ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলার মূল্যের ব্যবধান কমলেও চাহিদামতো ডলার পাওয়া যাচ্ছে না
প্রকাশকালঃ
১৬ মে ২০২৪ ১২:০৫ অপরাহ্ণ ৯৩৩ বার পঠিত
ডলারমূল্য বৃদ্ধির পর ১১৭ থেকে ১১৮.৫ টাকায় এলসি সেটল করছে ব্যাংকগুলো। আর খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২১ টাকা দরে। হিসাব অনুযায়ী, দুই বাজারে ডলারমূল্যের ব্যবধান তিন থেকে চার টাকা। কিন্তু এক সপ্তাহ আগেও এই ব্যবধান ছিল সাত থেকে আট টাকা পর্যন্ত।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দুই বাজারে ডলারমূল্যের ব্যবধান কমলেও চাহিদামতো ডলার পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। কারণ একলাফে ডলারের দাম সাত টাকা বেড়ে যাওয়ার ফলে সংকোচনমুখী আচরণ করছেন সবাই। ব্যাংকে গিয়ে আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলার পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। পেলেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি দাম। আবার খোলাবাজারেও চলছে ডলারের হাহাকার।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে এখন কেউ ডলার বিক্রি করছেন না। তাই ক্যাশ ডলারের সংকটে খোলাবাজার। অন্যদিকে ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকের কাছে যে ডলার রয়েছে তার বিপরীতে আমদানি বিলের দায় রয়েছে।
নির্ধারিত সময় পর সেটা পরিশোধ করতে হবে। তাই এখন নতুন করে এলসি খুলতে ব্যাংকে গেলে সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর ফকিরাপুলে অবস্থিত নিবেদিতা মানি এক্সচেঞ্জের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন বিক্রেতা কম। কেউ আর ডলার বিক্রি করছে না। সবাই ভাবছে যেহেতু একসঙ্গে ডলারের দাম সাত টাকা বেড়েছে, ভবিষ্যতে আরো বাড়বে।
তাই রেমিটার, ফরেনার ও বিদেশফেরত ব্যক্তিদের কেউই ডলার ছাড়ছেন না। তাই চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমরা কাস্টমারকে ডলার দিতে পারছি না।’ একই এলাকার অ্যাকবো মানি এক্সচেঞ্জ থেকে জানানো হয়, ডলার দেওয়া যাবে, তবে ১২০.৮০ টাকা পড়বে। এক পয়সাও কম রাখা যাবে না। এমনিতেই ডলার সংকট। তার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপ। বেশি দামে বিক্রি করছে দেখলেই জরিমানা করবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমদানিতে সরাসরি ডলারের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে। এত কিছুর পরও অপ্রয়োজনীয় বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করা যাচ্ছে না। কিন্তু ব্যাংকগুলো ডলার সংকটের অজুহাতে প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খুলছে না। এমনকি রপ্তানিমুখী পণ্যের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রেও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না।’
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো এলসি খোলার গতি কমিয়ে দিয়েছে। যেসব রপ্তানিকারকের ডলার অ্যাকাউন্টে জমা আছে, বর্তমানে শুধু তাঁরাই আমদানির দায় পরিশোধ করতে পারছেন। এর বাইরে যাঁরা ব্যাংক থেকে ডলার কিনে আমদানি বিল পরিশোধের চিন্তা করছেন, তাঁরা সবাই ফিরে যাচ্ছেন। কারণ বেশির ভাগ ব্যাংকের কাছেই ডলার জমা নেই।
আবার যাঁদের কাছে আছে, তাঁরা ভবিষ্যৎ আমদানি পেমেন্টের কথা চিন্তা করে ডলার খরচ করছেন না।’ তিনি আরো বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ার কথা শুনে বিদেশ থেকে যাঁরা নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠাতেন, তাঁরা সেটা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে আমরাও রেমিট্যান্সের ডলার দিয়ে আর আমদানির পেমেন্ট করতে পারছি না। প্রবাসীরা ভাবছেন, ডলারের দাম আরো বাড়বে। তাই তাঁরা ডলার ধরে রেখেছেন।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৮ মে ডলারের দাম ও ঋণের সুদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পালনের অংশ হিসেবে ডলারের দাম ১১০ টাকা থেকে একলাফে সাত টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করা হয়। এতে সরাসরি প্রভাব পড়েছে ব্যাংক ও খোলাবাজারে। ফলে এলসি খোলার ক্ষেত্রে ১২০ টাকা এবং খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১২৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
তবে ব্যাংক ও খোলাবাজার দুই জায়গায়ই ডলারের দাম একদিন আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। ডলার সংকট নিয়ে ফল আমদানিকারকরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে সরকার ফল আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এরপর থেকে ব্যাংকগুলো ঋণপত্র খোলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল। গত অর্থবছরের শুরু থেকে আমদানি কমতে থাকে। এ ছাড়া ডলারের বাড়তি দামের কারণেও ফলের দাম বেশি। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপেও বিদেশি ফলের চাহিদা কিছুটা কমেছে।
গত বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রক শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করেছিল। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক শর্ত দিয়েছিল, ফলসহ অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে হলে আমদানিকারকদের পুরো ব্যয় অগ্রিম পরিশোধ করতে হবে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) দেশে-বিদেশি ফল এসেছে পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪ টন। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) বিদেশি ফল আমদানি হয়েছিল আট লাখ ৯ হাজার ৭৯৬ টন। অর্থাৎ সর্বশেষ অর্থবছরে দেশে ফল আমদানি কমেছে দুই লাখ ২৩ হাজার ৭৫২ টন বা ২৭.৬৩ শতাংশ।