চন্দ্রমাসের ১১তম মাস জিলকদ। আরবি ভাষায় জিলকদ শব্দের অর্থ হলো বসে থাকা। জাহেলি যুগ থেকে মানুষ এই মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ করত না। তাই এটিকে বিশ্রামের মাস বলা হয়।
এই মাসে রাসুল (সা.) জীবনের তিনটি ওমরাহ করেছেন।
সম্মানিত মাস
কোরআনে বর্ণিত আশহুরুল হুরুম বা সম্মানিত মাসগুলোর একটি জিলকদ। এসব মাসে যুদ্ধ বা সংঘাতে না জড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে মাসের গণনায় মাস ১২টি, তা আকাশমণ্ডলী ও ভূপৃষ্ঠ সৃষ্টির দিন থেকে; এর মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ।
এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৩৬)
আয়াতে উল্লিখিত সম্মানিত মাসগুলো হলো, রজব, জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। এই ব্যাপারে হাদিসে বিশদ বিবরণ রয়েছে। আবু বকরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যেদিন থেকে আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও ভূপৃষ্ঠ সৃষ্টি করেছেন সেই দিন থেকে সময় নিজ চক্রে আবর্তিত হয়।
এক বছরে বারো মাস হয়ে থাকে। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিন মাস ধারাক্রম অনুসারে আসে। তা হলো- যেমন জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব মুদার যা জমাদিউল আখির ও শাবান মাসের মধ্যখানে হয়ে থাকে। এটি কোন মাস?’ আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন।
অতঃপর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা মনে করলাম, হয়তো তিনি এ মাসের অন্য নাম দেবেন। ...’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪০০৬)
হজের প্রস্তুতির সময়
জিলকদ মাস হজের প্রস্তুতির মাস হিসেবে পরিচিত। মাসটি হজের মাসগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হজের মাসগুলো সুনির্দিষ্ট।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৭)
ইমাম কুরতুবি (রহ.) আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, হজের মাস হলো শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজের প্রথম ১০ দিন। আর অনেকে পুরো জিলহজ মাসকে হজের মাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন।
শান্তিপূর্ণ অবস্থানের মাস
ইসলাম-পূর্ব যুগ থেকেই জিলকদ মাস শান্তির মাস হিসেবে পরিচিত ছিল। জাহেলি যুগের মানুষ এই মাসকে খুবই সম্মান করত। তাই এই মাসে তারা সব ধরনের যুদ্ধ-বিগ্রহ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত থেকে বিরত থাকত। পরবর্তী সময়ে রাসুল (সা.) তাদের রীতিকে গ্রহণ করেন এবং শান্তিপূর্ণ সময়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন। বিশেষত হাজিদের হজযাত্রা নিরাপদ রাখতে এই বিধানের গুরুত্ব অপরিসীম। হাদিসে এসেছে, জাবির (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) সম্মানিত মাসে যুদ্ধ করতেন না। তবে কাফিররা আক্রমণ করলে ভিন্ন কথা। অতএব এই মাস উপস্থিত হলে তিনি অবস্থান করতেন যতক্ষণ না তা অতিবাহিত হয়।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৪৫৮৩)
পাপাচারের কঠোর শাস্তির ঘোষণা
সম্মানিত মাসগুলোতে নিষিদ্ধ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ রয়েছে। কেননা মর্যাদাপূর্ণ সময়ে ভালো কাজের প্রতিদান যেমন অত্যাধিক হয়ে থাকে, তেমনি এই সময়ে মন্দ কাজের শাস্তিও খুবই ভয়াবহ হয়। পবিত্র কোরআনে এসব মাসে সব ধরনের পাপাচারে লিপ্ত না হওয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান, সুতরাং এসব সময়ে তোমরা নিজেদের ওপর অত্যাচার কোরো না।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৩৬)
ওমরাহ পালনের স্বপ্ন পূরণ
মদিনায় হিজরতের পর মুসলিমরা পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফের সুযোগ পাননি। তাঁদের অন্তরে জেগে ওঠে কাবার ভালোবাসা। অতঃপর রাসুল (সা.) স্বপ্নে দেখেন যে মুসলিমরা মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেছেন। তখন জিলকদ মাসের প্রথম দিন রাসুল (সা.) ওমরাহ পালনের উদ্দেশে প্রায় ১৫ শ সাহাবিকে নিয়ে পবিত্র মক্কার উদ্দেশে মদিনা থেকে বের হন। হুদায়বিয়া নামক স্থানে এসে দীর্ঘ আলাপের পর মুসলিমদের সঙ্গে মক্কার কুরাইশদের ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে সেই বছর মুসলিমরা ওমরাহ পালন না করে ফিরে যান এবং পরের বছর ওমরাহ করতে আসেন। এই প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রাসুলের স্বপ্নকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেছেন, আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা অবশ্যই নিরাপদে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে, তোমাদের কেউ মাথা মুণ্ডন করবে এবং কেউ চুল কাটবে; তোমাদের কোনো ভয় থাকবে না, আল্লাহ যা জানেন তোমরা তা জানো না, তা ছাড়া আল্লাহ তোমাদের নিকটতম বিজয় দিয়েছেন।’ (সুরা ফাতাহ, আয়াত : ২৭)