বিদেশিদের সফরের মধ্যে কাল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের সমাবেশ
প্রকাশকালঃ
১১ জুলাই ২০২৩ ০৪:১১ অপরাহ্ণ ১৯৪ বার পঠিত
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরের সময়ে বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নিজেদের অবস্থানের পক্ষে গণশক্তি দেখানোই এর উদ্দেশ্য বলে মনে করা হচ্ছে।
আগামীকাল বুধবার ঢাকায় বড় জমায়েত করবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এদিন এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা দেবে বিএনপি।
আর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এক কিলোমিটারের মধ্যে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বড় জমায়েতের ফলে দুই দুই দলপক্ষের নেতাকর্মীরাই ওই দিন রাজপথে মুখোমুখি অবস্থানে থাকবেন।
দল দুটির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর পর্যালোচনা করে বিএনপি তাদের রাজনৈতিক কর্মকৌশল ঠিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিদেশিরা দেশে থাকতেই রাজনৈতিক শক্তি দেখাতে তাড়াহুড়া করে সমাবেশের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে দলটি।
সমাবেশ উপলক্ষে ঢাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। বিএনপির সিদ্ধান্ত জেনে আওয়ামী লীগও ঢাকায় পাল্টাকর্মসূচি দিয়েছে।
১৫ জুলাই দুই দলের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ঢাকা সফররত ইইউ প্রতিনিধিদল। এর আগে মার্কিন প্রতিনিধিদল সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাইরে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে পারে।
ফলে ১২ জুলাইয়ের সমাবেশের পর বিদেশিদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে দুই দল। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল গত ৯ জুলাই ঢাকায় এসেছে। আজ আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। পশ্চিমা এই দুই প্রতিনিধিদলের বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে এখন নানা আলোচনা চলছে।
মাঠে ও বৈঠকে সক্রিয় ক্ষমতাসীনরা
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ১২ জুলাই বিকেল ৩টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য বিরোধী শান্তি সমাবেশ করা হবে।
দলটির নেতারা বলেছেন, এদিন ঢাকায় তাঁদের সমাবেশেও বড় জমায়েত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সমাবেশে বিএনপির চেয়ে বেশি জমায়েত করে দেশে-বিদেশে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি ও জনপ্রিয়তার জানান দিতে চান তাঁরা।
সমাবেশ সফল করতে বড় প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পক্ষ থেকে বর্ধিত সভা করা হয়েছে। সেখানে প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানার নেতাদের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে শান্তি সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শান্তি সমাবেশ সফল করার জন্য আমাদের বড় প্রস্তুতি আছে। থানা ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের বড় জমায়েত দিতে জোরালো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নেতাকর্মীদের প্রস্তুত রেখেছি। তাঁরা শান্তি সমাবেশের মধ্য দিয়ে রাজপথে থাকবেন। এ ছাড়া নিজ নিজ এলাকায় সতর্ক অবস্থান নিতে বলা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল ইইউ প্রতিনিধিদের সঙ্গে দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির নেতাদের বৈঠকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
নেতারা জানান, বিদেশিদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়টিতে শক্ত অবস্থানের কথা জানানো হবে। গতকাল সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বাংলাদেশে ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি সাক্ষাৎ করেন। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হোক, এটাই তাঁরা চেয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। ওই সময় সরকার শুধু দৈনন্দিন কাজ করবে, কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে না বলে তিনি ইইউ রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিদেশিদের পক্ষ থেকে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলে বারবার বলা হচ্ছে, সরকারের জনপ্রিয়তা নেই। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিদেশিদের এ বিষয়ে পাল্টাতথ্য দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গত পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল তুলে ধরা হচ্ছে। এ নির্বাচনে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জনের পরও যে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে, তা জানানো হচ্ছে। সিটি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও অবাধ হলেও যে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে, এটি বিদেশিদের কাছে ভালোভাবে তুলে ধরা হচ্ছে।
গতকাল বিকেলে গুলশানে ইইউ রাষ্ট্রদূতের বাসায় প্রতিনিধিদলটি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির চার সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করে। এতে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ ও আন্তর্জাতিক উপকমিটির চেয়ারম্যান মো. জমির উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিএনপি ধ্বংস করেছে। এ দেশের নির্বাচনব্যবস্থাও তারা নষ্ট করেছে। বিএনপির আমলে কোথাও সুষ্ঠু ভোট হয়নি। আওয়ামী লীগের নেতারা মাগুরা উপনির্বাচন, বিপুলসংখ্যক ভুয়া ভোটার তৈরির কথা উল্লেখ করেন।
শাম্মী আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ সম্ভব।’
এক দফার প্রেক্ষাপট নিয়ে বৈঠকে বসবে বিএনপি : বিএনপির কর্মকৌশল প্রণয়নকারী নেতারা জানান, এক দফার কর্মসূচির সঙ্গে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দেশে গণতন্ত্রের ঘাটতি ও সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো জড়িত। এক দফার ঘোষণার বিষয়বস্তু নিয়েই বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তাঁরা। ওই বৈঠকের আগে রাজধানীতে বড় জমায়েত এবং যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর একই ঘোষণার মাধ্যমে তাঁদের সমর্থক-শক্তি সম্পর্কে বিদেশিরা পরিষ্কার ধারণা পাবে।
বিএনপি বলে আসছে, এবার চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে তারা। এমন সময় সমাবেশ ডাকা হয়েছে, যখন মার্কিন ও ইইউ দল ঢাকা সফরে থাকায় অনেকটা নির্বিঘ্নে তারা কর্মসূচি পালন করতে পারবে। এতে বাধা দিলেও সফররত প্রতিনিধিদল তা জানতে পারবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেন, গত ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হলেও প্রেক্ষাপট তৈরি না হওয়ায় শক্ত কোনো কর্মসূচিতে যাননি তাঁরা। ফলে সরকারকে বড় কোনো চাপ মোকাবেলা করতে হয়নি। মার্কিন ভিসানীতি চালু হওয়ার পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কিছু পরিবর্তন হয়েছে। বিদেশিদের এই সফরের সময়ে এক দফা তুলে ধরার বিষয়টি সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বলে মনে করছেন তাঁরা।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরের সময়ে বিএনপির সমাবেশের বিষয়টি কাকতালীয়। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী ও রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার। তাই নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনা চাইলেও সরকার এড়াতে পারবে না।
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য নতুন আন্দোলনের যে যাত্রা, সেটি ১২ জুলাই ঘোষণা করা হবে।
বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলোর সূত্র জানায়, আগামী শুক্রবার মানববন্ধন কিংবা বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে এক দফার কর্মসূচি শুরু হতে পারে। এরপর পদযাত্রা, অবস্থান ধর্মঘট এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেওয়া হবে। গতকাল বিকেলে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব কর্মসূচির ব্যাপারে এমন ধারণা দেন। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে দলের স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে।
বৈঠকে জানানো হয়, এখন থেকে যুগপত্ভাবে সব কর্মসূচি হবে। ১২ জুলাই এক দফার ঘোষণার সঙ্গে রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্যে যৌথ ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। এ নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়াও এলডিপি, লেবার পার্টি, রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি।
বিএনপিকে ঢাকার নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনের সড়ক ব্যবহারের মৌখিক আশ্বাস দেওয়ার কথা জানিয়েছেন দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। গতকাল সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।