ব্যাংকের চলতি হিসাব ও সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাব থেকে যে কোনো সময় টাকা তোলা যায়। এছাড়া সংক্ষিপ্ত সময়ে নোটিশ দিয়ে টাকা তোলার হিসাব ও বিশেষ নোটিশ দিয়ে টাকা তোলার হিসাব থেকেও স্বল্প সময়ের মধ্যে টাকা তোলার সুযোগ রয়েছে। এসব হিসাবেও টাকার স্থিতি কমে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ব্যাংকের চলতি ও নগদ ঋণ হিসাবে জুনে জমা ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা, যা মার্চের তুলনায় বেড়েছিল ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা। জুনের তুলনায় কমেছে ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ বা ৮ হাজার কোটি টাকা। মোট আমানতের মধ্যে চলতি হিসাবে আমানতের হার মাত্র ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ।
সূত্র জানায়, চলতি ও নগদ ঋণ হিসাবে সাধারণত ব্যবসায়ীরা নগদ টাকা জমা রাখেন। কোনো খাতে টাকা খরচের আগে তারা এ হিসাবে জমা করেন। টাকার পরিমাণগত লক্ষ্য অর্জন হলে বা নির্ধারিত সময় হলে ওই টাকা খরচ করেন। যে কারণে এই হিসাবে টাকা বেশিদিন স্থির থাকে না। এছাড়া ব্যাংক থেকে ব্যবসায়ী বা সাধারণ গ্রাহকরা যেসব ঋণ নেন, সেসব অর্থও এ হিসাবেই ব্যাংক স্থানান্তর করে। পরে গ্রাহক এ হিসাব থেকে চাহিদা অনুযায়ী টাকা নিয়ে খরচ করেন।
করোনার পর থেকে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা চলছে। ওই থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুদ্ধার হওয়ার আগেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন আক্রমণ করে। এতে বৈশ্বিক মন্দা দেখা দেয়। এর নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের সব খাতেই পড়ে। ফলে চার বছর ধরেই ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা চলছে। দীর্ঘ এ মন্দায় ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর প্রভাবে বিনিয়োগ কমে গেছে। নতুন কর্মসংস্থানের গতিও নিম্নমুখী।
এছাড়া চড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই বছর ধরে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। এর প্রভাবেও ঋণ প্রবাহ কমেছে। এসব কারণে চলতি হিসাবে আমানতের জোগান যেমন কমেছে, তেমনই স্থিতিও কমেছে।
প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, তলবি আমানত হিসাবে জুন পর্যন্ত জমার স্থিতি ছিল ২ লাখ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জমার স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা, যা মোট আমানতের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এ খাতে আমানত কমেছিল ১১ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে কমেছে ১৩ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। ওই সময়ে এ হিসাবে আমানতের স্থিতি কমেছে ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, মোট আমানতের মধ্যে যে কোনো সময়ে উত্তোলনযোগ্য হিসাবে টাকা জমার স্থিতি ৬ থেকে ১১ শতাংশ। ফলে এ হিসাবে টাকার স্থিতি কমলেও ব্যাংকিং খাতে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। ব্যাংক আমানতের ধরনই এমন-কখনো মেয়াদি হিসাবে আমানত কমে, চলতি হিসাবে বাড়ে। আবার চলতি হিসাবে কমে, মেয়াদি হিসাবে বাড়ে। গত বছর মেয়াদি হিসাবে আমানত কমেছে, চলতি হিসাবে বেড়েছে। এখন মেয়াদি হিসাবে বাড়ছে, চলতি হিসাবে কমছে।
প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বিশেষ নোটিশে উত্তোলনযোগ্য হিসাবে টাকা জমার স্থিতি কমেছে। এ হিসাবে গত জুনে স্থিতি ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। ওই সময়ে জমার স্থিতি কমেছে ৩ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ার গতিও কমেছে। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে এ খাতে ঋণ বেড়েছিল ২৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে বেড়েছে মাত্র ১৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ওই সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি কমেছে ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
ব্যাংকিং খাতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। আমানত বেড়েছে ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ।