প্রকাশকালঃ
০২ জুলাই ২০২৪ ০১:০৮ অপরাহ্ণ ৫৩৯ বার পঠিত
প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষাধিক কর্মী নিচ্ছে জাপান। জাপানি ভাষা শিখে পরীক্ষার মাধ্যমে চাকরির সুযোগ পাবেন বাংলাদেশিরাও। কাজের খাত, যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ, ভাষা পরীক্ষা পদ্ধতি ও বেতন-ভাতা নিয়ে বিস্তারিত
কোন কোন খাতে কাজের সুযোগ
সরকার অনুমোদিত জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান ইউনিক ইস্টার্নের হেড অব ইউনিট ও সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মমিনুল হক জানান, এশিয়ার অন্যতম উন্নত দেশ জাপানে বাংলাদেশ থেকে মূলত নির্মাণ খাতে কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার বা নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি খাতে কৃষিকর্মী, সেবা খাতে নার্স ও কেয়ারগিভার, ট্যুরিজম খাতের হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট কর্মী, আইসিটি খাতে আইটি কর্মী ও অন্যান্য খাতে সাধারণ শ্রমিকদের কাজের সুযোগ দিচ্ছে। এসব খাতে তিনটি উপায়ে কাজের ভিসা যাওয়া যায়। প্রথমত স্পেসিফাইড স্কিলস ওয়ার্কার (এসএসডাব্লিউ), দ্বিতীয়ত টেকনিক্যাল ইন্টার্ন এবং তৃতীয়ত ডিরেক্ট এমপ্লয়মেন্ট বা জাপানি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ।
কারা যেতে পারবেন: স্পেসিফাইড স্কিলস ওয়ার্কার (এসএসডাব্লিউ) হিসেবে চাকরি করতে চাইলে যোগ্যতা থাকতে হবে জাপানি ভাষায় এন৪ সনদ এবং (এসএসডাব্লিউ) স্কিল টেস্ট পাস। টেকনিক্যাল ইন্টার্ন হিসেবে যেতে চাইলে এন৪ অথবা এন৫ সনদ থাকতে হবে। টেকনিক্যাল ইন্টার্ন হিসেবে কাজে গিয়ে জাপানে ৩ থেকে ৫ বছর অবস্থান ও কাজ করা যাবে। ডিরেক্ট এমপ্লয়মেন্ট বা সরাসরি নিয়োগ পেয়ে কাজে যাওয়ার জন্য প্রার্থীদের ন্যূনতম এন৪ সনদ দরকার হবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট পদের জন্য জাপানি প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ করা যোগ্যতা ও কাজের দক্ষতাও থাকতে হবে।
সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে সাধারণত স্নাতক বা সমমান ডিগ্রি চায়। কাজের ধরনভেদে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার হেরফের হতে পারে। এ ধরনের প্রার্থীরা চুক্তির মেয়াদ পর্যন্ত থাকার ও কাজের সুযোগ পাবেন।
ভাষা শেখার ধাপ
এন৫ হলো জাপানি ভাষার প্রথম ধাপ। বাংলাদেশি কেউ জাপানি ভাষা শিখতে চাইলে এন্ট্রি লেভেলে (এন৫) ভর্তি হতে হবে। এই লেভেলে তিন মাস মেয়াদি কোসে ভর্তি ও প্রার্থীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে এসএসসি বা সমমান। এন৫ পাস করতে পারলে দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ এন৪ লেভেলে ভর্তি হওয়া যাবে। দ্বিতীয় লেভেলের কোর্সও তিন মাস মেয়াদি। এসব কোর্সের সনদ ইস্যু করবে জাপান সরকারের নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান।
প্রার্থী বাছাই যেভাবে: জাপানি ভাষা দক্ষতার সনদ (এন৪, এন৫) পাওয়ার পর আগ্রহী প্রার্থীদের চাকরি বা ভিসার জন্য সরকার নির্ধারিত এজেন্সিতে ভাষা সনদ, এসএসডাব্লিউ সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দিতে হবে। এসব কাগজপত্র জাপানি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠাবে এজেন্সি। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান প্রার্থীদের কাগজপত্র প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করে যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা রিক্রুটিং এজেন্সিকে দেবে। এরপর নির্ধারিত সময়ে সেসব প্রার্থীদের অনলাইনে বা সশরীরে ইন্টারভিউ নেওয়া হবে। জাপানের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারাই চূড়ান্তভাবে প্রার্থী নির্বাচন করেন। সব শেষে এজেন্সির মাধ্যমে কাজের অনুমতিপত্র, ভিসা, বিএমইটির প্রশিক্ষণসহ সরকারি সব দপ্তরের অনুমোদন পেয়ে জাপান যাবেন নির্বাচিত প্রার্থীরা।
