ এবং জটিল। এর পেছনে অনেক বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীর অবদান রয়েছে। মোবাইল ফোন আবিষ্কারের প্রথম দিকের পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয়েছিল বেতার যোগাযোগের বিকাশের সাথে সাথে।

১৮৭৬ সালে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কারটি মোবাইল ফোন আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করে। ১৯৪৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী প্রথম মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক তৈরি করে। এই নেটওয়ার্কটি ছিল খুবই ব্যয়বহুল এবং এটি শুধুমাত্র সামরিক কর্মকর্তাদের জন্য ব্যবহার করা যেত।

১৯৫০-এর দশকে বেতার যোগাযোগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। এই অগ্রগতির ফলে মোবাইল ফোন আবিষ্কারের পথ আরও সুগম হয়। ১৯৫৬ সালে সাবমেরিন যোগাযোগের জন্য প্রথম স্যাটেলাইট যোগাযোগ সিস্টেম চালু করা হয়। এই সিস্টেমটি মোবাইল ফোন আবিষ্কারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ভিত্তি প্রদান করে।

১৯৬০-এর দশকে মোবাইল ফোন আবিষ্কারের জন্য আরও গবেষণা চালানো হয়। ১৯৬৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন একটি প্রকল্প শুরু করে যা মোবাইল ফোন আবিষ্কারের জন্য নকশা প্রণয়ন করে। এই প্রকল্পের ফলে ১৯৭৩ সালে প্রথম মোবাইল ফোন আবিষ্কার করা সম্ভব হয়।

১৯৭৩ সালে আমেরিকার নিউওয়ার্ক শহরের ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন কুপার প্রথম মোবাইল ফোন তৈরি করেন। তাই মার্টিন কুপার কে মোবাইল ফোনের জনক বলা হয়। তিনি তখনকার ছোট্ট টেলিকম কোম্পানি MOTOROLA তে কাজ করতে।

তার স্বপ্ন ছিল এমন একদিন আসবে যখন সবার হাতে নিজস্ব ফোন থাকবে আর সেই ফোন দিয়ে যেকোনো সময় তার সাথে যোগাযোগ করা যাবে। সেই সময় টেলিফোন মানে ছিল এমন একটি জিনিস যা মানুষের কাজের টেবিলে বা বাড়িতে তারের সাথে যুক্ত থাকতো।


সে কারণে সাধারণ মানুষের কাছে মোবাইল ফোনের ধারণা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী এর মতো ছিল। Dick Tracy নামে আমেরিকান একটি কমিটির চরিতেরা এক ধরনের রেডিও এর সাহায্যে পরস্পর যোগাযোগ করত।

সেটা দেখে প্রথমবার মার্টিন কপার এর মাথায় মোবাইল ফোনের চিন্তায় এসেছিল। ঠিক সেই জিনিসটা মার্টিন কুপার এর নেতৃত্বে ২০-৩০ জনের একটি দল মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে তৈরি করেছিল।

১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে নিউওয়ার্কের হিলটন হোটেলে প্রথমবার মোবাইল ফোনের মডেল উপস্থাপন করা হয়। প্রথম মোবাইল ফোনটি ছিল১০ ইঞ্চি লম্বা ,২ইঞ্চি চওড়া ও ৪ইঞ্চি পুরুত্ব। সেই মোবাইল ফোনের ওজন ছিল এক কেজির বেশি।

মাত্র ২০ মিনিট কথা বললে মোবাইল ফোনের ব্যাটারি শেষ হয়ে যেত। সেই ফোন দেখে অনেকে হাসাহাসি করেছিল। তবে সত্যিকার অর্থে সেই সময় এরকম একটি ফোন তৈরি করা ছিল এক ধরনের অসম্ভব চ্যালেঞ্জ।

পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম মোবাইল কলটিও করেছেন মার্টিন কুপার। তিনি নিউওয়ার্কের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে Atandt কোম্পানিতে কর্মরত তার এক ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুকে কলটি করেছিলেন। Atandt শুধু আমেরিকার নয় বরং সমগ্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানি ছিল।

Atandt এর আবিষ্কৃত সেলুলিস টেকনোলজি এক প্রযুক্তির অপর বৃত্তি করে মোবাইল ফোন আবিষ্কার হয়েছিল। হাতে করে ফোন নিয়ে ঘুরার কথা Atandt মোটেও ভাবিনি। তারা এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছিল মূলত গাড়িতে টেলিফোন সংযোগ করার জন্য।

কিন্তু ছোট্ট কোম্পানি motorola তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম Atandt এর কল্পনার সীমা ছাড়িয়ে যায়। তবে প্রথমবার মোবাইল ফোন বাজারে আসতে সময় লাগে আরও দশ বছরের মতো।

১৯৮৩ সালে মোটোরোলা প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সফল মোবাইল ফোন, ডিজিটাল অ্যাডজাস্টেবল টোটাল এরিয়া কভারেজ (ডিএটিএসি) বাজারে আনে। এই ফোনটি ছিল অনেক হালকা এবং এর ব্যাটারি স্থায়িত্ব ছিল অনেক বেশি। সেই সময় ফোনটির দাম ছিল চার হাজার ডলার। এ ছাড়া তখন কলরেটে অনেক বেশি ছিল। সে যুগে মোবাইল ফোন অনেকটা বড়লোককে খেলনা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এই ফোনটি অনেকের কাছে ইটের মতো আর কারো কাছে জুতার মত দেখতে মনে  হয়েছিল। এই ফোনটি মোবাইল ফোন ব্যবহারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৯৯০-এর দশকে মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি হয়। এই দশকে মোবাইল ফোনগুলি আরও ছোট, হালকা এবং উন্নত হয়ে ওঠে। এছাড়াও, মোবাইল ফোনের দামও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। এই কারণে মোবাইল ফোন ব্যবহারের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পায়।

২০০০-এর দশকে মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে আরও অগ্রগতি হয়। এই দশকে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট এবং অন্যান্য ডিজিটাল পরিষেবাগুলির ব্যবহার শুরু হয়। এই কারণে মোবাইল ফোনগুলি হয়ে ওঠে আরও কার্যকরী এবং জনপ্রিয়।

আজকাল মোবাইল ফোনগুলি আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আমরা যোগাযোগ, ইন্টারনেট ব্যবহার, গেম খেলা, ভিডিও দেখা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ করতে পারি। মোবাইল ফোন আমাদের জীবনকে আরও সহজ এবং সুন্দর করে তুলেছে।

মোবাইল ফোন আবিষ্কারের ইতিহাসে অনেক বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীর অবদান রয়েছে। তাদের অবদানের কারণেই আজ আমরা মোবাইল ফোনের সুবিধাগুলি উপভোগ করতে পারছি।