কোরআনে সুলাইমান (আ.)- এর ঘোড়া সম্পর্কে যা বলা হয়েছে!

প্রকাশকালঃ ৩০ মে ২০২৩ ০৬:১১ অপরাহ্ণ ১৬৩ বার পঠিত
কোরআনে সুলাইমান (আ.)- এর ঘোড়া সম্পর্কে যা বলা হয়েছে!

রূপকথার বর্ণনায় পঙ্খীরাজ ঘোড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। ডানাবিশিষ্ট যে ঘোড়া মুহূর্তে দূর-দূরান্তে পৌঁছে যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘোড়া কি কখনো ছিল? বলা হয়, সুলাইমান (আ.)-এর ঘোড়ার ডানা ছিল। কিন্তু এমন দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ আছে কি? উত্তর হলো, সুলাইমান (আ.)-এর ঘোড়ার ডানা ছিল এমন কোনো প্রমাণ কোরআন ও হাদিসে পাওয়া যায় না।

তবে কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় কোনো কোনো তাফসিরবিদ এমন দাবি করে থাকেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,  ‘আমি দাউদকে দান করলাম সুলাইমান। সে ছিল উত্তম বান্দা এবং সে ছিল অতিশয় আল্লাহমুখী। যখন অপরাহ্নে তার সামনে ধাবনোদ্যত উত্কৃষ্ট অশ্বরাজিকে উপস্থিত করা হলো।’ (সুরা সোয়াদ, আয়াত : ৩০-৩১)

ইমাম তাবারি (রহ.) আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আয়াতে ব্যবহৃত আরবি ‘সাফিনাত’ শব্দের অর্থ ডানাবিশিষ্ট ঘোড়া। সুলাইমান (আ.)-এর ডানাবিশিষ্ট ২০টি ঘোড়া ছিল। (তাফসিরে তাবারি : ২০/৮২-৮৩)


আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.)-ও আয়াতের ব্যাখ্যায় এমনটিই বলেছেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৭/৬৪)

যাঁরা দাবি করেন, সুলাইমান (আ.)-এর ঘোড়ার ডানা ছিল, তাঁরা নিম্নোক্ত হাদিসকেও প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন।


আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) তাবুক অথবা খায়বারের যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তন করলেন। ঘরের তাকের ওপর পর্দা ঝোলানো ছিল। বায়ু প্রবাহের ফলে তার এক পাশ সরে যায়, যাতে তার খেলার পুতুলগুলো দৃশ্যমান হয়ে পড়ে। তিনি (সা.) পুতুলগুলো দেখে বলেন, হে আয়েশা, এগুলো কী? জবাবে তিনি বলেন, এগুলো আমার মেয়ে। আর তিনি এগুলোর মধ্যে কাপড়ের তৈরি দুই ডানাবিশিষ্ট একটি ঘোড়াও দেখতে পেলেন।

তিনি প্রশ্ন করলেন, এগুলোর মধ্যে ওটা কী দেখতে পাচ্ছি? তিনি বলেন, ঘোড়া। তিনি (সা.) বলেন, তার ওপর আবার ওটা কী? তিনি বলেন, দুটো পাখা। তিনি বলেন, এ আবার কেমন ঘোড়া, যার পাখা আছে! আমি বললাম, আপনি কি শোনেননি যে সুলাইমান (আ.)-এর ঘোড়ার কয়েকটি পাখা ছিল! আয়েশা (রা.) বলেন, এ কথা শুনে রাসুল (সা.) হেসে দিলেন, যাতে আমি তাঁর সামনের সারির দাঁত দেখতে পেলাম।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৩২)


তবে এখানে আয়েশা (রা.)-এর বাক্য ‘আপনি কি শোনেননি যে সুলাইমান (আ.)-এর ঘোড়ার কয়েকটি পাখা ছিল’ দ্বারা বোঝা যায় তিনি বিষয়টি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে শোনেননি। এটা স্পষ্ট যে তিনি বিষয়টি মদিনার ইহুদি সম্প্রদায়ের কাছ থেকে শুনেছিলেন। অন্যদিকে হয়তো সুলাইমান (আ.)-এর ঘোড়ার ডানা থাকা ও না থাকার ব্যাপারে ওহি অবতীর্ণ না হওয়ায় নবীজি (সা.) এ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন।

ইসলামী শরিয়তের মূলনীতি হলো, আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিস্টানরা পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের যেসব ঘটনা বর্ণনা করে, সেগুলোর ব্যাপারে ওহি অবতীর্ণ না হলে মুসলমানরা সে বিষয়ে চুপ করে থাকবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আহলে কিতাব (ইহুদি) ইবরানি ভাষায় তাওরাত পাঠ করে মুসলিমদের কাছে তা আরবি ভাষায় ব্যাখ্যা করত। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমরা আহলে কিতাবকে বিশ্বাসও কোরো না, আবার অবিশ্বাসও কোরো না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৪৮৫)

যেহেতু সুলাইমান (আ.)-এর ঘোড়ার ডানা থাকা বা না থাকার বিষয়ে কোরআন ও হাদিসে স্পষ্ট কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না, তাই এ বিষয়ে চুপ থাকাই উত্তম। এমন বিষয় সামনে এলে মুমিন বলবে, আল্লাহই ভালো জানেন।