হজ ও ওমরার সওয়াব পাওয়া যাবে যেসব আমলে

প্রকাশকালঃ ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৫৭ অপরাহ্ণ ১৮৫ বার পঠিত
হজ ও ওমরার সওয়াব পাওয়া যাবে যেসব আমলে

যাদের হজ অথবা ওমরাহ পালনে যাওয়ার সামর্থ্য নেই, তাদের জন্য মহানবী (সা.) এমন কিছু পথ বের করে দিয়েছেন, যেগুলো দ্বারা তারা কবুল হজ ও ওমরাহর সওয়াব পেয়ে যেতে পারে। আমলগুলো হলো—

১. মসজিদে জামাতে সালাত আদায় করা। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায় করল সে যেন হজ করে এলো। আর যে ব্যক্তি নফল নামাজ আদায় করতে মসজিদে গমন করল সে যেন ওমরাহ করে এলো। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৫৮; তাবারানি, হাদিস : ৭৫৭৮)

২. ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করে ইশরাকের সালাত আদায় করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করল, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করল, এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করল, সে ব্যক্তি হজ ও ওমরাহর সওয়াব নিয়ে ফিরল।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৫৮৬)


৩. দ্বিন শেখা বা শেখানোর উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়া। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গেল কোনো ভালো কথা শেখা বা শেখানোর উদ্দেশ্যে, সে পরিপূর্ণরূপে হজ আদায়কারী একজন ব্যক্তির মতো সওয়াব লাভ করবে। (মাজমাউজ জাওয়াইদ, হাদিস : ৪৯৯; সহিহ আত-তারগিব, হাদিস : ৮৬)

৪. মা-বাবার সেবা এবং তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে বলল, ‘আমি জিহাদে অংশগ্রহণ করতে চাই, কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য ও সক্ষমতা নেই।’ নবীজি প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার মা-বাবার কেউ কি জীবিত আছেন?’ লোকটি বলল, ‘আমার মা জীবিত।’ জবাবে নবীজি (সা.) বলেন, ‘তাহলে মায়ের সেবা করে তার কাছে জিহাদে যেতে না পারার অপারগতা বা ওজর পেশ করো।

এভাবে যদি করতে পার এবং তোমার মা সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে তুমি হজ, ওমরাহ ও জিহাদের সওয়াব পেয়ে যাবে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং মায়ের সেবা করো।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ, হাদিস : ১৩৩৯৯)


৫. রমজানে ওমরাহ পালন করা। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানে ওমরাহ আদায় করলে আমার সঙ্গে হজ আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৭৮২; মুসলিম, হাদিস : ২২২)

৬. নামাজের পর আল্লাহর জিকির করা। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, দরিদ্র লোকেরা রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, সম্পদশালী ব্যক্তিরা বেশি সওয়াব এবং জান্নাত নিয়ে যাচ্ছে! আমরা যেমন নামাজ পড়ি; তারাও পড়ে! আমরা যেমন রোজা রাখি; তারাও রাখে! উপরন্তু তাদের আছে অতিরিক্ত সম্পদ; ফলে তারা হজ করতে পারে, ওমরাহ করতে পারে, জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সদকাও দিতে পারে! নবীজি তাদের বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন একটি আমল শিখিয়ে দেব না, যা করতে পারলে তোমরা অগ্রগামীদের স্তরে পৌঁছে যাবে এবং যারা তোমাদের পেছনে তারা তোমাদের স্তরে পৌঁছতে পারবে না, তোমরা হবে শ্রেষ্ঠতম মানব, তবে অন্য কেউ এটি করলে সে-ও তোমাদের মতো হয়ে যাবে। আমলটি হলো, প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩ করে সুবহানাল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার পাঠ করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৮০৭; মুসলিম, হাদিস : ১৬৭৪)

৭. মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় করা। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি নিজ ঘরে পবিত্রতা অর্জন করল, তারপর মসজিদে কুবায় এসে কোনো নামাজ আদায় করল, সে ওমরাহর সওয়াব হাসিল করল।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪১২)


৮. বিশুদ্ধভাবে হজের নিয়ত করা। কোনো মুসলিম ব্যক্তি বিশুদ্ধভাবে হজের নিয়ত করলে এবং সে কোনো কারণে হজে গমন করতে না পারলে আল্লাহ তার জন্য হজের সমান সওয়াব লিখে দেবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বরকতময় আল্লাহ (হাদিসে কুদসিতে) বলেন—আর তাঁর বাণী সম্পূর্ণ সত্য : আমার কোনো বান্দা যখন কোনো ভালো কাজের ইচ্ছা পোষণ করে তখনই (বলেন) হে ফেরেশতারা! তোমরা তার জন্য একটি নেকি লিখো এবং সে যখন কাজটি করে তখন তার ১০ গুণ নেকি তার জন্য লিখো। পক্ষান্তরে সে কোনো মন্দ কাজের ইচ্ছা পোষণ করলে তবে তোমরা তার কোনো গুনাহ লিখো না, যদি সে তা করে তবে একটি মাত্র গুনাহ লিখো এবং যদি সে তা বর্জন করে বা কার্যকর না করে তার জন্য একটি নেকি লিখো। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন : ‘কেউ কোনো সৎকাজ করলে সে তার ১০ গুণ পাবে এবং কেউ কোনো অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু এর প্রতিফল দেওয়া হবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৬০) (তিরমিজি, হাদিস : ৩০৭৩)

৯. অন্যকে হজ করানো। কোনো ব্যক্তি অন্যকে হজ করালে হজের সমপরিমাণ নেকি লাভ করা যায়। এমনকি যদি কেউ তার মৃত মাতা-পিতার পক্ষ থেকেও হজ সম্পাদন করেন, মহান আল্লাহ হজের নেকি সেই মৃতের কবরে পৌঁছে দেন। আগের মুসলিম মনীষীরা নিজেরা হজ পালন করার পাশাপাশি অন্যকেও হজ করার ব্যাপারে সহযোগিতা করতেন। কেননা মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য কোনো মানুষকে কোনো সৎ কাজের পথ দেখায় (উৎসাহিত করে), সে ওই নেক কাজ সম্পাদনকারীর সমান সওয়াব পাবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৭৯৩)

১০. শুধু নফল নামাজের জন্য মসজিদে গেলে ওমরাহর সওয়াব। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফরজ সালাত জামাতে আদায়ের জন্য (মসজিদে) গমন করে, সে হজের সমান নেকি লাভ করে। আর যে ব্যক্তি নফল সালাত আদায়ের জন্য (মসজিদে) গমন করে, সে নফল ওমরাহর সমান সওয়াব লাভ করে।’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ৬৫৫৬)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।