খরচাপাতি
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বৈধভাবে জাপানে জনবল পাঠানোর জন্য অনুমোদন আছে ৭০টি এজেন্সির। জাপানি ভাষা শিখে নির্ধারিত এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত খরচে জাপানে যাওয়া যাবে।
বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা
স্পেসিফাইড স্কিলস ওয়ার্কার (এসএসডাব্লিউ) হিসেবে কাজে গেলে প্রতিষ্ঠানভেদে মাসিক বেতন ধরা হবে বাংলাদেশি টাকায় এক লাখ ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা। টেকনিক্যাল ইন্টার্নদের বেতন এক লাখ ৩০ হাজার থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। ডিরেক্ট এমপ্লয়মেন্ট বা সরাসরি নিয়োগ ক্ষেত্রে বেতন ও ওভারটাইম ধরা হবে সংশ্লিষ্ট পদ অনুযায়ী জাপানের শ্রম আইন অনুসারে। জাপানে যাওয়ার বিমানভাড়া নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বহন করবে। সেখানে বাসস্থান, চিকিৎসা ও খাওয়াসহ অন্যান্য ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকেই পাওয়া যায়। কাজের কর্মঘণ্টা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্য বিষয়াদি জাপান সরকারের শ্রম আইন অনুসারে নির্ধারণ করা হয়।
ভাষা শিখবেন কোথায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে তিন মাস, ছয় মাস এবং এক বছর মেয়াদের, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে এক বছর মেয়াদের, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ছয় মাস মেয়াদের, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র থেকে পাঁচ মাস মেয়াদি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট থেকে ছয় মাস মেয়াদি এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিইউপি) থেকে জাপানি ভাষায় তিন মাস মেয়াদের কোর্স করা যাবে।
যোগ্যতা এইচএসসি বা সমমান পাস। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে তিন মাস, পাঁচ মাস, ছয় মাসের বা এক বছরের প্রশিক্ষণ নিতে খরচ হবে ছয় হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। বিএমইটি নির্ধারিত বেশ কিছু সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও ইনস্টিটিউট থেকেও নামমাত্র খরচে ছয় মাস মেয়াদি কোর্স করা যায়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কোর্সের খরচ ৩০-৪০ হাজার টাকা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করার ক্ষেত্রে জাপানি শিক্ষক আছে কি না, প্রশিক্ষণ দেওয়ার নিজস্ব সক্ষমতা আছে কি না ভর্তির আগেই খোঁজ নেবেন।
বয়স ও যোগ্যতা
ইউনিক ইস্টার্নের উপব্যবস্থাপক (নিয়োগ) রাজন মিয়া জানান, ভাষা শিখে জাপানে কাজে যাওয়ার জন্য প্রার্থীর বয়সের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। শুধু ভাষা শেখার ক্ষেত্রে এসএসসি কিংবা এইচএসসি বা সমমানের পাসের সনদ থাকতে হবে। টেকনিক্যাল খাতের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা সাধারণত স্নাতক বা সমমান চাওয়া হয়। তবে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত পদ অনুযায়ী নির্ধারিত যোগ্যতা ও দক্ষতা চেয়ে থাকে।